অমিত শাহের ডাকা বৈঠকে গেলেন না মমতা। —ফাইল চিত্র।
এক দেশ, এক নির্বাচন নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়েছিলেন। এ বার অমিত শাহের নেতৃত্বে আন্তঃরাজ্য নকশাল দমন বৈঠকেও যোগ দিলেন না বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের ১০টি নকশাল অধ্যুষিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে সোমবার সকালে দিল্লিতে এই বৈঠক হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবর্তে বাংলার হয়ে সেখানে প্রতিনিধিত্ব করেন ডিজিপি বীরেন্দ্র এবং মুখ্যসচিব মলয় দে।
তিন মাস হল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন অমিত শাহ। ক্ষমতায় এসেই কাশ্মীর নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তিনি। ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ হওয়ার পর উপত্যকার বিশেষ মর্যাদা খর্ব হয়েছে। গঠিত হয়েছে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ দুই পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল।
সেই নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজার মধ্যেই ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশ— এই ১০ নকশাল প্রভাবিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং শীর্ষস্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন শাহ। নকশাল দমনে রাজ্যগুলি কী কী পদক্ষেপ করেছে এবং মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে কী কী নয়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা পর্যালোচনা করে দেখতেই এই বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তাতে যোগ দেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: ফের ধাক্কা চিদম্বরমের, জামিনের আর্জির শুনানি হবে সংশ্লিষ্ট আদালতে, জানাল সুপ্রিম কোর্ট
এর আগে, একাধিক ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বিরোধ বেধেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রকাশ্যেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের একাধিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন তিনি। কেন্দ্রের সঙ্গে দুরত্ব বজায় রাখতেই বার বার তিনি বৈঠকে যাওয়া থেকে বিরত থাকছেন বলে মত বিশেষজ্ঞ মহলের। যদিও নবান্নের তরফে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একা নন, অমিত শাহের ডাকা বৈঠকে যোগ দেননি তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। ব্যক্তিগত কাজে হায়দরাবাদ গিয়েছেন, তাই বৈঠকে যেতে পারেননি বলে জানিয়েছে তাঁর সরকার। দেশের মাও উপদ্রুত এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম হল মহারাষ্ট্রের গড়চিরৌলি। সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়ণবীসও বৈঠকে দেননি। চলতি বছরের শেষ দিকে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তা নিয়ে প্রচারের কাজে ব্যস্ত, তাই ফড়ণবীস বৈঠকে যাননি বলে জানিয়েছে তাঁর সরকার।
আরও পড়ুন: মনমোহন সিংহের এসপিজি নিরাপত্তা তুলে নিল মোদী সরকার, বরাদ্দ জেড প্লাস
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, ২০০৯-’১৩ সাল পর্যন্ত দেশে আট হাজার ৭৮২টি নকশাল হামলার ঘটনা ঘটে। তাতে নিরাপত্তাবাহিনীর কর্মী-সহ মোট তিন হাজার ৩২৬ জন প্রাণ হারান। ২০১৪-’১৮ পর্যন্ত হামলার সংখ্যা কমে চার হাজার ৯৬৯-তে এসে ঠেকে। তাতে প্রাণ হারান এক হাজার ৩২১ জন। এ বছর প্রথম পাঁচ মাসে ৩১০টি নকশাল হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাতে ৮৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ২০০৯-’১৮ পর্যন্ত নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে এক হাজার ৪০০ মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে বলেও জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর। সরকারের কড়া দমননীতির জন্যই তা সম্ভব হয়েছে বলে গত মাসে দাবি করেন স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ।