বালাসাহেব ঠাকরের ‘রাজনৈতিক উত্তরাধিকার’ পেলেন না উদ্ধব। ফাইল চিত্র।
উদ্ধব ঠাকরে এবং একনাথ শিন্ডের দ্বন্দ্বের জেরে আপাতত শিবসেনার নির্বাচনী প্রতীক ‘তির-ধনুকের’ ব্যবহার বন্ধ (ফ্রিজ) করল নির্বাচন কমিশন। শনিবার অন্তর্বর্তী নির্দেশে কমিশন জানিয়েছে, মহারাষ্ট্রে আসন্ন বিধানসভা উপনির্বাচনে যুযুধান কোনও গোষ্ঠীই ‘তির-ধনুক’ প্রতীক এবং ‘শিবসেনা’ নাম ব্যবহার করতে পারবে না। তাদের বিকল্প প্রতীক এবং নাম বেছে নিতে হবে।
শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরের বেছে নেওয়া ‘নির্বাচনী প্রতীক’ হাতছাড়া হওয়া তাঁর ছেলে তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধবের কাছে বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে, কমিশনের এই সিদ্ধান্তের জেরে মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডের গোষ্ঠীর সামনে নিজেদের ‘আসল শিবসেনা’ বলে প্রচারের পথ খোলা রইল।
সুপ্রিম কোর্টের রায়কে হাতিয়ার করে শুক্রবারই ‘আসল শিবসেনা’ বেছে নিতে সক্রিয় হয়েছিল নির্বাচন কমিশন। শিন্ডেসেনার আবেদনের প্রেক্ষিতে উদ্ধব গোষ্ঠীকে নোটিস পাঠানো হয় কমিশনের তরফে। শিবসেনার প্রতীক ‘তির-ধনুক’ কেন তাঁর হাতে থাকবে, সে বিষয়ে শনিবার দুপুর ২টোর মধ্যে উপযুক্ত যুক্তি ও নথি পেশ করতে বলা হয় দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরের ছেলেকে।
প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্রে আসন্ন আন্ধেরী পূর্ব বিধানসভা উপনির্বাচনে শিবসেনার নির্বাচনী প্রতীক বণ্টনের অধিকার চেয়ে কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছিল শিন্ডে শিবির। তারই জেরে ওই নোটিস। কিন্তু কেন উদ্ধব শিবিরকে তথ্যপ্রমাণ পেশের জন্য মাত্র ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
গত জুনে উদ্ধবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন শিন্ডে-সহ সংখ্যাগরিষ্ঠ শিবসেনা বিধায়ক। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়েন উদ্ধব। এর পর শিন্ডে বিদ্রোহী বিধায়কদের নিয়ে বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে সরকার গঠন করেন। শিন্ডে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া ইস্তক শিবসেনার রাশ কার হাতে থাকবে, এ নিয়ে দুই শিবিরের মধ্যে চলছে লড়াই।
শিন্ডের বিদ্রোহের জেরে মুখ্যমন্ত্রিত্ব হারানোর সাড়ে তিন মাস পরে শীর্ষ আদালতের অনুমোদনে কমিশনের এই ‘তৎপরতা’র জেরে উদ্ধব এ বার দলের ‘নিয়ন্ত্রণও’ হারাতে পারেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছে।
কে প্রকৃত শিবসেনা, তা বাছাইয়ের দায়িত্ব যাতে নির্বাচন কমিশনের হাতে না যায়, সে জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল উদ্ধব গোষ্ঠী। কিন্তু গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। ‘প্রকৃত শিবসেনা’ বাছার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অনুমতি দেওয়া হয় কমিশনকে। প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং ভাঙনের জেরে অতীতে তামিলনাড়ুতে এডিএমকে এবং বিহারে লোক জনশক্তি পার্টিরও নির্বাচনী প্রতীক ‘ফ্রিজ’ করেছে নির্বাচন কমিশন।