ভোটের মুখে মাদ্রাসা শিক্ষকদের উপরে পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনায় বিহারের প্রাক্-নির্বাচনী রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠল। এক দিকে, সরকার-বিরোধী রাজনীতিকরা ঘোলা জলে মাছ ধরতে দ্রুত নেমে পড়েছেন। অন্য দিকে, সরকারও বসে নেই। ঘটনার জেরে অবিলম্বে সরিয়ে পটনার জেলাশাসক এবং সিনিয়র পুলিশ সুপারকে সরিয়ে দিয়ে আন্দোলনকারীদের আস্থা অর্জনে নেমে পড়েছেন শাসক দলের নেতারা।
গত কাল পটনা শহরের গর্দানিবাগ এলাকায় বেতন বৃদ্ধি ও স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষকরা। আচমকা তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দিকে অভিযান শুরু করেন। অভিযানকারীদের হঠাতে লাঠি নিয়ে তেড়ে যায় পুলিশ। এর জেরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশের লাঠিতে ৩৫ জন জখম হন। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনকে পটনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিন জনের অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়া ১১ জন পুলিশ কর্মীও জখম হয়েছেন।
অরবিন্দ কেজরীবালকে বিদায় জানানোর পর গভীর রাতে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। রাতেই পটনার জেলাশাসক প্রতিমা সতীশকুমার বর্মা এবং পটনার এসএসপি বিকাশ বৈভবকে বদলি করে দেওয়া হয়।
গয়ার জেলাশাসক সঞ্জয় অগ্রবালকে পটনার নতুন জেলাশাসক করা হয়েছে। গয়া থেকে ফের পটনার এসএসপি পদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে মনু মহারাজকে। গত বছর বিজয়া দশমীর দিন পদপিষ্ট হয়ে কয়েক জনের মৃত্যুর জেরে মনু মহারাজকে সরিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝি। বিকাশ বৈভবকে পাঠানো হল পূর্ণিয়ার পুলিশ সুপারের দায়িত্ব দিয়ে। সরকারি সূত্রের খবর, গত মাসখানেক ধরেই বিকাশ বৈভবের সঙ্গে শাসক দলের নেতাদের সমস্যা হচ্ছিল। পটনা শহরে আইন-শৃঙ্খলা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থার অনেকটাই উন্নতি করেছিলেন তিনি। তাঁকে এ ভাবে সরিয়ে দেওয়ায় কিছুটা হলেও প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
সরকারি সূত্রের খবর, ২০১০ সালে রাজ্য সরকার ২৪৬০ জন মাদ্রাসা শিক্ষককে স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাত্র ২০৫ জনকে স্থায়ী করা হয়েছে। গত ২৪ অগস্ট থেকে গর্দানিবাগ এলাকায় মাদ্রাসা শিক্ষকরা অবস্থান-বিক্ষোভ করছিলেন। আচমকা আন্দোলনস্থল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দিকে অভিযান শুরু করেন শিক্ষকেরা। পুলিশের হাত থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এরপরেই পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু
করে। আন্দোলনের নেতা তথা রাজ্য মাদ্রাসা বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মৌলানা এজাজ আহমেদ বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশে আমাদের উপরে লাঠি চালানো হয়েছে। সরকারকে ২৪ ঘন্টা সময় দিচ্ছি। আমাদের দাবি পূরণ না করলে গোটা বিহার জুড়ে আন্দোলন শুরু হবে।’’
লাঠিচার্জের পরেই নির্বাচনের রাজনীতি শুরু হয়ে যায়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝি, সাংসদ পাপ্পু যাদব, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী মহাচন্দ্র প্রসাদ সিংহ আজ মাদ্রাসা শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাঁরা বলেন, ‘‘সরকারের নির্দেশেই মাদ্রাসা শিক্ষকদের লাঠিপেটা করা হয়েছে।’’ লোকজনশক্তি পার্টির আশরফ আনসারি, লোক সমতা পার্টির জগন্নাথ গুপ্ত এবং সিপিআই (এমএল)-র কুণাল পুলিশের লাঠিচার্জের নিন্দা করেন। ইমারত-এ-শারিয়া-এর তরফে মৌলানা আনিসুর রহমান কাসমি এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম মজলিস মুসারতের সাধারণ সম্পাদক আনারুল হুদা পুলিশের লাঠিচার্জের বিরোধিতা করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে শাসক জোট খানিকটা হলেও ‘ব্যাকফুট’-এ। এ ব্যাপারে আজ শাসক জেডিইউ বা আরজেডি নেতারা মুখ খোলেননি।