বেশ কয়েক বছর ধরে মহারাষ্ট্রে মার খেয়েছে কৃষিজ উৎপাদন। চাষিরা ক্রমশ জড়িয়ে যাচ্ছিলেন ঋণের জালে। ঋণ মকুবের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে স্বস্তি আনবে। —ফাইল চিত্র।
টানা কৃষক বিক্ষোভের মুখে বড়সড় ঘোষণা মহারাষ্ট্র সরকারের। মকুব করে দেওয়া হচ্ছে কৃষিঋণ, জানিয়ে দিল দেবেন্দ্র ফডণবীসের সরকার। ঋণ মকুবের আশ্বাস পেয়ে আন্দোলনও প্রত্যাহার করলেন কৃষকরা। কৃষকদের দাবিদাওয়া সংক্রান্ত বিষয় বিবেচনার জন্য একটি বিশেষ মন্ত্রিগোষ্ঠী গড়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীস। রবিবার সকালে কৃষক আন্দোলনের নেতারা সেই মন্ত্রিগোষ্ঠীর সঙ্গে দেখা করেন। তার পরেই কৃষিঋণ মকুবের কথা ঘোষণা করেছে সরকার।
টানা ১১ দিন ধরে মহারাষ্ট্রে কৃষক বিক্ষোভ চলছিল। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল— কৃষকদের ঋণ সম্পূর্ণ মকুব করতে হবে, কৃষকরা যাতে তাঁদের ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পান, তা সুনিশ্চিত করতে হবে, নিখরচায় বিদ্যুৎ দিতে হবে, সেচের জন্য অনুদান দিতে হবে এবং ৬০ বছরের বেশি বয়স যে কৃষকদের, তাঁদের পেনশন দিতে হবে। গত সপ্তাহে গোটা মহারাষ্ট্রে প্রায় ৫ লক্ষ কৃষক ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি হিংসাত্মক হয়ে উঠেছিল। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছিলেন, ১২ জুন থেকে আরও তীব্র হবে বিক্ষোভ। রাজ্য সরকার ১১ জুন জানাল, কৃষকদের ঋণ মকুব করা হচ্ছে। সিদ্ধান্তের সুষ্ঠু রূপায়ণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীস প্যানেলও গঠন করেছেন।
আরও পড়ুন: অনশনে শিবরাজ, অহিংস আন্দোলনে চাষিরা
মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ অঞ্চল বেশ কয়েক বছর ধরেই খরাক্লিষ্ট। বছরের পর বছর চাষাবাদ মার খেয়েছে মহারাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। বহু কৃষক ঋণের জালে জর্জরিত ছিলেন। কৃষকদের আত্মহত্যার একের পর এক ঘটনা সামনে আসছিল। দেবেন্দ্র ফডণবীসের নেতৃত্বাধীন বিজেপি-শিবসেনা সরকারের উপর কৃষি ঋণ মকুবের চাপ তাই শুরু থেকেই ছিল। রাজনৈতিক শিবির বলছে, প্রতিবেশী রাজ্য মধ্যপ্রদেশের পরিস্থিতি ফডণবীসকে আরও চাপে ফেলে দিয়েছিল। মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে কৃষক বিক্ষোভের উপর পুলিশের গুলি কয়েক দিন আগেই ৫ জনের প্রাণ নিয়েছে। তার পর থেকে মধ্যপ্রদেশ তো বটেই, মহারাষ্ট্রেও চাপে ছিল বিজেপি। পরিস্থিতি আর নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দিলেন না ফডণবীস। ঋণ মকুবের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দিলেন।
গত ১১ দিন ধরে কৃষকদের বিক্ষোভ চলছিল মহারাষ্ট্রে। ফসল রাস্তায় ফেলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন চাষিরা। —ফাইল চিত্র।
দেবেন্দ্র ফডণবীসের এই সিদ্ধান্ত চাপে ফেলে দেবে বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকারকে। বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে আগেই কৃষিঋণ মকুবের কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এ বার মহারাষ্ট্রেও একই পথে হাঁটলেন দেবেন্দ্র ফডণবীস। ঋণ মকুবের দাবিতে আর যে সব রাজ্যে কৃষক বিক্ষোভ চলছে, সেই হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ুর সরকার তাই এ বার আরও চাপে পড়বে। বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।