Ajay Kumar Lallu

প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে আরও ‘লাল্লু’ চায় লখনউ

রাজ বব্বরের জায়গায় গত বছরের শেষে যখন বছর চল্লিশের লাল্লুকে উত্তরপ্রদেশের সভাপতি করা হয়, তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই ভদ্রলোক কে?

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২০ ০৫:১৭
Share:

অজয় কুমার লাল্লু ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা।—ছবি সংগৃহীত।

‘শুধু পিজিভি এলে হবে না। আমাদের আরও লাল্লুর মতো নেতা চাই।’ লখনউ থেকে টেলিফোনে কংগ্রেসের এক তরুণ নেতার স্পষ্ট কথা।

Advertisement

কংগ্রেসের অন্দরে ‘পিজিভি’ বলেই পরিচিত প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। তাঁকে দিল্লির লোদী এস্টেটের বাংলো খালি করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। প্রিয়ঙ্কার ঠিকানা এ বার দিল্লির বদলে লখনউ হতে চলেছে। দিল্লির সরকারি বাংলো দ্রুত খালি করার ইঙ্গিত দিয়ে প্রিয়ঙ্কা নিজেও জুন মাস পর্যন্ত বকেয়া প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা মিটিয়ে দিয়েছেন। তাঁর পাখির চোখ এখন ২০২২-এর উত্তরপ্রদেশ ভোট। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেসের নেতাদের পাল্টা প্রশ্ন, প্রিয়ঙ্কার হাতে কি জাদুকাঠি রয়েছে? গত কয়েক দশকে ভেঙে পড়া দলের সংগঠন নতুন করে গড়ে তুলতে চাই আরও অনেক ‘লাল্লু’। অর্থাৎ, রাজ্যের নতুন কংগ্রেস সভাপতি অজয় কুমার লাল্লুর মতো নেতা।

রাজ বব্বরের জায়গায় গত বছরের শেষে যখন বছর চল্লিশের লাল্লুকে উত্তরপ্রদেশের সভাপতি করা হয়, তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই ভদ্রলোক কে? দু’বারের বিধায়ক, এক সময় নয়ডায় নির্মাণকর্মী হিসেবে কাজ করা অজয় মাঠের রাজনীতি করে উঠে এসেছেন। পরিশ্রম করার ক্ষমতা, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, একই সঙ্গে মাটিতে পা রয়েছে দেখে প্রিয়ঙ্কাই তাঁকে সভাপতি পদের জন্য বেছে নেন। কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, উত্তরপ্রদেশের ভোট প্রিয়ঙ্কা-লাল্লুর পরীক্ষা তো বটেই। সেই সঙ্গে প্রিয়ঙ্কার রাজনৈতিক দক্ষতারও ‘অ্যাসিড টেস্ট’। গত বিধানসভা নির্বাচনে অখিলেশ যাদবের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন রাহুল গাঁধী। সফল হননি। লোকসভা ভোটে অমেঠীতে হেরে গিয়েছেন নিজেও। এ বার দাদার হেরে যাওয়া মাঠে বোনের পরীক্ষা।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে প্রিয়ঙ্কার নেতৃত্বেই যে কংগ্রেস ভোটে লড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। আজ পি চিদম্বরমের পুত্র, কংগ্রেস সাংসদ কার্তি দাবি তুলেছেন, ‘‘প্রিয়ঙ্কা গাঁধীকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বলে ঘোষণা করে দেওয়া হোক। পিজিভি মূলত লখনউতেই থাকুন এবং নেতৃত্বে হাতে তুলে নিন। উত্তরপ্রদেশ থেকেই জাতীয় স্তরে কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াবে।’’ উল্টো দিকে প্রিয়ঙ্কার নতুন ঠিকানা লখনউ হতে চলেছে শুনে উত্তরপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব মৌর্য আজ বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের বিশাল হৃদয়। সব সময়ই আমরা অতিথিদের স্বাগত জানাই। কিন্তু কংগ্রেসের কোনও রাজনৈতিক লাভ হবে না। উনি একা আসুন বা ওঁর মা-দাদার সঙ্গে আসুন, কিছুই পাবেন না। কারণ কংগ্রেসের কোনও অস্তিত্বই নেই এ রাজ্যে।’’

লোকসভা ভোটের আগে প্রিয়ঙ্কাকে এআইসিসি-তে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যোতিরাদিত্য সরে যাওয়ার পরে গোটা রাজ্যই প্রিয়ঙ্কা দেখাশোনা করছেন। এ বার তিনি ইন্দিরা গাঁধীর মামিমা, প্রয়াত শীলা কলের লখনউয়ের বাংলোয় আস্তানা নেবেন। রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা বলছেন, কোনও সন্দেহ নেই যে একমাত্র প্রিয়ঙ্কাই এখন যোগী আদিত্যনাথ সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয়। মায়াবতী কার্যত বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। অখিলেশ আগের তুলনায় বহুলাংশে নিষ্ক্রিয়। সিএএ-বিরোধী আন্দোলন থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বাসের ব্যবস্থা— প্রিয়ঙ্কা-লাল্লুর জুটিই মাঠে নেমেছে। লাল্লুকে যোগীর পুলিশ প্রায় এক মাস জেলেও আটকে রেখেছিল। এ থেকেই স্পষ্ট, যোগী সরকার তাঁকে নিয়ে বিচলিত।

কিন্তু প্রিয়ঙ্কা-লাল্লু কি পারবেন দলকে টেনে তুলতে? উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের নিচুতলার সংগঠনে যে ঘুণ ধরেছে, তা কংগ্রেস নেতারাও মানেন। ২০১৭-র বিধানসভায় কংগ্রেস মাত্র ৭.৫% ভোট পেয়েছিল। গত লোকসভায় পেয়েছে ৬.২%। একমাত্র সনিয়া গাঁধী ছাড়া কংগ্রেসের আর কেউ উত্তরপ্রদেশ থেকে জিতে আসতে পারেননি। এআইসিসি-র এক নেতা বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে আমাদের নিচুতলায় লাল্লুর মতো লোক যেমন দরকার, তেমনই কর্নাটকের ডি কে শিবকুমারের মতো প্রভাবশালী-ক্ষমতাশালী নেতাও দরকার।’’

ঘটনাচক্রে, আজই শিবকুমার কর্নাটকের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে ১০ লক্ষ কর্মীর ভার্চুয়াল জনসভা করেছেন। সেই জনসভায় টেলিফোন বার্তায় প্রিয়ঙ্কা বলেছেন, ‘‘এখন কংগ্রেস কর্মীদের লড়াইয়ের সময়। অত্যাচারী সরকারের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে হবে।’’ প্রিয়ঙ্কাকে বাংলো ছাড়ার নোটিস দিলেও তা নিয়ে কংগ্রেস বেশি হইচই করছে না। প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘কী ভাবে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত আক্রমণের মুখে সাহসের সঙ্গে রুখে দাঁড়াতে হয়, তা শিবকুমার দেখিয়েছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement