মর্যাদার লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াই। গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।
টানটান উত্তেজনার উপনির্বাচনে মধ্যপ্রদেশে বিজেপি-কে কিছুটা ধাক্কাই দিল কংগ্রেস। মুঙ্গাবলী এবং কোলারস, দুটি বিধানসভা কেন্দ্রেই ভাল ব্যবধানে জয়ী হলেন কংগ্রেস প্রার্থীরা। দুই কেন্দ্রই কংগ্রেসের গড় হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সে গড়ে ফাটল ধরাতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিল বিজেপি। সে প্রচেষ্টা যে সফল হল না, তা স্পষ্ট।
দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রই কংগ্রেসের দখলে ছিল। বিধায়কদের মৃত্যুতে আসন দু’টি শূন্য হয়। কিন্তু রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র ছ’মাস আগে হওয়া এই উপনির্বাচনকে ঘিরে শাসক বিজেপি এবং বিরোধী কংগ্রেস বেনজির তৎপরপতা দেখিয়েছে। তাই এই উপনির্বাচনের ফলাফলের দিকে নজর রাখছে প্রায় গোটা দেশের রাজনৈতিক শিবিরই।
কোলারস কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ৮ হাজার ৮৩ ভোটে। মুঙ্গাবলীতে কংগ্রেস প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ২ হাজার ১২৪ ভোটে।
ব্যাপম কেলেঙ্কারি, কৃষক বিক্ষোভ এবং ১৫ বছর ধরে মসনদে থাকা বিজেপি-র বিরুদ্ধে অ্যান্টি ইনকামবেন্সি-র হাওয়া— সব মিলিয়ে মধ্যপ্রদেশে প্রবল চাপের মুখে শিবরাজ সিংহ চৌহানের সরকার। উপনির্বাচনে কংগ্রেসের হাত থেকে দু’টি আসন ছিনিয়ে নেওয়া গেলে হাওয়া ঘুরিয়ে দেওয়া যাবে, এমনটা ধরে নিয়েই সর্বশক্তি দিয়ে প্রচারে ঝাঁপিয়েছিল বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান দু’টি বিধানসভায় মোট ৪০টি জনসভা করেন। ১০টি রোড শো-ও করেন।
নিজের খাসতালুক রক্ষা করতে মরিয়া ছিলেন গুনার কংগ্রেস সাংসদ তথা গ্বালিয়র রাজপরিবারের সদস্য জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াও। যে দুই বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়েছে, সেই দু’টিই জোত্যিরাদিত্যের নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে। তাই প্রচারে শিবরাজকে টেক্কা দেওয়ার সব রকম চেষ্টাই তিনি করেছিলেন। দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে ৭৫টি জনসভা করেন জ্যোতিরাদিত্য। করেন ১৫টি রোড শো।
আরও পড়ুন: সমীক্ষার ত্রিপুরায় টক্কর কাঁটায় কাঁটায়
উপনির্বাচনের ময়দানে শিবরাজকে সরাসরিই চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য। এই লড়াই বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে নয়, ‘‘এই লড়াই শিবরাজ সিংহ চৌহান আর আমার মধ্যে’’— বলেছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। শিবরাজ অবশ্য সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেননি। দুই দলের মধ্যে নয়, দুই ব্যক্তির মধ্যে লড়াই— এই তত্ত্বকে নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন শিবরাজ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি এখানে কুস্তি লড়তে আসিনি।’’
মুখে যা-ই বলুন, শিবরাজ যে জ্যোতিরাদিত্যের ছোড়া চ্যালেঞ্জ একেবারেই অগ্রাহ্য করতে পারেননি, মুঙ্গাবলী এবং কোলারসকে ঘিরে রাজ্য সরকার এবং বিজেপি-র তৎপরতা দেখেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ভোটের প্রচারে ওই দুই কেন্দ্রে প্রায় মাটি কামড়ে পড়েছিলেন রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। ১৮ জন মন্ত্রীকে প্রচারে নামিয়ে দিয়েছিলেন শিবরাজ। জ্যোতিরাদিত্যের পিসি তথা বিজেপি নেত্রী যশোধরা রাজে সিন্ধিয়াকেও প্রচারে নামিয়েছিলেন। পাঁচ মাস সময় দিন বিজেপি-কে, পাঁচ বছরের কাজ করে দেখিয়ে দেওয়া হবে— এমনই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফ থেকে।
আরও পড়ুন: মিডিয়া-সেনা হবে মোদীর মুখ আর কান
কংগ্রেস এবং বিজেপি, দু’পক্ষেই একাধিক বার পরস্পরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ করেছে উপনির্বাচনের প্রচার চলাকালীন। ভোটার তালিকায় ব্যাপক কারচুপি করা হচ্ছে বলে কংগ্রেস অভিযোগ তোলায় ভোটের আগে এক জেলা কালেক্টরকে নির্বাচন কমিশন বদলিও করে দেয়। উত্তেজনায় ঠাসা প্রচার পর্ব শেষে ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হয়। শেষ হাসি হাসলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াই।