কমলনাথ। —ফাইল চিত্র।
শেষমেশ মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফাই দিলেন কমল নাথ। শুক্রবার ভোপালে একটি সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন তিনি। সেখানেই নিজের পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন। কমল নাথ বলেন, ‘‘কোনওকালেই লেনদেনের রাজনীতির অংশ ছিলাম না আমি। দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কেউ এ নিয়ে আমার দিকে আঙুল তুলতে পারবেন না।’’সাংবাদিক বৈঠক শেষ করেই রাজ্যপাল লালজি টন্ডনের কাজে পদত্যাগপত্র জমা দিতে যান তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এদিনই মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় আস্থাভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা আগে পর্যন্ত ২২ জন বিদ্রোহী বিধায়ককে বাগে আনতে পারেনি কংগ্রেস। সেই পরিস্থিতিতে এ দিন ভোপালে সাংবাদিক বৈঠক করেন কমল নাথ। সেখানে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। কমল নাথ বলেন, ‘‘পাঁচ বছরের জন্য মানুষ আমাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন। কিন্তু বিজেপি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। জোর করে ২২ জন কংগ্রেস বিধায়ককে আটকে রেখেছে। সত্যিটা ঠিক সামনে আসবেই। মানুষ ওদের ক্ষমা করবেন না।’’
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া কংগ্রেস ছাড়ার পরই তাঁর অনুগামী ২২ জন কংগ্রেস বিধায়কইস্তফা দেন। সেই থেকেবেঙ্গালুরুর একটি রিসর্টে রয়েছেন তাঁরা। জ্যোতিরাদিত্যর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে বিজেপিই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে এ দিন দাবি করেন কমলনাথ। তিনি বলেন, ‘‘আমার সরকারকে উৎখাত করতে মহারাজার সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেছে বিজেপি। ওরা ভাবছে এ ভাবে আমার প্রদেশের মানুষকে হারিয়ে জিতে যাবে ওরা। কিন্তু তা হবে না।’’
আরও পড়ুন: ‘দীর্ঘ অপেক্ষা পীড়া দিয়েছে, তবু স্বস্তি পেলাম’, মেয়ের ছবি আঁকড়ে ধরলেন আশাদেবী
তিনি আরও বলেন, ‘‘মধ্যপ্রদেশে বিজেপি ১৫ বছর ছিল। আমি পাঁচ বছর কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম, যার মধ্যে ১৫ মাসই কাজ করতে পেরেছি। কিন্তু এই ১৫ মাসে বিজেপি কী ষড়যন্ত্র করেছে, মানুষ তা ভাল ভাবেই জানেন। যে দিন থেকে ক্ষমতায় এসেছি, সে দিন থেকেই ওরা আমাদের সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে। ওরা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।’’
গত ১৫ মাস ক্ষমতায় থাকাকালীন কমল নাথ সরকার রাজ্যবাসীর জন্য কোনও কাজই করেনি বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। এ দিন সেই অভিযোগ উডি়য়ে দেন কমল নাথ। তিনি বলেন, ‘‘১৫ মাসে ৪০০ প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছি আমরা। তৃতীয় দফায় কৃষিঋণ মকুবের প্রক্রিয়াও শুরু হতে চলেছে। এটাই সহ্য করতে পারেনি বিজেপি। জনমতের বিরুদ্ধে যাঁরা গিয়েছেন মানুষ তাঁদের ক্ষমা করবেন না।’’
২৩০ আসনের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় এই মুহূর্তে আসন সংখ্যায় এগিয়ে বিজেপি-ই। এ দিন দলের বিধায়ক শরদ কউল ইস্তফা দেওয়ার পরও তাদের কাছে ১০৬টি আসন রয়েছে। ২২ জন বিধায়ক ইস্তফা দেওয়ার পর কংগ্রেসের কাছে রয়েছে ৯২টি আসন। বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) ২, সমাজবাদী পার্টির (সপা) ১ এবং চার নির্দল বিধায়কেরও সমর্থনও রয়েছে তাঁদের কাছে। তাতে ম্যাজিক সংখ্যা ১০৩ পার করা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: কলকাতায় করোনা: দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো ঘুরে বেড়ালেন দ্বিতীয় আক্রান্তও
এমন পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের ওই শরিকদের মধ্যে অনেকেই বিজেপির হাত ধরার কথা ভাবছেন। খোলাখুলি সে কথা স্বীকারও করেছেন কেউ কেউ, যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন নির্দল বিধায়ক প্রদীপ জয়সওয়াল। কমল নাথ ইস্তফা দেওয়ার পর সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘যে দল সরকার গড়বে, মানুষের স্বার্থে তাদের সমর্থন করা ছাড়া আমার আর উপায় নেই। আগেই বলেছিলাম, যত দিন কমল নাথ থাকবেন ওঁকেই সমর্থন করব। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজের কেন্দ্রের মানুষের উন্নয়ন ছাড়া কিছু ভাবতে পারছি না। বিজেপির সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে।’’