লোকসভায় অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
সোমবার মধ্যরাতে লোকসভায় পাশ হল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি)। আজ সাত ঘণ্টা বিতর্কের শেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়ে দেন, ওই বিল পাশ হওয়ার ফলে প্রতিবেশী তিন দেশের অ-মুসলিম সংখ্যালঘু শরণার্থীরা দেশের নাগরিকত্ব পাবেন। কিন্তু ওই আইনের সঙ্গে এ দেশের মুসলিমদের কোনও সম্পর্ক নেই। ওই আইন পাশ হলে দেশের মুসলিম সমাজের কোনও সমস্যা হবে না। আজ ওই বিল নিয়ে নিজের বক্তব্য শেষ করার সময়েই শাহ জানিয়ে দেন, খুব দ্রুত গোটা দেশে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) আনা হবে।
আজ বিল নিয়ে আলোচনা যত গড়িয়েছে কেউ তাঁর সঙ্গে তুলনা করছেন জার্মানির নাৎসি প্রধানের। কারও প্রশ্ন, বেছে বেছে কেন মুসলিমরাই বাদ? আপনি তো শুধু সংখ্যালঘুদেরই নিশানা করছেন? সংবিধান শিকেয় তুলে দিয়েছেন!
বিল পেশ হওয়া মাত্র বিরোধীরা যে এ ভাবে ছেঁকে ধরবেন, হয়তো ভাবেননি শাহ। জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের প্রস্তাব সংসদে নিয়ে আসার সময়ও বিরোধীদের আক্রমণে এতটা অস্থির হননি, যেমন আজ হতে হল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ৩১১-৮০ ভোটে বিলটি পাশ করিয়ে নিতে সক্ষম হয় শাসক শিবির।
নাগরিকত্ব বিলে কে কোথায় দাঁড়িয়ে
বিপক্ষে
কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, এনসিপি, সিপিএম, সিপিআই, মুসলিম লিগ, এমআইএম, তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি
পক্ষে
বিজেপি, অকালি, শিবসেনা, বিজেডি, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, জেডি-ইউ
আজ গেরুয়া রঙের ‘মোদী কোট’ পরে লোকসভায় এসেছিলেন শাহ। কিন্তু সংসদে বিল পেশ হতেই সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের অধীররঞ্জন চৌধুরী, শশী তারুর, গৌরব গগৈ, তৃণমূলের সৌগত রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র এমআইএম-এর আসাদুদ্দিন ওয়াইসি, মুসলিম লিগের পি কে কুনহালিকুট্টিরা ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ঝাঁঝালো আক্রমণ শুরু করেন। কম করে বারো বার উঠে দাঁড়িয়ে তার জবাব দিতে চান শাহ।
আরও পড়ুন: রেশন কার্ড থাকুক বা না থাকুক, নাগরিকত্ব পেতে সমস্যা নেই, বাংলাকে বার্তা শাহের
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এত বার উঠতে দেখে শেষ পর্যন্ত অধীর চৌধুরী বলেই ফেললেন, ‘‘দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েও আপনি যদি আমাদের রক্ষা করতে না পারেন, তা হলে কে করবে?’’ বার বার উঠে শাহ এটাই বলতে চেষ্টা করছিলেন যে, ধর্মের বিভাজন করে এই বিল আনা হয়নি। এই বিল দেশের ০.০০১ শতাংশ সংখ্যালঘুরও বিরুদ্ধে নয়। বিরোধীরা বিলের কথা বিকৃত করছে। বিলে কোথাও মুসলিমদের নামটুকুও করা হয়নি। উল্টে তিন প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের কাহিনি সামনে তুলে আনেন তিনি।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসকে আক্রমণের ছলেই শাহ স্বীকার করে নেন, ধর্মের ভিত্তিতে দেশ বিভাজন হয়েছে। সেই কারণে এখন ধর্মের ভিত্তিতে সেই বিভাজনের রাজনীতি করতে হচ্ছে তাঁদের। গোটা বিলের পিছনে মহম্মদ আলি জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্ব মেনে নিয়ে কংগ্রেসের দেশ ভাগে রাজি হওয়াকেই দায়ী করেছেন তিনি। শাহ বলেন, ‘‘১৯৫০ সালের নেহরু-লিয়াকত চুক্তি যদি সফল ভাবে বাস্তবায়িত হত, তা হলে ওই বিল আনার প্রয়োজন হত না।’’
আরও পড়ুন: অসাংবিধানিক! মানছেনই না শাহ
মাঝ রাতের কাছাকাছি নিজের বক্তব্যে মুসলিমদের আশ্বস্ত করে বার্তা দেন অমিত শাহ। জানান, ওই আইনের ফলে মুসলিমদের কোনও ভয় নেই। বিরোধী সাংসদদের বার্তা দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিলের বিতর্কে বিরোধীদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে ওই বিল এনে মুসলিমদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিয়ে জানাচ্ছি, ওই বিল পাশ হলে এ দেশের মুসলিমদের কোনও ভয় নেই। ভারতে বসবাসকারী মুসলিমদের সঙ্গে ওই বিলের কোনও সম্পর্ক নেই। এ দেশের মুসলিমদের সঙ্গে কোনও ভেদাভেদ হবে না।’’ একই সঙ্গে উত্তর-পূর্বের রাজ্য ধরে ধরে জানান, সেখানকার বাসিন্দাদের দুশ্চিন্তা করার কোনও কারণ নেই।
আজ সাত ঘণ্টার বিল নিয়ে আলোচনার শেষে যখন ভোটাভুটি হয় তখন ঘড়ির কাঁটা মাঝরাত পেরিয়ে গিয়েছে। বিরোধীরা যখন বলছেন, এক মধ্যরাতে স্বাধীনতা পেয়েছিল ভারত। আর এক মধ্যরাতে তা হারাল। তখন অমিত শাহের দাবি, ‘‘আগামিকাল সোনালি সূর্য উঠবে।’’
লোকসভায় সিএবি পাশের পরে সমস্ত বিরোধী দল ও শাহকে অভিনন্দন জানান নরেন্দ্র মোদী। সরকারি সূত্রে খবর, আগামী বুধবার রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব বিল পেশ করবে সরকার।