‘দুর্যোধন’ মন্তব্য নিয়ে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী-অমিত শাহর বাগযুদ্ধ। —ফাইল চিত্র
লোকসভা ভোট যেন মহাভারতের যুদ্ধ। কুরু-পাণ্ডবদের কুরুক্ষেত্রের পৌরাণিক মহারণ। কিন্তু এই যুদ্ধে কোন পক্ষ পাণ্ডব আর কারা যে কৌরব, সেটা নিয়েই মঙ্গলবারের ভোট প্রচারে চলল বাগযুদ্ধ, রাজনৈতিক তরজা। হরিয়ানার হিসারে ভোট প্রচারে নরেন্দ্র মোদীকে ‘দুর্যোধন’ বলে বান ছুড়লেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। অহঙ্কারীকে দেশ ক্ষমা করে না বলে সাবধানবাণীও করলেন প্রিয়ঙ্কা। তার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই উল্টো শিবির থেকে উড়ে এল অমিত শাহের তির, ‘‘২৩ মের পরই বোঝা যাবে, কে দুর্যোধন আর কে অর্জুন।’’ সব মিলিয়ে মঙ্গলবারের ভোটপ্রচারে জমজমাট ‘দুর্যোধন’ পর্ব।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীকে ‘ভ্রষ্টাচারী নম্বর ১’ বলে আক্রমণ করেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। মোদীর এই ব্যক্তিগত আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছে বিরোধী শিবিরের প্রায় সব দল। রাজীবপুত্র রাহুল অবশ্য গাঁধীগিরির রাস্তাতেই প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু তার পরও এ দিন রাজ্যে এসে ফের সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে মোদীকে সমর্থন করেছেন অমিত শাহ। তাঁর বক্তব্য, রাজীবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অন্যায় কিছু বলেননি মোদী। মঙ্গলবারও বোফর্স কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ তুলে খোঁচা দেন অমিত।
অন্য দিকে বাবা রাজীবের প্রতি মোদীর এই ‘অসম্মান’-এর জবাব দিতে গিয়েই মহাভারতেরপ্রসঙ্গ টেনে আনলেন প্রিয়ঙ্কা। মোদীকে বিদ্ধ করলেন ‘ঔদ্ধত্য’র তিরে। হিসারের সভায় কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘দুর্যোধনের পতনের কারণ ছিল তাঁর অহঙ্কার, তাঁর ঔদ্ধত্য। অন্য কোনও ইস্যু না পেয়ে এখন ওরা (বিজেপি) আমার পরিবারকে অপমান করছে। এই দেশ কখনও অহঙ্কারীকে কখনও ক্ষমা করেনি। ইতিহাস তার প্রমাণ। মহাভারতেও তার প্রমাণ রয়েছে। এই ধরনের ঔদ্ধত্যই ছিল দুর্যোধনের। এমনকি, কৃষ্ণ যখন তাঁর কাছে গিয়েছিলেন এবং সত্য বোঝানোর চেষ্টা করেন, তখন তাঁকেই বধ করার চেষ্টা করেন দুর্যোধন।’’
কে এই দুর্যোধন? পৌরাণিক মহাকাব্য মহাভারতের প্রধান খলনায়ক চরিত্র এবং পাণ্ডবদের ১০০ ভাইয়ের নেতা দুর্যোধনকে দেখানো হয়েছে অত্যাচারী, অহংকারী, ঔদ্ধত্যপূর্ণ রাজপুত্র হিসেবে। হস্তিনাপুর সাম্রাজ্যের প্রকৃত উত্তরাধিকারী পাণ্ডবরা পাঁচ ভাই হলেও দুর্যোধন মনে করতেন তিনিই সিংহাসনে বসার দাবিদার এবং যোগ্য। এবং সেই মতো হস্তিনাপুরের দখল চান তিনি। কিন্তু তাঁর ধূর্ততা, ঔদ্ধত্য আর অহংকার শেষ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন: ’৯৬ ফরমুলায় দক্ষিণী আবেগে ফের তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের চেষ্টা! সাড়া পাচ্ছেন না কেসিআর
আরও পডু়ন: গ্রামের পর গ্রাম যেন জাতপাত রসায়নের পরীক্ষাগার, উন্নয়নের রং ফিকে
এই দুর্যোধনের সঙ্গেই এ দিন কার্যত মোদীকে সমার্থক হিসেবে প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন প্রিয়ঙ্কা। উল্টো দিকে এ দিন ভোট প্রচারে পশ্চিমবঙ্গে ছিলেন অমিত শাহ। ঘাটাল, মেদিনীপুর এবং বিষ্ণুপুরে তিনটি সভা করেন বিজেপি সভাপতি। প্রথম দুই সভার পর প্রিয়ঙ্কার ওই আক্রমণের খবর পান অমিত। এর পর বিষ্ণুপুরের সভাতেই তার জবাব দেন, তিনি বলেন, ‘‘কিছুক্ষণ আগেই প্রিয়ঙ্কা মোদীকে দুর্যোধন বলেছেন। কিন্তু প্রিয়ঙ্কাজি, এটা গণতন্ত্র। শুধু আপনি কাউকে বললেই তিনি দুর্যোধন হয়ে যান না। ২৩ মে লোকসভা ভোটের ফলাফলের পরই প্রিয়ঙ্কাকে উচিত শিক্ষা দেবেন ভোটাররা। তখনই বোঝা যাবে, কে দুর্যোধন আর কে অর্জুন। কংগ্রেসের কোনও অপমানই ভোটারদের মনোভাব পাল্টাতে পারবে না।’’
গত মাসেই মোদী-অমিত জুটিকে মহাভারতের দুই ভাই দুর্যোধন ও দুঃশাসনের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। প্রিয়ঙ্কা-মোদীর চাপান-উতোরে ফের সেই ‘দুর্যোধন’ প্রসঙ্গই ফিরে এল ভোটের কুরুক্ষেত্রে।