রাহুলের ‘ন্যায়’ প্রকল্প ঠেকাতে মোদীর মহাকাশই শক্তি

আজ থেকে ভোটপ্রচারে নেমে মোদী প্রথম দিনে সারলেন তিনটি সভা। সেই সব সভার সিংহভাগ জুড়ে ‘মিশন-শক্তি’কে দিয়ে রাহুলের গরিব মন কাড়ার প্রয়াসের মোকাবিলা করার চেষ্টা করলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯ ০৩:২০
Share:

এই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েই ধ্বংস করা হয়েছে কৃত্রিম উপগ্রহ। ছবি: রয়টার্স।

গরিবদের কাছে টানতে রাহুল গাঁধী অস্ত্র করছেন ‘সামাজিক ন্যায়’ প্রকল্পকে। নরেন্দ্র মোদীর পাল্টা হাতিয়ার ‘মিশন শক্তি’!

Advertisement

বিরোধীদের একাংশ বলছেন— ভোট জোগাড়ে জল-স্থল-আকাশ টপকে মোদী একেবারে মহাকাশে পৌঁছে গেলেন!

রাফাল, নীরব মোদীদের প্রসঙ্গ তুলে ‘চৌকিদারই চোর’ স্লোগানে গত কয়েক মাসে মোদীকে চাপে ফেলে দিয়েছেন রাহুল। ক্ষমতায় এলে গরিবদের জন্য প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা সাহায্যের ঘোষণা করে মোদী-বাহিনীর দেশভক্তির প্রচার তিনি অনেকটা ফিকে করে দিয়েছেন বলে মানছেন বিজেপিরই একটা অংশ। এই পরিস্থিতিতে ইউপিএ জমানায় নেওয়া পরিকল্পনা ‘মিশন শক্তি’কে আঁকড়ে ধরেছেন মোদী। মহাকাশে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংসের যে ঘোষণা বিজ্ঞানীরা করতে পারতেন, ভোট-বিধির মধ্যেই তা করতে আসরে নেমে পড়লেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী! তা-ও অতি নাটকীয় ভাবে এবং গোটা দেশবাসীর হৃদ‌্স্পন্দন বাড়িয়ে। সে কারণে রাহুল গত কাল বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে ‘বিশ্ব নাট্য দিবস’-এর শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন! সেই কটাক্ষেও দমেননি মোদী। বরং কাল থেকে রাহুলের ‘ন্যায়’ প্রকল্পের মোকাবিলা করতে ‘শক্তি’ই তাঁর শক্তি।

Advertisement

আজ থেকে ভোটপ্রচারে নেমে মোদী প্রথম দিনে সারলেন তিনটি সভা। সেই সব সভার সিংহভাগ জুড়ে ‘মিশন-শক্তি’কে দিয়ে রাহুলের গরিব মন কাড়ার প্রয়াসের মোকাবিলা করার চেষ্টা করলেন। একের পর এক সভায় দাবি করলেন, তাঁর সরকার শুধু স্থলে বা আকাশে নয়, অন্তরীক্ষেও ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ করতে পারে। সেই সঙ্গেই বিরোধীদের আক্রমণ করে দাবি করলেন, তিনিই একমাত্র ‘দমদার’ (কাজের), বিরোধীরা তো ‘দাগদার’ (দাগী)। তাই দেশের ১৩০ কোটি মানুষ তাঁকেই ক্ষমতায় ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

‘নাট্য দিবস’ নিয়ে রাহুলের গত কালের শুভেচ্ছা কটাক্ষের জবাব দিয়ে মোদী বললেন, ‘‘নাটকে ‘সেট’ শোনা যায়। গত কাল যখন ‘এ-স্যাট’ বললাম, কিছু বুদ্ধিমান বিভ্রান্ত হয়ে সেটিকে নাটকের ‘সেট’ ভাবলেন! নাটকের ‘সেট’ আর মহাকাশের ‘এ-স্যাট’-এর ফারাক বোধ নেই? কাঁদব না হাসব?’’

রাহুলের কটাক্ষ ফেরানোর চেষ্টার পাশাপাশি গরিব মন জয়েরও আপ্রাণ চেষ্টা চালালেন মোদী। গত পাঁচ বছর ধরে নিজেকে গরিবের ‘মসিহা’ হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছেন বারেবারে। বিরোধী কটাক্ষ এবং সরকারি নানা তথ্যকেও পাত্তা দেননি। কিন্তু এ বারে ভোটের মুখে দেশের ২৫ কোটি গরিবের ‘ভোটে’ রাহুলের ‘ন্যায়’এর কোপ পড়তেই আজ বললেন, ‘‘আমার বয়স যখন ৮-১০ বছর, সরকার তখন ‘গরিবি-হঠাও’-এর কথা বলত। ২০-২২ বয়স হল, তখনও ইন্দিরা গাঁধী একই কথা বলতেন। এর পর চার প্রজন্ম একই কথা বলেছে। কিন্তু নিজেদের শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে, গরিবরা আরও গরিব হয়েছে।’’

যা শুনে কংগ্রেস বলছে, মোদীর আমলেই দেশে বেকারির হার গত ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ হয়েছে। ধনী-দরিদ্রের ফারাক বেড়েছে। অপুষ্টি-ক্ষুধা বেড়েছে। তার পরেও এ সব বলে মোদী আসলে জনগণকে বোকা বানাতে চাইছেন। একই সঙ্গে কংগ্রেস বলছে, একে তো রাহুলের ‘চৌকিদার চোর’ স্লোগান এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে আজও জনসভায় মোদীকে বারবার ‘চৌকিদার-চৌকিদার’ করতে হল। তার উপর রাহুলের একটি মাত্র প্রতিশ্রুতির মোকাবিলা করতে গিয়েই কালঘাম ছুটছে মোদীর। কারণ গত পাঁচ বছরে তাঁর সরকার গরিবদের জন্য কিছুই করেনি। কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বললেন, ‘‘পাঁচ বছর পরেও জনতার সামনে নিজের সাফল্য মেলে ধরার কিছু নেই প্রধানমন্ত্রীর। তিনি কি শাসক দলের নেতা না বিরোধীদের? রাহুল গাঁধীর মোকাবিলা করতে গরিবদের উপহাস করছেন! প্রধানমন্ত্রী কি গরিবদের ন্যায় দেওয়ার পক্ষে না বিপক্ষে?’’

উত্তরপ্রদেশের মেরঠ, উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপুর এবং জম্মুর আখনুর— তিনটি সভাতেই ‘মিশন শক্তি’ নিয়ে বললেন। উত্তরাখণ্ডে চারধামের সঙ্গে যোগ করলেন পঞ্চম ধাম— ‘সৈনিক ধাম’। মোদী-বিরোধিতা করতে গিয়ে দেশ-বিরোধিতা করছে বলে কংগ্রেসকে বিঁধলেন। ঘুষের আশায় রাফাল নিয়ে কংগ্রেস দশ বছর বসে ছিল বলে অভিযোগও করলেন।
কংগ্রেসের প্রশ্ন, এ সবের মধ্যে মোদীর পাঁচ বছরের কাজের হিসেব কোথায়? সেনা আর বিজ্ঞানীদের কৃতিত্বকে নিজের দিকে টেনে ভোট চাইছেন তিনি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement