আরএসএস-এর দশেরা অনুষ্ঠানে মোহন ভাগবত। ছবি:
কোথাও শিশু চুরির গুজবে, কখনও বা জয় শ্রীরাম না বলার ‘অপরাধ’-এ। গণপিটুনি আতঙ্ক ছড়িয়েছে দেশ জুড়ে। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার জেরেও বাড়ছে এই ধরনের ঘটনা। সেই গণপিটুনি নিয়ে এ বার মুখ খুললেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত। বার্ষিক দশেরা উৎসবের মঞ্চে নাগপুরে আরএসএস প্রধান বলেন, ভারতীয় সংস্কৃতিতে গণপিটুনির স্থান নেই। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির এই রোগ ভারতীয় সমাজকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে। যতই ভিন্ন মত থাক, যতই উস্কানি আসুক, সবার উচিত গণতন্ত্রের সীমার মধ্যে থাকা, বলেন সরসঙ্ঘ চালক।
চলতি বছরেরই জুন মাসে জয় শ্রীরাম না বলায় গণপিটুনিতে খুন হয়েছিলেন ঝাড়খণ্ডের তাবরেজ আনসারি। ওই ঘটনায় দেশ জুড়ে আলোড়ন পড়ে যায়। এ ছাড়াও কখনও শিশু, গরু, বা মোবাইল চুরির অভিযোগে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেই চলেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে শাসক দলের। নাগপুরে প্রতি বছরই দশেরা উৎসবের আয়োজন করে আরএসএস। সেই অনুষ্ঠানে আরএসএস প্রধান এই প্রসঙ্গে বলেন, শুনি এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষকে মারধর করছে। এটা এমন নয় যে শুধু এক ধর্মের মানুষই আক্রমণ করছেন বা আক্রান্ত হচ্ছেন। উল্টোটাও ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে এমনও নজির রয়েছে, যা রটেছে, পরে দেখা গিয়েছে ঘটনা অন্য রকম।’’ ভাগবতের মতে, ‘‘আসলে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে আগুন জ্বালাতে কিছু স্বার্থান্বেষী শক্তিই একটি ধর্মের মানুষকে অন্য ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলে।’’
বিদেশি সংস্কৃতির প্রসঙ্গ টেনে আরএসএস প্রধান বলেন, ‘‘সামাজিক কিছু ঘটনাকে ‘গণপিটুনি’ নাম দেওয়া আসলে আমাদের দেশ এবং হিন্দু সমাজের দুর্নাম করা এবং একটি সম্প্রদায় বা ধর্মের মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করা। গণপিটুনি ভারতের কাছে ভিনগ্রহের বস্তু (এলিয়েন)।’’ একই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘গণপিটুনি পাশ্চাত্যের ভাবনা। ভারতীয় ঐতিহ্যে এই শব্দ নেই। এর উৎস অন্য একটি ধর্মীয় গ্রন্থ। এই শব্দ ভারতের উপর চাপিয়ে দেবেন না।’’
আরও পড়ুন: উইঘুর মুসলিমদের উপর নজরদারি! চিনের ২৮ সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করল আমেরিকা
আরও পডু়ন: ফের পঞ্জাব সীমান্তে পাক ড্রোন, আগ্নেয়াস্ত্র পাচারের ছক! সতর্কতা জারি
গণতান্ত্রিক দেশে ভিন্ন মত বা বিরোধী কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও স্মরণ করিয়েছেন সরসঙ্ঘ চালক। সম্প্রতি গণপিটুনি-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন অপর্ণা সেনদের মতো বিদ্বজ্জনদের একটা বড় অংশ। তা নিয়েও রাজনৈতিক চাপানউতোর বেড়েছিল। সরাসরি সেই ঘটনার উল্লেখ না করলেও বিষয়টিতে যে তাঁদের অস্বস্তি বেড়েছে তা প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কথাতেও। তিনি বলেন, গণতন্ত্রে কারও সীমা লঙ্ঘন করা উচিত নয়। ভিন্ন মত যতই থাক, যতই প্ররোচনা থাক, সমাজের উচিত গণতন্ত্রের পরিসরের মধ্যে থেকেই তার সমাধান করা। আরএসএস-এর স্বেচ্ছাসেবক তথা স্বয়ংসেবকরা সেই সংস্কারে দিক্ষীত বলেও মন্তব্য করেন ভাগবত।
গণপিটুনির মতো গণতন্ত্রের ধারণাও বিদেশ থেকে এসেছে বলেই মনে করেন মোহন ভাগবত। তাঁর বক্তব্য, ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবাই মিলে মিশে শান্তিপূর্ণ ভাবে থাকার নামই হল গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের ধারণা ভারতে আসার আগে থেকেই এখানে সেই রীতি চলে আসছে।