বিষমদে দমেনি মোদী জমানার প্রাপ্তি ও প্রচার

ভোটে আগে বাগানগুলিতে অঢেল মদ-মাংসের চল থাকেই।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫৮
Share:

গণমৃত্যুর পরে বাগানের মহিলারাই রুখে দাঁড়িয়েছেন চোলাই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। ছবি: সংগৃহীত।

কে বলবে ভোট দোরগোড়ায়!

Advertisement

গুয়াহাটি থেকে গোলাঘাট, যোরহাট হয়ে ডিব্রুগড় পর্যন্ত প্রায় ৪৪৫ কিলোমিটার চষে ফেলেও প্রচারের জমাটি কোনও ছবি দেখা গেল না। ভোটের প্রচার বলতে চোখে পড়ল নগাঁও, বোকাখাতের আশপাশে চার-পাঁচটি প্রচারের ছাউনি আর ডিব্রুগড় থেকে অরুণাচলে ঢোকার মুখে দু’টি প্রচার-গাড়ি। এই জাতীয় সড়ক বরাবর ছড়িয়ে চা বাগান। কলিয়াবর, তেজপুর, যোরহাট, ডিব্রুগড়, লখিমপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণে বাগানের ভোট গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যের ৮০৩টি চা বাগান মেলালে জনসংখ্যা ৩১ লক্ষ, যা মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ। বাগানে এত বছর ধরে মৌরসিপাট্টা ছিল কংগ্রেসের। কিন্তু এ বারের ভোটে উলটপূরাণ। কংগ্রেস-এআইইউডিএফ ভোট একসঙ্গে হয়ে যাওয়ায় উজানি অসমে চা শ্রমিকদের ভোটই বিজেপিকে জেতাবে বলে দলের আশা।

ভোটে আগে বাগানগুলিতে অঢেল মদ-মাংসের চল থাকেই। কিন্তু সদ্য গোলাঘাট-যোরহাটের চা বাগানে বিষ মদ খেয়ে ১৬০ জনের মৃত্যু বদলে দিয়েছে ছবি। দুই জেলা মিলিয়ে অন্তত ৪৫টি শিশু বাবা-মা দু’জনইকেই হারিয়েছে। বোকাখাতের অনাথালয়ে আশ্রয় পাওয়া শচীন তেলেঙা, অবিনাশ পুজররা জানে না তাদের ভবিষ্যৎ কি! বানরভিটা চা বাগানের শ্রমিক রঞ্জিত তুরির বাড়িতে বিয়ে। নতুন করে ঘরে মাটি লেপতে লেপতে জানালেন, দাদা সুনীলের বিয়েতে এ বার মদের আসর বসবে না। গণমৃত্যুর পরে বাগানের মহিলারাই রুখে দাঁড়িয়েছেন চোলাই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। প্রতিমা তুরি, পূজা তুরাদরা পুলিশের তোয়াক্কা না-করে মহিলা সমিতি গড়ে সব চোলাই ঘাঁটি ভেঙেছেন।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আদিবাসী ছাত্র সংগঠনের সদস্য মোহন তুরি অবশ্য জানাচ্ছেন, চোলাইয়ের টান সহজে যায় না। তাই দিনে ১৬৭ টাকা বেতন পাওয়া শ্রমিকেরা আগে যেখানে বিশ টাকার চোলাই খেতেন এখন বিলিতি মদ ৫০-৬০ টাকায় কিনে খাচ্ছেন। ফলে সংসারে অর্থকষ্ট বেড়েছে।

ডিব্রুগড় কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী পবনসিংহ ঘাটোয়ার বহু বছর ধরে চা মজদুর সঙ্ঘের প্রধান। তিনি চা বাগানগুলি ‘ড্রাই এরিয়া’ ঘোষণা করার দাবি তুলেছেন। কংগ্রেসের চা নেতা ভগীরথ করণ অভিযোগ করেন, শাসক দল এখনও বাগানে মদ ছড়িয়ে ভোট নেওয়ার চেষ্টা করছে।

কিন্তু ছবি বদলেছে বাগানের। কংগ্রেসের পালের হাওয়া কেড়েছেন মোদী। হালমিরা, ডিফলু, বানরভিটা, কাকপথার, বেসাকপি বাগানগুলিতে শ্রমিকদের মধ্যে এখন জনপ্রিয়তা বাড়ছে তাঁর। বাগানের প্রবীণ মানুষরা বলছেন, ‘‘আগে নরসিংহ রাও, মনমোহন সিংহ বা তরুণ গগৈদের নাম বাগানে পরিচিত ছিল না। কংগ্রেস বলতেই মানুষ বুঝত ইন্দিরা গাঁধী। এখন মোদীর জনপ্রিয়তা বেড়েছে।’’ ব্যাপক প্রচার, সব চা শ্রমিক পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে পাঁচ হাজার টাকা জমা দেওয়া, বাগানে শ্রমিকদের উপরে যাঁদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি, সেই সর্দারদের হাতে মোবাইল তুলে দিয়েই ছবিতে বদল এনেছেন মোদী। এমনকি গোলাঘাট-যোরহাটের বাগানে এত জন শ্রমিকের মৃত্যুর পরেও শাসক বিজেপি তেমন ধাক্কা খায়নি। সর্দাররা বলছেন, ১১ এপ্রিল ভোট, আমরা ১০ তারিখ সবাইকে ‘যা বলার বলে দেব’।

আটসার দেরগাঁও শাখার সভাপতি রাবুল তুরির মতে, পাঁচ বারের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন পবনসিংহ। কিন্তু এত বছর ধরে চা মজদুর সঙ্ঘ ও কংগ্রেস যে ভাবে মালিকপক্ষের সঙ্গে সন্ধি করে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবি দমিয়ে রেখেছিল— তা চা শ্রমিকদের ক্ষিপ্ত করেছে। বিজেপি সরকার বাগানে অনেক প্রকল্প দিয়েছে। দিচ্ছে চাল-চিনি-তেল। সর্দারদের হাতে দিয়েছে মোবাইল। কমেছে ঘুষের সংস্কৃতি ও সিন্ডিকেট। পাশাপাশি, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে আন্দোলন বা এনআরসির আঁচ বাগানে তেমন পড়েনি। তাই চা বাগানের ভোট বিজেপির দিকে ঝুঁকে। অবশ্য কাঙ্ক্ষিত বেতন বৃদ্ধি না হওয়ার ক্ষোভটা বাগানগুলিতে রয়েছে। প্রসূতি মহিলাদের অনেকেই ঘোষিত ১২ হাজার টাকা পাননি। আদিবাসীদের তফসিল জনজাতিভুক্ত করার বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখাটাও বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের হাতিয়ার। সেই ফাঁক অনেক দিন থেকেই পূরণে নেমেছে আরএসএস। কংগ্রেসের অভিযোগ, বাগানের নেতাদের বিভিন্ন উপায়ে হাত করছে আরএসএস। শ্রমিকদের পাখি পড়ানোর মতে শেখানে হচ্ছে, ‘পদুম ফুল মে দিব ভোট’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement