মাদ্রাজ হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
নিজেদের পুরনো মন্তব্য সংশোধন করে নিল মাদ্রাজ হাই কোর্ট। একটি মামলায় সম্প্রতি উচ্চ আদালতের এক বিচারপতি তাঁর নির্দেশনামায় বলেছিলেন, “সমাজে বর্ণব্যবস্থার যে শিকড় রয়েছে, তার বয়স ১০০ বছরের একটু কম।” বিচারপতির সেই নির্দেশনামা গত ৬ মার্চ হাই কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিতও হয়েছিল। কিন্তু ৬ মার্চের পর নির্দেশনামার ওই অংশটি সংশোধন করে লেখা হয়, “বর্ণ বিভাজনকে আমরা আজ যে ভাবে দেখি, তা অনেক প্রাচীন।” আইন সংক্রান্ত খবর পরিবেশনকারী ‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’-এর একটি প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে।
লক্ষণীয় যে, সংশোধিত নির্দেশনামায় কোথাও বর্ণব্যবস্থার প্রাচীনত্ব নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও সময়ের কথা বলা হয়নি, যা আগের নির্দেশনামায় বলা হয়েছিল। তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকারের মন্ত্রী তথা সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের পুত্র উদয়নিধি স্ট্যালিনের সনাতন ধর্ম সংক্রান্ত মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতেই উদয়নিধিকে মন্ত্রীপদ থেকে সরানোর আর্জি জানিয়ে হাই কোর্টে একটি মামলা দায়ের হয়। মাদ্রাজ হাই কোর্টের বিচারপতি অনিতা সুমন্তের একক বেঞ্চ আর্জিটি খারিজ করে দেয়। বিচারপতি তাঁর নির্দেশনামায় বর্ণব্যবস্থার বয়স ১০০ বছরের কম পুরনো বলে উল্লেখ করেন। ৬ মার্চের পর নির্দেশনামার ওই অংশটিই বদলানো হয়। তা ছাড়াও আগের নির্দেশনামায় বলা হয়, তামিলনাড়ুতে ৩৭০টি নথিভুক্ত বর্ণ রয়েছে। সংশোধিত নির্দেশনামায় সংখ্যাটি ১৮৪ বলে জানানো হয়েছে।
চেন্নাইয়ে লেখকদের একটি অনুষ্ঠানে তরুণ ডিএমকে নেতা উদয়নিধি বলেন, ‘‘সনাতন ধর্মের আদর্শকে মুছে ফেলার এই অনুষ্ঠানে আমায় আমন্ত্রণ জানানোয় আমি উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই। সনাতন ধর্মের আদর্শের বিরোধিতা না বলে তাকে নিশ্চিহ্ন করার কথা বলায় অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের অভিনন্দন জানাই।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রথম কাজ হল বিরোধিতা নয়, সনাতন ধর্মের আদর্শকে মুছে ফেলা। এই সনাতন প্রথা সামাজিক ন্যায় ও সাম্যের বিরোধী।’’
ওই সভায় উদয়নিধি জানিয়েছিলেন, কিছু জিনিস রয়েছে, যার বিরোধিতা যথেষ্ট নয়, তা নিশ্চিহ্ন করা দরকার। যেমন করোনা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির বিরোধিতা নয়, তাদের নিশ্চিহ্ন করা দরকার, তেমনই সনাতন আদর্শকেও মুছে ফেলা দরকার। তাঁর ওই মন্তব্যের পরেই তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। ডিএমকের সহযোগী কংগ্রেসের কয়েক জন নেতা উদয়নিধির মন্তব্যের বিরোধিতা করেছিলেন। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়েছিলেন, স্ট্যালিন-পুত্রের মন্তব্য তিনি সমর্থন করেন না। বিতর্কের মধ্যেই উদয়নিধি ও ডিএমকের অন্য দুই নেতা শেখর বাবু এবং আন্দিমুথু রাজাকে সাংবিধানিক পদ থেকে বরখাস্তের দাবি জানিয়ে হাই কোর্টে মামলা হয়। কিন্তু গত ৬ মার্চ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপে সায় দেয়নি মাদ্রাজ হাই কোর্ট।