‘বহুত বড়িয়া, ভেরি ইম্প্রেসিভ’, মোদীর সাংবাদিক বৈঠক নিয়ে কটাক্ষ রাহুলের

ঠিক তখনই আকবর রোডে এআইসিসি দফতরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি রাহুল। গত পাঁচ বছরে যিনি ৪৫টি সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। অগুনতি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। আজও তার অন্যথা হল না। তাঁর কাছে প্রথম প্রশ্নই এল, ‘‘আজ প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করছেন। কী বলবেন?’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৯ ০৩:২৭
Share:

শুক্রবার নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী। এপি

দুপুরবেলা বিজেপি দফতরের তল্লাটে পা রাখতেই বোঝা গেল, প্রধানমন্ত্রী আসছেন।

Advertisement

রাস্তা জুড়ে পুলিশের টহল, এসপিজি নিরাপত্তা, ব্যারিকেড।

তা হলে এটাই কি ভোট প্রচারের শেষ দিনের চমক? জল্পনা চড়ল সাংবাদিক মহলে। আগামিকাল থেকে দু’দিনের জন্য তো প্রধানমন্ত্রীর কেদারনাথ, বদ্রীনাথে যাওয়ার কথা। গুহাতে নাকি ধ্যানও করবেন। তার আগে আজ হঠাৎ বিজেপি দফতরে কেন? আর যে সময়ে আসছেন, তখনই অমিত শাহ সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বসে আছেন। তা হলে কি গত পাঁচ বছরের প্রথম সাংবাদিক বৈঠকটি আজ করবেন মোদী? রাহুল গাঁধীর চ্যালেঞ্জ কবুল করেই কি শেষ দিনের চমকটি দিতে চলেছেন তিনি?

Advertisement

ঘড়িতে তখন বিকেল ৪ টে বেজে ২৭ মিনিট। যাবতীয় জল্পনা সত্যি করে প্রধানমন্ত্রী বিজেপি দফতরে সাংবাদিক বৈঠকের ঘরে এলেন অমিত শাহের সঙ্গে। ভোট প্রচারে একান্ত সাক্ষাৎকার অনেক দিয়েছেন মোদী। তার অনেকগুলির প্রশ্ন আগেভাগে জানানো ছিল বলে অভিযোগ রাহুলদের। কিন্তু এ বার তো সত্যিই প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে বসলেন খোলা সাংবাদিক বৈঠকে। চার দিক থেকে পাঁচ বছরের জমানো প্রশ্ন আসবে, আর তিনি উত্তর দেবেন।

ঠিক তখনই আকবর রোডে এআইসিসি দফতরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি রাহুল। গত পাঁচ বছরে যিনি ৪৫টি সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। অগুনতি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। আজও তার অন্যথা হল না। তাঁর কাছে প্রথম প্রশ্নই এল, ‘‘আজ প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করছেন। কী বলবেন?’’ রাহুল বললেন, ‘‘ভেরি গুড। বহুত বড়িয়া। ভেরি ইম্প্রেসিভ।’’

তার সঙ্গেই জুড়লেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সাংবাদিক বৈঠক শেষ ভোটের ক’দিন আগে হল। কিন্তু শুনলাম দলের সভাপতির সঙ্গে এসেছেন। অভূতপূর্ব। আমি বললাম, আমাদের এ দিক থেকেও ২-৩ জন সাংবাদিককে পাঠিয়ে দিন। রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা জানালেন, পিছনের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিজেপি দফতরে। আর সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তা প্রধানমন্ত্রী যখন সাংবাদিক সম্মেলন করছেন, তখন আমিও প্রশ্ন করে ফেলি। প্রধানমন্ত্রীজি আমার সঙ্গে রাফাল বিতর্কে কেন বসেননি? অনিল অম্বানীকে কেন বায়ুসেনার ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন? রাফাল নিয়ে ভয় পাচ্ছেন কেন?’’

