নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু।
আবার সামনে এল নেতাজির মৃত্যু-বিতর্ক!
সুভাষচন্দ্র বসুর ‘মৃত্যুদিনে’ কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে রবিবার শ্রদ্ধা জানানো হল প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি) মারফত। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়র মনে করিয়ে দিলেন, ৭৪ বছর আগে এই দিনটিতে নেতাজি তাইহোকু বিমানবন্দর থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন। কিন্তু তার পরে নেতাজির কী হয়েছিল, সেই ‘সত্য’ জানার অধিকার সকল দেশবাসীর আছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বিজেপির নেতা হয়েও নেতাজির নাতি চন্দ্রকুমার বসুর বক্তব্য এই ক্ষেত্রে মমতার মতোই। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের কাছে তিনি নেতাজি সংক্রান্ত তথ্য উদঘাটনের দাবি করেছেন। তাঁর মতের পক্ষেই সুর শোনা গিয়েছে সঙ্ঘের নেতা জিষ্ণু বসুর গলাতেও। আবার তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ এবং নেতাজির আর এক নাতি সুগত বসু তাঁর পুরনো অবস্থান বজায় রেখে বলেছেন, ‘ঐতিহাসিক সত্য’কে সকলের স্বীকার করে নেওয়াই ভাল!
বিতর্কের সূত্রপাত, পিআইবি-র এ দিনের টুইট ঘিরে। সেখানে ‘মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজিকে মৃত্যুদিনের শ্রদ্ধার্ঘ’ জানানো হয়। যদিও কার নির্দেশে এমন শ্রদ্ধা নিবেদন, তার কোনও ব্যাখ্যা পিআইবি বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সূত্রেই রাত পর্যন্ত মেলেনি। গুজরাত বিজেপির হ্যান্ড্ল থেকে নেতাজির উপরে একটি ভিডিয়ো দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছিল, পরে অবশ্য তা তুলে নেওয়া হয়। এর আগে নরেন্দ্র মোদী জমানাতেই নেতাজির জন্মদিন পালন উপলক্ষে সংসদে এক বার তাঁর জীবনী সংক্রান্ত পুস্তিকায় ১৮ অগস্ট মৃত্যুদিন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। তখনও প্রবল বিতর্ক দেখা দেয়।
(_)
(_)
জাতীয় কংগ্রেসের টুইটার হ্যান্ড্ল থেকেও এ দিন নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়েছে। কংগ্রেসের শশী তারুর, সুস্মিতা দেব, সি পি জোশী-সহ একাধিক সর্বভারতীয় নেতাও নেতাজির মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী কিছু দিন আগেই নেতাজির জন্মদিনের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তাঁর মৃত্যুদিন উল্লেখ করে বিতর্ক ডেকে এনেছিলেন।
আজকের দিনেই ১৯৪৫ সালে নেতাজী তাইওয়ানের তাইহুকু বিমানবন্দর থেকে নিখোঁজ হন। আমরা আজও জানি না এরপর কি হয়েছে। দেশমাতৃকার এই বীর সন্তানের বিষয়ে জানার অধিকার সকল দেশবাসীর আছে।
মমতা অবশ্য কারও নাম করে কোনও সমালোচনায় যাননি। টুইটে তাঁর মন্তব্য, ‘আজকের দিনেই ১৯৪৫ সালে নেতাজি তাইহোকু বিমানবন্দর থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন। আমরা আজও জানি না, এর পরে কী হয়েছে। দেশমাতৃকার এই বীর সন্তানের বিষয়ে জানার অধিকার সকল দেশবাসীর আছে।’ তাইহোকু থেকে ওড়া কোনও বিমান ১৯৪৫ সালের ১৮ অগস্ট বা তার কাছাকাছি কোনও তারিখে দুর্ঘটনায় পড়েনি বলে তাইওয়ান সরকার যে বিবৃতি দিয়েছিল, তার সূত্র ধরেই বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর তত্ত্ব খারিজ করেন অনেকে। সরাসরি উল্লেখ না করলেও মমতার ইঙ্গিত সে দিকেই।
একই সুর নেতাজির পরিবারের চন্দ্রবাবুর। মোদী ও অমিত শাহের উদ্দেশে টুইটে তাঁর বক্তব্য, ‘এই দিনে তাইহোকু থেকে নেতাজি অন্তর্হিত হয়েছিলেন। সরকারি ভাষ্য হল, বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু এই ভাষ্যে বহু রকমের অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে। সরকারেরই দায়িত্ব, প্রমাণ পেশ করে সত্য উদঘাটন করা এবং অসত্যের প্রচার বন্ধ করা’। বিজেপি নেতার প্রশ্ন, ‘‘জাপানের কাছে নেতাজি সংক্রান্ত তিনটি ফাইল আছে, যা চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। কেন্দ্র কি সেই ফাইল হাতে পেয়েছে? যদি নতুন কোনও তথ্য তারা না পেয়ে থাকে, তা হলে বিতর্কিত একটি বিষয়তে আবার সামনে আনার কী অর্থ?’’
আরএসএসের দক্ষিণবঙ্গের প্রান্ত কার্যবাহ জিষ্ণুবাবুও বলেন, ‘‘স্বাধীন ভারতে মোদী সরকারই প্রথম নেতাজি ও আজাদ হিন্দ বাহিনীকে উপযুক্ত সম্মান দিয়েছে। কিন্তু আজকের দিনটাকে মৃত্যুদিন বলে উল্লেখ করা হল কেন, তা জানি না! মনোজ মুখোপাধ্যায় কমিশন স্পষ্টই জানিয়েছিল, ওই সময়ে ৬ মাসের মধ্যে কোনও বিমান দুর্ঘটনাই হয়নি!’’
নেতাজির মৃত্যু-রহস্য নিয়েই বহু দিন আন্দোলন করেছে ফরওয়ার্ড ব্লক। দলের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাসের দাবি, পিআইবি-কে ক্ষমা চাইতে হবে। দলের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘মনোজ মুখোপাধ্যায় কমিশনের রিপোর্ট গৃহীত না হওয়ায় যখন প্রতিবাদ হয়েছিল, তখন তৃণমূল নেত্রী কিন্তু তাতে সামিল হননি। এখন যা বলছেন, সে কথা আমরা বলে আসছি। আর কেন্দ্রীয় সরকার বা কোনও রাজনৈতিক দল যারা নেতাজির মৃত্যুদিন পালন করছে, তারা এই দিনে মৃত্যুর প্রমাণ দিক।’’