Mamata Banerjee and Mallikarjun Kharge

‘ইন্ডিয়া’কে রক্ষা করতে মমতাকে ফোন খড়্গের! তৃণমূলের ‘একলা চলো’ বার্তার ২৪ ঘণ্টা পরেই

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা হচ্ছে না। তৃণমূল তার জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীকে দায়ী করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:৫৩
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মল্লিকার্জুন খড়্গে। —ফাইল চিত্র।

তৃণমূলের ‘একলা চলো’-র সিদ্ধান্ত ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পরে ‘ইন্ডিয়া’কে রক্ষা করতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললেন।

Advertisement

বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার তৃণমূল তার জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীকে দায়ী করেছে। একই সঙ্গে তৃণমূল ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছে, জোট নিয়ে এই জটিলতা এবং তৃণমূল সম্পর্কে অধীরের কটু মন্তব্যের ধাক্কা আসন্ন বাজেট অধিবেশনে সংসদে বিরোধীদের মধ্যে কক্ষ সমন্বয়েও লাগতে পারে।

তার আগে আজ কোচবিহারে রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র পথে তৃণমূল বিক্ষোভে শামিল হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ‘যাত্রা’ চলাকালীন মল্লিকার্জুন খড়্গের শিলিগুড়িতে সভা, রাহুল গান্ধীর বহরমপুরে সভার অনুমতির আর্জি খারিজ করে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে ‘মধ্যপন্থা’-র খোঁজে আজ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে নিজে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। সূত্রের খবর, খড়্গে দুই শিবিরের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি মেটানোর চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে রাহুল গান্ধীর যাত্রায় মমতা বা তৃণমূল নেতৃত্ব যাতে যোগ দেন, তার জন্যও ফের অনুরোধ জানিয়েছেন। তৃণমূল সূত্রেরও খবর, জোটের বিষয়ে কংগ্রেসের পক্ষে শীর্ষ স্তরের এক নেতা আজ সন্ধ্যায় তৃণমূলের নেতৃত্বের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছেন। রাহুল নিজেও আজ পশ্চিমবঙ্গে দাঁড়িয়ে ‘ইন্ডিয়া’র পক্ষে সওয়াল করেছেন। কংগ্রেস নেতাদের আশা, মমতা ন্যায় যাত্রায় কিছু ক্ষণের জন্য হলেও যোগ দেবেন।

কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘কংগ্রেস সভাপতি খড়্গে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা ভবিষ্যতে একসঙ্গে চলার রাস্তা খুঁজে বের করব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি পশ্চিমবঙ্গে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় কয়েক মিনিটের জন্যও যোগ দেন, তা হলে খড়্গে, সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী খুবই আনন্দিত হবেন।’’ কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব এখনও আশা করছেন, তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে জটিলতা তৈরি হলেও তা মিটিয়ে নেওয়া যাবে।

পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা হচ্ছে না বলে মমতা জানিয়ে দেওয়ার পরে ‘ইন্ডিয়া’র ভবিষ্যত নিয়ে কার্যত প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। আজ তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এর জন্য অধীর চৌধুরীকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের কবর খোঁড়ার জন্য অধীর দায়ী। জোট না হওয়ার পিছনে যদি তিনটি কারণের উল্লেখ করতে হয়, তা হলে ওই তিনটি কারণই হলেন অধীর চৌধুরী।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা কার্যত নেই। তাঁর কথায়, জোটের প্রশ্নে আমরা ব্যাকরণ মেনেই এগোচ্ছিলাম। কিন্তু এখন এখন দু’দল আর একই পৃষ্ঠায় নেই। তৃণমূল নিজেদের পৃষ্ঠা পালটে ফেলেছে।’’

জোট জটিলতা সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশনে কক্ষ সমন্বয় ভেস্তে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কারণ, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতার মন্তব্যে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হয়েছে। আগেও অধীরের মন্তব্য সম্পর্কে কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে তৃণমূলের সংসদীয় দলনেতারা অভিযোগ জানিয়েছিলেন। ডেরেকের কথায়, ‘‘বিজেপির ভাষায় মমতাকে আক্রমণ শানিয়েছেন অধীর। কেন্দ্রীয় বঞ্চনা প্রসঙ্গে তৃণমূল ধারাবাহিক ভাবে সরব হলেও, অধীর এক বারের জন্য তা নিয়ে মুখ খোলেননি। বিজেপির কোনও নেতার বিরুদ্ধে অধীর মুখ খোলেন না। তাঁর মুখ্য নিশানাই হলেন মমতা।’’

তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘অধীর চৌধুরী লাগাতার তৃণমূল, দলনেত্রী, অভিষেক ও নেতামন্ত্রীদের বিরুদ্ধে বিষাক্ত মন্তব্য করেছেন। এটা জোট ধর্ম পালন নয়। দিল্লিও এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে তাঁকে থামায়নি। কংগ্রেস হাইকমান্ড এই ‘ড্যামেজ’ হতে দিলেন কেন? অধীরবাবুর মতো শূন্য পাওয়া নেতারা কী ভাবে বিজেপির দালালি করছেন, তা কি তাঁরা জানতেন না?’’ ডেরেকের মতে, সাম্প্রতিক কালে যে ভাবে অধীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধারাবাহিক আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছেন, তা জোটের আবহাওয়াকেবিষিয়ে দিয়েছে।

ডেরেকের মন্তব্য শুনে অধীর বলেছেন, উনি ‘ফরেনার’। তাই সব কিছু বেশি জানেন। অধীরের এই আগ্রাসী মনোভাব সত্ত্বেও আজ কংগ্রেসের জাতীয় নেতৃত্ব মমতাকে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন। জয়রাম বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন ছাড়া দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন আইনই পাশ হত না। একটা মধ্যপন্থা বার করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সবার উপরে রয়েছে। বিজেপিকে হারাতে তাদের ভূমিকা অনিবার্য।’’

জয়রাম আরও বলেন, ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় যোগদানের জন্য কংগ্রেস সভাপতি মমতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। খড়্গে, সনিয়া, রাহুল সবাই চান, মমতা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজের ব্যস্ততার মধ্যে পাঁচ, দশ, পনেরো মিনিটের জন্য ন্যায়যাত্রায় যোগ দিলে তার মাহাত্ম্যই বেড়ে যাবে। প্রসঙ্গত, আগামী সপ্তাহে মমতার উত্তরবঙ্গ সফর রয়েছে। এআইসিসি-র সচিব রণজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কংগ্রেস আশা করছে, তৃণমূলনেত্রী ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করবেন।’’

আজ তাঁর যাত্রা পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশের পরে রাহুলও ‘ইন্ডিয়া’ জোটের পক্ষেই সওয়াল করেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ রাহুলের ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ অসম সীমানা পেরিয়ে কোচবিহারে পৌঁছয়। সেখানে তিনি বলেন, “যাত্রার সঙ্গে আমি ন্যায় শব্দ জুড়েছি। কারণ, দেশ জুড়ে অন্যায় হচ্ছে। এ জন্য ‘ইন্ডিয়া’ জোট এক সঙ্গে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছে।”

তবে তৃণমূল রাহুলের পদযাত্রায় যে খুব খুশি নয়, তা বুঝিয়ে দিয়েছে। রাহুলের যাত্রাপথে তৃণমূলের সমর্থকেরা বিক্ষোভে শামিল হন। হাতে তৃণমূলের পতাকা না থাকলেও যাঁরা বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন, তাঁদের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘বাংলার জন্য দিদি যথেষ্ট।’’

মমতা গত কাল জানিয়েছিলেন, তাঁকে যাত্রার বিষয়ে জানানো হয়নি। এ প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘কংগ্রেসও বুঝুক, তৃণমূলের ভূমিকা কী। গোটা দেশ দেখছে,কার স্বার্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতি করেন। মিছিল করা, আন্দোলন করা, অধিকার যাত্রা করা সবার অধিকার। কংগ্রেস জানিয়েছে কী জানায়নি, এটা কোনও অজুহাত হতে পারে না।’’

প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক ও মুখপাত্র সুমন রায় চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘সেই রাজীব গান্ধীর আমল থেকে বার বার বিশ্বাসঘাতকতা করেছেনতৃণমূল নেত্রী। তাঁকে যে বিশ্বাস করা যায় না, এই কথাটাই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গোড়া থেকে বলে এসেছেন।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘আমাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ তৃণমূল নেত্রীকে‘ইন্ডিয়া’ জোটের স্তম্ভ বলতেপারেন, তবে আমরা মনে করি, উনি ওই জোটে গিয়েছেন খবর পাচার করার জন্য!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement