তিপ্রা মথার প্রধান প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ (বাঁ দিকে) এবং অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
ছিলেন বিরোধী দলনেতা। রাতারাতি হয়ে গেলেন মন্ত্রী! স্থান ত্রিপুরা। তিপ্রা মথার বিধায়ক অনিমেষ দেববর্মণ। গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে জল্পনা ছিল। সেই মতোই বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে ত্রিপুরার বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকারের শরিক হল সে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল তিপ্রা মথা। অনিমেষের সঙ্গেই মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন দলের আর এক বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মণ। রাজভবনে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা, তিপ্রা মথার প্রধান প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ।
২০২৩ সালের নির্বাচনে ৬০ আসনের ত্রিপুরা বিধানসভায় ৩২টি আসনে জয়ী হয় বিজেপি। জোটসঙ্গী আইপিএফটি পায় একটি আসন। অন্য দিকে বিরোধী সিপিএম এবং কংগ্রেস পায় যথাক্রমে ১১ এবং ৩টি আসন। প্রথম বার ভোটে লড়তে নেমেই ১৩টি আসনে জয়ী হয়ে বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতি পায় তিপ্রা মথা। পরে এক সিপিএম বিধায়কের মৃত্যুতে উপনির্বাচন হলে সেই আসনেও জয়ী হয় বিজেপি। বিজেপির আসনসংখ্যা বেড়ে হয় ৩৩। সিপিএম কমে হয় ১০।
মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিচ্ছেন সদ্য প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মণ (বাঁ দিকে) এবং তিপ্রা মথার আর এক বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মণ। ছবি: সংগৃহীত।
কৌতূহল হল, কেন লোকসভা ভোটের আগে শাসকশিবিরে যোগ দিল প্রদ্যোতের দল? এই নিয়ে দু’রকম ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা কেন্দ্রটি মথাকে ছেড়ে দিতে পারে বিজেপি। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী ক্ষেত্রে জনজাতি ভোট বিজেপির অনুকূলে থাকতে পারে। তবে তার চেয়েও বেশি অনুমান, রাজ্য মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার বিনিময়ে পূর্ব ত্রিপুরা আসনে বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন জানাতে পারে মথা। প্রদ্যোতের দলের সমর্থন মিললে জনজাতিদের সিংহভাগ ভোটই তাদের ঝুলিতে পড়বে বলে আশা করছে বিজেপি শিবির। পদ্ম প্রতীকে রাজবাড়ির কারও প্রার্থী হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ত্রিপুরায় দু’টি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে। ইতিমধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরা আসনে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের নাম ঘোষণা করে দিয়েছে বিজেপি। তবে পূর্ব ত্রিপুরা আসনে এখনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। মথা ত্রিপুরার বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারে যোগ দেওয়ায় যে প্রশ্নটি অবধারিত ভাবেই উঠছে, তা হল, এ বার রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে কারা? সিপিএম সূত্রে খবর, তারা ইতিমধ্যেই বিধানসভার স্পিকারের কাছে চিঠি লিখে তাদের প্রধান বিরোধী দল হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার আর্জি জানাতে প্রস্তুতি শুরু করেছে।
ত্রিপুরার জনজাতি অধ্যুষিত অংশকে আলাদা তিপ্রাল্যান্ড বলে ঘোষণা করার দাবি নিয়ে ২০২১ সালে আত্মপ্রকাশ করে তিপ্রা মথা। দলের প্রধান হন ত্রিপুরা রাজপরিবারের সদস্য প্রদ্যোত। যাঁকে ত্রিপুরার রাজনীতি বুবাগ্রা (মহারাজ) বলে চেনে। বিধানসভা ভোটের আগে মথা জনজাতিদের সমস্যার সাংবিধানিক সমাধান করার দাবি জানায়। দাবিপূরণ না হলে কোনও দলের সঙ্গেই হাত মেলাবেন বলে জানিয়ে দেন মথা প্রধান। এই আবহেই সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, মুখ্যমন্ত্রী মানিক এবং প্রদ্যোতের উপস্থিতিতে দিল্লিতে একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কেন্দ্র, ত্রিপুরা ও তিপ্রা মথার মধ্যে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিতে তিপ্রাল্যান্ডের কথা বলা না হলেও ত্রিপুরার জনজাতিদের সমস্যার সাংবিধানিক সমাধানের দাবিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরা রাজনীতিকদের অনেকেই তখন জানিয়েছিলেন যে, এই চুক্তির হাত ধরে লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি এবং প্রদ্যোতের মধ্যে সমঝোতার রাস্তা প্রশস্ত হচ্ছে। বাস্তবে হলও তাই।