কিন্তু প্রায় সাত কিলোমিটার দূর থেকে রাহুলের প্রশ্ন নেওয়া দূরস্থান। সামনে বসা সাংবাদিকদের একটিও প্রশ্ন নিলেন না প্রধানমন্ত্রী।

প্রথমে অমিত শাহ মিনিট কুড়ি মোদী-বন্দনা করলেন। তার পর মোদী একতরফা শোনালেন নিজের কিছু কথা। বললেন, শুধু ধন্যবাদ জানাতেই এসেছেন। তার পর স্পষ্ট ঘোষণা করে দেওয়া হল, যা প্রশ্ন তা বিজেপি সভাপতিকেই করতে হবে। তবু প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কিছু প্রশ্ন এল। কিন্তু মোদী অমিত শাহের দিকে সে প্রশ্ন ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘আমি দলের শৃঙ্খলাবদ্ধ সৈনিক। দলের সভাপতিই আমাদের কাছে সব।’’

রাহুল যে প্রশ্ন করেছেন তা-ও তত ক্ষণে পৌঁছে গিয়েছে সাংবাদিকদের হাতে। সেটি করাও হল। কিন্তু মোদীর বদলে উত্তর দিলেন অমিতই। মোদী শুধু মুখ টিপে হাসলেন। অমিত বললেন, ‘‘রাফাল নিয়ে রাহুল গাঁধীর কাছে তথ্য থাকলে তিনি সুপ্রিম কোর্টকে জানাতে পারতেন। এ তো ভিত্তিহীন অভিযোগ। রাফাল চুক্তিতে কোনও আপস করা হয়নি, কাউকে সুবিধা দেওয়া হয়নি, এক পয়সার দুর্নীতি
হয়নি। আমাদের নেতা এমন নন।’’

৫৪ মিনিট ধরে গোটা সাংবাদিক বৈঠক হয়েছে। তার মধ্যে মোদী নিজের কথা বলেছেন ১২ মিনিট। বাকি ৪২ মিনিট কখনও গালে হাত দিয়ে কখনও মাথা ঝুঁকিয়ে, কখনও উপরের দিকে কঠোর দৃষ্টিতে চুপটি করে রইলেন। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠল রাজধানীতে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়াল বিদ্রূপ। এটি কি আদৌ মোদীর প্রথম সাংবাদিক বৈঠক ছিল? না কি সাংবাদিক বৈঠকের মঞ্চে অতিথির ভূমিকায় এলেন? আরও দশটি বিষয়ের মতো এটিও কি আর একটি ‘জুমলা’? নাকি আম কী করে খান, এমন ‘অরাজনৈতিক’ প্রশ্ন করা হয়নি বলেই ‘নীরব’ রইলেন মোদী?

নিজের সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল এ সব নিয়েই কটাক্ষ করলেন। বললেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী কোন দুনিয়ায় থাকেন, জানি না। অমিত শাহের সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠক করতে এসেছেন। তাঁকে তো এত দিন প্রশ্ন করা হত, আম কী করে খান, কুর্তা কেটে কী করে পরেন? আর আমাকে কড়া প্রশ্ন করা হয়। ন্যায়ের টাকা কোথা থেকে আসবে?’’

তবে তাঁকে ‘পরিণত’ করে তোলার জন্য এ দিন সাংবাদিকদের ধন্যবাদ দিয়েছেন রাহুল। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন যে আমার সাংবাদিক বৈঠক এখন আগের থেকে কত ভাল হয়েছে। আপনারাই আমাকে উন্নত হতে সাহায্য করেছেন। আপনারা আমার গুরু। আপনারাই আমাকে শিখিয়েছেন। আপনাদের ধন্যবাদ।’’ এআইসিসি দফতর থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাহুল জানতে পারেন, সাংবাদিক বৈঠকে কোনও প্রশ্নেরই জবাব দেননি মোদী। নিজের সাংবাদিক বৈঠকে চার বার টেবিল চাপড়ে কংগ্রেস সভাপতি বলেছিলেন, ‘‘ইনি দেশের প্রধানমন্ত্রী! ফ্যানটাসটিক!’’ আর এই খবর শুনে টুইট করলেন, ‘‘অভিনন্দন মোদীজি। অসাধারণ সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। মঞ্চে আসাটাই লড়াইয়ের অর্ধেক। এর পরের বার মিস্টার শাহ নিশ্চয়ই আপনাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অনুমতি দেবেন। ওয়েল ডান!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement