রামমন্দির নিয়ে ঐক্যের বার্তা প্রিয়ঙ্কার।—ফাইল চিত্র।
করোনা কালে অযোধ্যায় মহাসমারোহ নিয়ে এত দিন প্রশ্ন তুলছিলেন দলের নেতারা। কিন্তু রামমন্দিরের ভূমিপুজোর এক দিন আগে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধী দিলেন ঐক্যের বার্তা। শতাধিক মানুষকে নিয়ে অযোধ্যায় যে মহা আয়োজন হয়েছে, তার বিরোধিতা করা তো দূর, বরং অযোধ্যা রামমন্দিরের ভূমিপুজোর অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয় ঐক্য, সৌভ্রাতৃত্ব এবং সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের প্রতীক হয়ে উঠুক বলে বার্তা দিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘রাম নামের সারকথাই হল সরলতা, সাহস, সংযম, ত্যাগ এবং প্রতিশ্রুতি। সকলের মধ্যেই রাম রয়েছেন, রাম রয়েছেন সকলের সঙ্গে।’’
বুধবার অযোধ্যায় ভূমিপুজোয় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজে হাতে রামমন্দিরের শিলান্যাস করবেন তিনি। অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, রাজ্যপাল আনন্দীবেন পটেল এবং সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতও। অনুষ্ঠানে প্রায় ২০০ অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, কংগ্রেসের কোনও নেতা-নেত্রী সেখানে ডাক পাননি। এমন পরিস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের দায়িত্বে থাকা প্রিয়ঙ্কা মঙ্গলবার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। তাতেই রামনামের গুণগান করতে দেখা যায় তাঁকে।
এ দিন টুইটারে ওই বিবৃতি প্রকাশ করার সময় হিন্দিতে প্রিয়ঙ্কা লেখেন, ‘‘দীনবন্ধু রাম নামের সার কথাই হল সরলতা, সাহস, সংযম, ত্যাগ এবং প্রতিশ্রুতি। সকলের মধ্যেই রাম রয়েছেন, রাম রয়েছেন সকলের সঙ্গে। ভগবান রাম ও মাতা সীতার আশীর্বাদে রামলালা মন্দিরের ভূমিপুজোর অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয় ঐক্য, সৌভ্রাতৃত্ব এবং সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের প্রতীক হয়ে উঠুক।’’
প্রিয়ঙ্কার টুইট।
আরও পড়ুন: কাজ নেই, ইদ যেতেই ফের ভিনরাজ্যের পথে পরিযায়ী শ্রমিকরা
ওই বিবৃতিতে প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘গোটা পৃথিবী এবং ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে রামায়ণের গভীর সংযোগ রয়েছে। ভগবান রাম, মাতা সীতা এবং রামায়ণের গল্প বহু বছর ধরে আমাদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় চেতনাকে আলোকিত করে আসছে।’’ রামায়ণ থেকেই ভারতীয়রা নীতি, কর্তব্যপরায়ণতা, ত্যাগ, উদারতা, প্রেম, বীরত্ব এবং সেবার অনুপ্রেরণা পান বলেও জানান প্রিয়ঙ্কা। উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম, দেশের সব প্রান্তে রামকথা নানা ভাবে বর্ণিত হয়েছে এবং শ্রীকৃষ্ণের অগুনতি রূপের মতোই রামায়ণগাথা অনন্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রিয়ঙ্কা আরও বলেন, ‘‘যুগ যুগান্তর ধরে রামের চরিত্র মানবতাকে একসূত্রে বেঁধে রেখেছে। ভগবান রাম আশ্রয়ও, আবার ত্যাগও। রাম সকলের। রাম যেমন শবরীর, তেমনই সুগ্রীবের। রাম যেমন বাল্মীকির তেমনই ব্যাসের। রাম কম্বনের, আবার এষুত্তেচ্ছনেরও। রাম কবীরের, রাম তুলসীদাস-রবিদাসেরও। রাম সকলের দাতা। গাঁধীর রঘুপতি রাঘব রাজা সকলকে সুবুদ্ধি দেন। ওয়ারিস আলি শাহের কথায়, যিনি উপরওয়ালা, তিনিই রাম। রাষ্ট্রকবি মৈথিলীশরণ গুপ্ত রামকে নির্বলের বল বলে উল্লেখ করেছেন।’’
ওয়াইসির টুইট।
আরও পড়ুন: সুশান্তের মৃত্যুতে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ বিহার সরকারের
তবে রামমন্দির নিয়ে প্রিয়ঙ্কার এই বার্তায় চটেছেন অল ইন্ডিয়া মসলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এমআইএম) নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘ভালই হল যে আর কোনও ভনিতা করছেন না ওঁরা। ওঁরা যদি এই চরমপন্থী হিন্দুত্ববাদী আদর্শকে আঁকড়ে ধরতে চান ভালই। কিন্তু সৌভ্রাতৃত্বের ফাঁপা বুলি আওড়ানো কেন? একদম লজ্জা পাবেন না। বরং যে আন্দোলনের জেরে আমাদের বাবরি মসজিদ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, তাতে নিজের দলের অবদান নিয়ে গর্ব বোধ করুন।’’
দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা অযোধ্যা মামলায় গত বছরই রায় শোনায় সুপ্রিম কোর্ট। অযোধ্যার ওই বিতর্কিত জায়গায় রামমন্দির নির্মাণে অনুমতি দেয় আদালত। মসজিদ নির্মাণে জন্য অন্যত্র পাঁচ একর জমির বন্দোবস্ত করতে বলা হয়। আদালতের সেই রায়কে স্বাগত জানায় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। মন্দির নির্মাণ নিয়ে কোনওকালেই তাঁদের আপত্তি ছিল না বলে জানিয়েছেন দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা।