মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
তাঁদের দিক থেকে আলোচনার দরজা এখনও খোলা আছে বলে ফের মন্তব্য করলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতা জয়রান রমেশ। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ফের জানিয়ে দিলেন, বাংলায় তাঁরা একাই লড়বেন! ‘ন্যায় যাত্রা’র পরবর্তী পর্যায়ে রাহুল গান্ধী আবার রাজ্যে আসার আগে আসন-সমঝোতার প্রশ্নে জারি রইল কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের স্নায়ুযুদ্ধ। সেই সঙ্গে তরজাও।
জেলায় প্রশাসনিক সফরে গিয়ে মঙ্গলবার রায়গঞ্জে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছেন, ‘‘বাংলায় আমরাই যথেষ্ট। বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমকে হারিয়ে জিততে পারে তৃণমূল।’’ তাঁর যাত্রায় এসে রাহুল উত্তরবঙ্গের যে সব জায়গায় ইতিমধ্যে ঘুরে গিয়েছেন, মূলত সেই সব এলাকাতেই জনসংযোগে নেমেছেন মমতাও। বিহার থেকে আজ, বুধবার রাহুলের আসার কথা মালদহে। পর দিন ‘ন্যায় যাত্রা’ ঢুকবে মুর্শিদাবাদে। মুখ্যমন্ত্রী মমতারও আজ সভা করার কথা মালদহে। তার পরে তাঁর আসার কথা মুর্শিদাবাদে।
এই পরিস্থিতিতে এ দিন বিহারের পূর্ণিয়া যাওয়ার পরে এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক জয়রাম ফের বলেছেন, ‘‘আমরা দেখেছি, তৃণমূল নেত্রী বলেছেন তাঁরা বাংলায় ৪২টি আসনেই লড়বেন। আমরা এই রকম কিছু ঘোষণা করিনি। আমাদের দিক থেকে দরজা খোলা রয়েছে। দু’তরফে আলোচনা হতেই পার।’’ তাঁর মতে, ‘‘বিজেপিকে হারানো কংগ্রেসের মূল লক্ষ্য। মমতার লক্ষ্যও তা-ই। সেই কারণেই ‘ইন্ডিয়া’ জোট তৈরি হয়েছে। আমরা মনে করি, নিজেদের মধ্যে কিছু নিয়ে এবং কিছু ছেড়ে জোট এগোতে পারে।’’
জয়রাম যখন এমন কথা বলছেন, তখন দিল্লিতে সম্পূর্ণ অন্য কথাই বলেছেন তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরুর আগে বৈঠকে যোগ দিয়ে বেরিয়ে এই সংক্রান্ত প্রশ্নে সুদীপের বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেসের উপরে নির্ভর করছে ‘ইন্ডিয়া’ চলবে কি না। তবে মমতা জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় তৃণমূল ৪২টি আসনেই লড়বে এবং জিতে আসার ক্ষমতা দল রাখে। এক হাতে তালি বাজে কি বাজে না (জয়রামের আগের দিনের মম্তব্য), সে সব নিয়ে তৃণমূল নেত্রী ভাবিত নন! তিনি জনতার সঙ্গে সংযোগ রাখেন এবং সেই সূত্রে দলের শক্তির উপরে দাঁড়িয়ে কথা বলেন।’’ উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদের সংযোজন, ‘‘বিধানসভা ভোটে মমতা কংগ্রেস এবং সিপিএমকে শূন্য করে দিয়েছেন। তা হলে বিজেপিকেও শূন্য করার ক্ষমতা রাখেন!’’
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বিজেপির ট্রয়ের ঘোড়া’ বলে আক্রমণ করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে। জয়রাম অবশ্য অধীরের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘উনি কেন ট্রয়ের ঘোড়া হতে যাবেন! প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর, তাঁকে বাংলায় দল চালাতে হয়। রাজ্যে দল ও কর্মীদের স্বার্থরক্ষা করে তাঁকে কথা বলতে হয়।’’ আর ‘জোট ভাঙা’র জন্য তৃণমূলের আক্রমণের কেন্দ্রে যিনি, সেই অধীর এ দিন বহরমপুরে বলেছেন, ‘‘এই জোটের প্রক্রিয়ার মধ্যে আমি নেই! তৃণমূলকে, বিজেপিকে হারিয়ে জিতেছি। আগামী দিন কংগ্রেস আমাকে যখন লড়তে বলবে আমি এ ভাবেই লড়ব। বাকি জোটের কী কথা, না কথা, কার সঙ্গে জোট হবে, না হবে— এই ব্যাপারে অধীর চৌধুরী অবগত নয়। কারণ, এটা আমার বিষয় নয়!’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘যদি বলা হয়, আমার জন্য রাহুল গান্ধীকে বাংলায় ‘ন্যায় যাত্রা’য় বাধা দেওয়া হচ্ছে, তা হলে বলুন আমি এর থেকে সরে যাচ্ছি। রাহুলের যাত্রাটা নির্বিঘ্নে করতে দেওয়া হোক।’’
রাহুলের যাত্রা নিয়ে বিতর্কও অবশ্য অব্যাহত। কংগ্রেসের অভিযোগ, মালদহ রথবাড়ি মোড়ে রাহুলকে স্বাগত জানানোর ফ্লেক্সের উপরে রাজ্যের মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের নামাঙ্কিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফ্লেক্স লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি সৌরভ প্রসাদের উপস্থিতিতে সংগঠনের জেলা শাখার নেতা-কর্মীরা এ দিন তৃণমূলের ফ্লেক্স খুলে আবার পাশে লাগিয়ে দিয়েছেন।
মুর্শিদাবাদ থেকে রাহুলের যাত্রা বীরভূম হয়ে ঝাড়খণ্ডে যাওয়ার কথা আগামী ২ ফেব্রুয়ারি। ওই দিনই রাজ্যে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। সেই কারণ দেখিয়ে রাহুলের যাত্রার অনুমোদন দেয়নি বীরভূম জেলা পুলিশ। যার জেরে ২ তারিখ কংগ্রেসের কর্মসূচি নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে। বীরভূম জেলা কংগ্রেস সভাপতি মিল্টন রশিদের বক্তব্য, ‘‘রাহুল গান্ধীর ‘ন্যায় যাত্রা’ সকাল সাড়ে নটা থেকে দুপুর দু’টো পর্যন্ত করা হয়েছে। ওই দিনই মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। সেই কারণে আমরা প্রশাসনের কাছে শুধু মিছিলের জন্য আবেদন জানিয়েছি।’’ যদিও জেলা পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন,, প্রদেশ কংগ্রেসের আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশের আপত্তির কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য কোনও রকম সভা বা মাইক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘মিছিল হলে মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে যাবে কী করে?’’