মহুয়া মৈত্র ও কবি রাহাত ইন্দৌরি (ডান দিকে)।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাজনীতির অলিন্দ— তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের প্রথম বক্তৃতা নিয়ে আলোচনা সর্বত্র। দীর্ঘ বক্তৃতার শেষে কেন্দ্রীয় সরকারকে ফ্যাসিবাদী হিসেবে তুলে ধরে নবাগত সাংসদ উদ্ধৃত করেন উর্দু কবি রাহাত ইন্দৌরি (কুরেশি)-র কয়েকটি লাইন। এর পর কলকাতা ও অন্যান্য জায়গা থেকে পরিচিত, বন্ধুদের ফোন পেয়েছেন কবি।
মহুয়ার বক্তৃতার দৌলতে চর্চায় ফিরে এসেছে ‘অগর খিলাফ হ্যায় হোনে দো’ কবিতার লাইন। লোকের মুখে মুখে ফিরছে, ‘সবহি কা খুন শামিল ইঁয়াহা কি মিট্টি মে / কিসি কে বাপ কা হিন্দুস্তান থোড়ি হ্যায়?’ দেশ কারও পিতৃদেবের নয়! ঠিক কী ভেবে লিখেছিলেন কবি? লিখেছিলেন, ‘মসনদ’ কারও পাকা বাড়ি নয়। শাসক দল ‘ভাড়াটিয়া’ মাত্র! ইনদওর থেকে রাহাত ফোনে বললেন, ‘‘এ তো বহু পুরনো লেখা। পনেরো বছর তো হবেই। তবে কী জানেন, অনেক ক্ষেত্রেই অন্য সময়ে লেখা কবিতা নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। কবিতা কখনও বুড়ো হয় না! মির্জা গালিব, তুলসীদাস, কালিদাসের লেখায় তো এখনকার সমাজ দর্শনের প্রতিফলন দেখা যায়।’’
বক্তৃতায় ব্যবহার করা রাহাতের লাইন নিয়ে মহুয়া বলছেন, ‘‘এখন দেশে যা রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি, তাতে আমার মনে হয়েছিল ওঁর এই লেখা এই সময়কে সঠিক ভাবে তুলে ধরতে পারবে। আমার ভাবনার সঙ্গে ঠিকঠাক মিলে গিয়েছিল এই কবিতা। তাই নিজের বক্তৃতায় কাজে লাগিয়েছি।’’
কবি নিজে কী মনে করছেন চারপাশের পরিস্থিতি নিয়ে? বলিউডের প্রথম সারির (‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’, ‘মিশন কাশ্মীর’, ‘খুদ্দার’-এর গান তাঁরই লেখা) এই গীতিকার প্রথমেই বললেন, ‘‘আমি নিছকই কবি। রাজনীতির বিন্দুবিসর্গ জানি না।’’ তার পরই শব্দ বাছাই করে যোগ করলেন, ‘‘হিন্দুস্তানে বিদ্বেষ যেন না থাকে, মহব্বত যেন বজায় থাকে, এটাই চাই। অন্যের কথা শোনার মতো সহনশীলতা যেন থাকে।’’
ইনদওর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময়ের উর্দুর শিক্ষকের লেখা কবিতার লাইন নিয়ে হইচই এই প্রথম নয়। বছর চারেক আগে লিখেছিলেন ‘সরহদো পর বহুত তনাব হ্যায় কেয়া / কুছ পতা করো চুনাও হ্যায় কেয়া…(সীমান্তে এত উত্তেজনা, খোঁজ নিয়ে দেখো, ভোট আসছে কি না!)। পুলওয়ামা কাণ্ডের পর তাঁর এই দু’টি লাইন টুইট করে কয়েকটি সংবাদ সংস্থা ও সাইট। সোশ্যাল মিডিয়াতেও সে সময় ছড়িয়ে যায় লাইনগুলি। ‘‘অথচ যখন লিখেছিলাম, পুলওয়ামার বিন্দুবিসর্গও ঘটেনি,’’ বলছেন ৬৯ বছরের রাহাত।
কবিরা তো অনেক কিছুই আগে দেখতে পান!