মন্দার ধাক্কায় আয় কমল, উদ্বিগ্ন রেল

আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ক্ষেত্রে নভেম্বর পর্যন্ত রেল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:১৮
Share:

ফাইল চিত্র।

ভাঁড়ারে মা ভবানী দশা চলছিলই। তার উপরে দেশজোড়া বেহাল অর্থনীতির চাপে এখন রেলের একেবারে হাঁসফাঁস অবস্থা। আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ক্ষেত্রে নভেম্বর পর্যন্ত রেল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে। আয়ে ব্যাপক ঘাটতির জেরে কয়েক মাসের মধ্যে নতুন অর্থবর্ষের বাজেটে রেলের আর্থিক দুর্দশার আরও খারাপ প্রতিফলন ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Advertisement

চলতি আর্থিক বছরের প্রথম আট মাসে এক লক্ষ ৩৬ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও গত নভেম্বর পর্যন্ত এক লক্ষ ১৪ হাজার কোটির কিছু বেশি এসেছে রেলের ঘরে। পাশাপাশি খরচ কাটছাঁটের বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করার পরেও ওই সময়ের মধ্যে রেলের ব্যয় বেড়েছে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি। ফলে সংস্থার আর্থিক স্বাস্থ্য নিয়ে রেলকর্তারা রীতিমতো উদ্বিগ্ন।

রেলে পণ্য পরিবহণের ছবি অত্যন্ত ম্লান। অর্থবর্ষের প্রথম আট মাসে পণ্য পরিবহণ থেকে ৮৯ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ওই খাতে আয় হয়েছে মাত্র ৭১ হাজার কোটি। ঘাটতি ১৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। গত অক্টোবরে ব্যস্ত সময়ে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে ধার্য ১৫ শতাংশ সারচার্জ কমানোর পরেও রেলে পণ্য বহনের পরিমাণ বাড়েনি। বরং তা প্রায় আট শতাংশ কমে গিয়েছিল রেল সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

যাত্রী পরিবহণ থেকে রেলের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। কিন্তু ওই খাতে আয় হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি। ফলে যাত্রী ও পণ্য, পরিবহণের দুই খাতেই ঘাটতি রয়েছে। বিজ্ঞাপন এবং অন্যান্য খাতেও রেল উল্লেখযোগ্য হারে আয় বাড়াতে পারেনি। ট্রেন ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে কর্পোরেট সংস্থাকে বিজ্ঞাপনের কাজে ট্রেন ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকেও আশানুরূপ আয় হয়নি।

রেলকর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, দেশ জুড়ে শিল্প ক্ষেত্রে মন্দা দেখা দেওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা কমে গিয়েছে। বিভিন্ন শিল্পে কাঁচামালের চাহিদাও কমেছে। তার প্রভাব পড়েছে রেলের পণ্য পরিবহণে। এমনকি অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় সিমেন্ট, রাসায়নিক সামগ্রী, অন্যান্য পণ্যের পরিবহণ ধাক্কা খেয়েছে। তার উপরে সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় স্বল্প পরিমাণ পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে রেলের কন্টেনার ব্যবহারের আগ্রহ কমছে। রেলে বিভিন্ন ই-কমার্স সংস্থার পণ্য পরিবহণে জোর দেওয়া হলেও তাতে আশানুরূপ ফল মেলেনি।

রেলের বাতানুকূল শ্রেণিতে টিকিট না-পেয়ে যাত্রীদের একাংশ কম ভাড়ার বিমানযাত্রার দিকে ঝুঁকছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ট্রেনের গতি বাড়িয়ে বেশি সংখ্যক যাত্রী পরিবহণের জন্য চেয়ারকার আছে, এমন ট্রেন চালানোর চেষ্টা করছে রেল। তবে তাতেও কতটা সুফল মিলবে, সেই বিষয়ে সংশয় কাটছে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement