চেন্নাইয়ে এমকে স্ট্যালিনের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
লোকসভা ভোটে যা হওয়ার, হয়ে গিয়েছে। আপাতত অ-বিজেপি শাসিত তিন প্রধান রাজ্যে বিধানসভা ভোট ২০২১ সালে। কয়েকটি রাজ্যের এই অ-বিজেপি শক্তির মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ এখন করতে চাইছে এম কে স্ট্যালিনের ডিএমকে।
সারা দেশে ঝড় তুললেও দক্ষিণের দুই রাজ্য তামিলনাড়ু ও কেরলে বিশেষ কিছু পারেনি বিজেপি। তামিলনাড়ুতে ডিএমকে একাই জিতেছে ২৩টি আসন, কেরলে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ ১৯টি। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দুই রাজ্যে এই দুই শক্তিরই ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা প্রবল। তার আগে বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে কংগ্রেস, সিপিএম এবং তৃণমূলকে এক অক্ষে বেঁধে এগোতে চাইছে ডিএমকে। তাতে আপত্তি নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। চেন্নাইয়ে এম করুণানিধির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সেই বিরোধী অক্ষেরই মহড়া সেরে বৃহস্পতিবার কলকাতা ফিরে গেলেন তৃণমূল নেত্রী। স্ট্যালিন-মমতা আলোচনায় ঠিক হয়েছে, বিজেপি-বিরোধিতার পথ তাঁরা কথা বলেই ঠিক করবেন।
ডিএমকে-র সুবিধা হল, তাদের সঙ্গে কংগ্রেস এবং সিপিএম, সিপিআইয়ের জোট আছে। করুণানিধির স্মারক অনুষ্ঠানে এ বার কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে ডাকা হয়নি। কিন্তু পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী, কংগ্রেসের ভি নারায়ণস্বামী প্রস্তাব দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের অগণতান্ত্রিক ও অযুক্তরাষ্ট্রীয় আচরণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয়নকে সঙ্গে রাখা হোক। আর মমতার কথায়, ‘‘আমাদের রাজ্যগুলোয় (বাংলা, তামিলনাড়ু, কেরল) একই সঙ্গে বিধানসভা ভোট। সেই নির্বাচনে জিতে আমরা অখণ্ড ভারত এবং একজোট দেশবাসীকে জয় উৎসর্গ করতে চাই।’’
নারায়ণস্বামীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র
মমতা এবং স্ট্যালিন জানেন, কেরলে সিপিএম ও কংগ্রেস যুযুধান। আবার বাংলায় কংগ্রেস-সিপিএম নিজেরা জোট গড়বে কিন্তু মমতার হাত কোনও ভাবেই ধরবে না। স্ট্যালিন, নারায়ণস্বামীদের যুক্তি, রাজ্যভিত্তিক আলাদা সমীকরণ থাকলেও বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে এই আঞ্চলিক শক্তিগুলি সমন্বয় করেই লড়াই করতে পারে। অরবিন্দ কেজরীবাল, মায়াবতী, চন্দ্রশেখর রাও বা চন্দ্রবাবু নায়ডুদের সাম্প্রতিক ভূমিকা অবশ্য তাঁদের এই অক্ষের বাইরেই রাখছে।
মমতার বক্তব্য, ‘‘এক একটা রাজ্যের এক এক রকম বৈশিষ্ট্য। আমরা ভারতীয় সবাই। কিন্তু নিজেদের রাজ্যের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য রক্ষা করার লড়াইও আমাদের করতে হবে।’’ তিনি জানিয়েছেন, এই ব্যাপারে ডিএমকে-র সঙ্গেই তিনি আছেন। ডিএমকে-র চেয়ারম্যান বীরমণি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘বাংলায় বিজেপি-আরএসএস বিদ্যাসাগরের মূর্তিকে আক্রমণ করেছে। আমরা এখনও পেরিয়ারের গায়ে হাত দিতে দিইনি!’’
ডিএমকে মুখপত্র ‘মুরাসলি’র দফতরের বাইরে এমকে স্ট্যালিনের সঙ্গে পোস্টারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। —নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রের কাশ্মীর-সিদ্ধান্তের পদ্ধতিগত দিক নিয়ে আপত্তি তুলেছেন মমতা। ডিএমকে এবং সিপিএম কেন্দ্রের গোটা সিদ্ধান্তেরই বিরোধিতা করেছে। তাদের ওই অবস্থানকে বাহবা দিচ্ছেন দক্ষিণী বিশিষ্ট জনেরা। বিরোধী ভূমিকায় তাতে আরও উৎসাহ বেড়েছে ডিএমকে-র। স্ট্যালিনের কথায়, ‘‘আমাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলে লাভ নেই! যা ঠিক, সচেতন ভাবেই সেটা বলছি এবং করছি।’’