কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। ফাইল চিত্র।
পটনায় আগামী ১২ই জুন বিরোধী জোটের বৈঠকের প্রথম বলটি পড়ার আগেই, আজ অস্বস্তির সৃষ্টি হল। তামিলনাড়ু থেকে ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন জানালেন, ওই দিনই তাঁর বাঁধ উদ্বোধনের কাজ রয়েছে। ফলে তিনি নিজে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। কংগ্রেসের তরফ থেকেও তারিখ পিছোনোর অনুরোধ করা হয়েছে।
কিন্তু প্রথম বৈঠকটি আর পিছোতে চান না বলে এই দিনটিকেই ধরে রাখার জন্য পাল্টা অনুরোধ করেছেন বৈঠকের আয়োজক বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তাঁর তরফে বলা হয়েছে, এই বৈঠক বারবার হবে। কিন্তু ঘোষণা করে দেওয়ার পর প্রথম বৈঠকের তারিখ বদল করলে ভুল বার্তা যাবে। অতঃপর কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধী অথবা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন না। পাঠানো হবে অন্য কোনও শীর্ষ নেতাকে। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, “আমরা ১২ তারিখ বিরোধী বৈঠকে যোগ দিচ্ছি। কে যাবেন, তা নির্ভর করছে ওই সময়ে কে ফাঁকা থাকবেন তার উপরে।” সূত্রের খবর, দলের কোনও মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে যেতে পারেন।
আপাত ভাবে যতটা নিরীহ দেখাচ্ছে পটনা-বৈঠকের এগারো দিন আগের এই ঘটনাক্রম, বাস্তব ততটা সরল নয় এবং তাতে বিরোধীপক্ষে ‘পারস্পরিক অ্যালার্জি’র লক্ষণ প্রচ্ছন্ন ভাবে ফুটে উঠেছে বলেই দাবি করছে দিল্লির রাজনৈতিক সূত্র। সূত্রের বক্তব্য, গোড়া থেকেই কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব চেয়েছিলেন, প্রথম বৈঠকটি হোক দিল্লিতে এবং তার নেতৃত্বে থাকুন রাহুল-খড়্গেরা। এই নিয়ে সমমনোভাবাপন্ন দলগুলির নেতাদের সঙ্গে দৌত্যও শুরু করেছিলেন খড়্গে নিজে। যদিও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর কোনও কথা হয়নি। অন্য দিকে মমতাও তাঁর মতো করে কথা বলছিলেন মূলত এমন সব বিরোধী নেতার সঙ্গে, যাঁদের সঙ্গে রাজ্যে কংগ্রেসের সখ্য নেই। এঁদের মধ্যে ছিলেন এসপি-র অখিলেশ সিংহ, জেডিএস-এর এইচ ডি কুমারস্বামী, আপ-এর অরবিন্দ কেজরীওয়াল প্রমুখ। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গেও বৈঠক করেন নেত্রী এবং পটনায় প্রথম জোট-বৈঠক করার কথা তখনই উঠে আসে। সূত্রের মতে, পটনায় বৈঠকটি রাখতে চেয়েছিলেন মমতাই, উদ্দেশ্য কংগ্রেস যেন ছড়ি ঘোরাতে না পারে। এর পিছনে রাজনৈতিক যুক্তিও ছিল— কংগ্রেসের ডাকে সাড়া দিয়ে বৈঠকে আসতে স্বচ্ছন্দ নন আপ, বিআরএস, এসপি-র মতো দলের নেতৃত্ব। কিন্তু নীতীশের ডাকা সভায় তাঁদের যেতে সমস্যা নেই।
পটনায় বৈঠক ধার্য হওয়ার পর তাই কংগ্রেসের আজকের এই সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত নয় বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, তামিলনাড়ুতে কংগ্রেসের জোট শরিক ডিএমকে-র সঙ্গেও এই নিয়ে কথা হয়েছে কংগ্রেসের। আজ স্ট্যালিনের এই সিদ্ধান্তের পিছনে কংগ্রেসের সিলমোহর রয়েছে। রাজনৈতিক শিবির মনে করিয়ে দিচ্ছে, সাম্প্রতিক অতীতে সনিয়া গান্ধী তথা কংগ্রেসের প্রতি স্ট্যালিনের নিরবচ্ছিন্ন আনুগত্যের কথা। গত বছর দিল্লিতে ডিএমকে-র নতুন দলীয় অফিস উদ্বোধনের সময় মঞ্চের মধ্যমণি ছিলেন সনিয়া। নিমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও সে দিন তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও শীর্ষ সংসদীয় নেতা ওই অনুষ্ঠানে যাননি।
স্ট্যালিন আজ বলেন, “পটনায় বিরোধীদের বৈঠকের দিনই মেত্তুর বাঁধ উদ্বোধনের তারিখ রয়েছে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান, আমাকে সেখানে থাকতে হবে। কংগ্রেস সভাপতিও অন্য একটি অনুষ্ঠানে আটকে থাকবেন ওই দিন। ফলে যেতে পারবেন না। সে জন্যই বৈঠক পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। তবে ডিএমকে-র (কোনও শীর্ষ নেতা) অবশ্যই উপস্থিত থাকবেন।” রাজনৈতিক মহল বলছে, এটা ঠিকই যে, কর্নাটক বা তামিলনাড়ুর মতো দক্ষিণ ভারতের রাজ্যে নদী সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মেত্তুর বাঁধের উদ্বোধনে থাকাটা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে স্ট্যালিনের অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে। এটাও ঘটনা যে, এই সরকারি উদ্বোধনের অনুষ্ঠান আগেই ঠিক থাকে। তবে মুখ্যমন্ত্রী চাইলে সময়ের সামান্য হেরফের করে তামিলনাড়ু থেকে পটনা পৌঁছে যেতেই পারেন।
তৃণমূল অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই স্ট্যালিন বা খড়্গের না-থাকা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেনি। বরং এক শীর্ষ পর্যায়ের নেতার কথায়, “প্রত্যেকটি বিরোধী দলের উপস্থিতিই জরুরি এ ক্ষেত্রে। কোনও দলের শীর্ষ নেতা এলেন অথবা তাঁর পরের স্তরের নেতাকে পাঠালেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই বিষয়টিকে আমরা বড় করে দেখতে চাই না।”