ঈশ্বর আত্মঘাতী, আসেননি কেউই

টেলিফোনে গলা ধরে আসছিল ঈশ্বরের বড় ছেলে অক্ষয়ের। উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারের ধাধেকি গ্রামে গত সোমবার ভোরে তাঁর বাবার মৃত্যুর পরে কেটে গিয়েছে তিন দিন।

Advertisement

চৈতালি বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৩৫
Share:

ঈশ্বরের পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।

বিকেলে পরিবারের সকলের সঙ্গে বসে চা খেয়েছিলেন। রাতের খাবারও একসঙ্গেই। ভোর তিনটেয় উঠে রোজকার মতো পুজোও করেছিলেন বছর ষাটেকের মানুষটি। তার পরে আর কেউ দেখেনি তাঁকে। ভোর ছ’টায় বাড়ির একটি ঘরে যখন তাঁর খোঁজ মিলল, তত ক্ষণে বিষে নীল হয়ে গিয়েছে শরীর। জমিতে দেওয়ার কীটনাশক গলায় ঢেলেছিলেন ঋণে জর্জরিত হরিদ্বারের কৃষক ঈশ্বরচন্দ শর্মা। হাসপাতালে যেতে যেতে ভোর সাড়ে ছ’টার মধ্যেই সব শেষ।

Advertisement

টেলিফোনে গলা ধরে আসছিল ঈশ্বরের বড় ছেলে অক্ষয়ের। উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারের ধাধেকি গ্রামে গত সোমবার ভোরে তাঁর বাবার মৃত্যুর পরে কেটে গিয়েছে তিন দিন। অথচ এই ক’দিনে তাঁদের সঙ্গে দেখাও করতে আসেননি স্থানীয় বিধায়ক কিংবা শাসক বিজেপির কোনও নেতা। অক্ষয় বলেন, ‘‘বাবার পকেট থেকে সুইসাইড নোট পেয়েছে পুলিশ। লেখা ছিল, পাঁচ বছরে বিজেপির সরকার চাষিদের শেষ করে দিয়েছে। চাষিরা যাতে বিজেপিকে ভোট না-দেন, সে কথাও লিখেছিলেন বাবা।’’ চাষের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে লাখ চারেক টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ঈশ্বর। অক্ষয়ের অভিযোগ, সেই ঋণ শোধের নাম করে তাঁর বাবাকে দিয়ে ফাঁকা চেকে সই করিয়ে নিয়েছিল অজিত সিংহ নামে এক এজেন্ট। সেই চেক বাউন্স করে, মামলা হয় ঈশ্বরের বিরুদ্ধে। এর উপরে কয়েক দিন আগে ঈশ্বরকে হুমকিও দিয়েছিল অজিত। এত চাপ সহ্য করতে না-পেরেই আত্মহত্যা।

ঋণগ্রস্ত চাষির আত্মহত্যায় অবশ্য ভোটের হাওয়া থমকায় না। শাসক-বিরোধী দলের জোরালো প্রচার শেষে আজই ছিল এখানকার ভোট। তবে ঈশ্বরের পরিবারের কেউই যাননি ভোট দিতে। মৃত চাষির ছোট ছেলে অরুণ জানান, তাঁদের পরিবারের এই বিপর্যয়ের পরে সব কিছুই অর্থহীন মনে হচ্ছে। তাই ভোট দিতে যাননি কেউ। তিনি বলেন, ‘‘কাল থানায় যাব। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, সেটা জানতে।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ময়না-তদন্ত, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ, অভিযুক্ত এজেন্টের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের-সহ নানা ঝামেলায় কেটে গিয়েছে তিনটে দিন। মৃত চাষির পরিবারে শোক এখন পরিণত হয়েছে ক্লান্তিতে। বছর ছত্রিশের অক্ষয়ের গলায় ক্ষোভ। বলেন, ‘‘এত বড় একটা ট্র্যাজেডি ঘটে গেল আমাদের সঙ্গে। সান্ত্বনা দেওয়া তো দূরের কথা, কেউ এক বার দেখাও করতে এল না। আমার বাবা যে চলে গেল, তাতে কারও কিছু যায়-আসে না।’’

ছোটখাটো একটা চাকরি করেন অক্ষয়। দুই ভাইয়ের সংসারে পাঁচ সন্তান। চাষে আয় নেই। উপরন্তু ঋণের বোঝা। দিন চলে টেনেটুনে। এ দিকে বাচ্চাদের স্কুলের খরচ আছে। ব্যাঙ্ক ঋণ শোধ করতে প্রয়োজনে জমি-বাড়ি বেচা ছাড়া আর পথ দেখছেন না অক্ষয়। তাঁর মতে, কোনও সরকারের আমলেই চাষিরা আসলে ভাল ছিলেন না, আজও নেই। ‘‘কংগ্রেসের আমলে চাষিদের কী অবস্থা ছিল, সকলে দেখেছেন। সেই হাল আরও খারাপ হয়েছে। এখন সবাই ভোট নিয়ে ব্যস্ত। ব্যাঙ্কও চুপ করে আছে। ভোটটা মিটতে দিন। দেখবেন, রোজ কত কত চাষির আত্মহত্যার খবর পাবেন।’’

ভোট-ভারতে আত্মঘাতী চাষির ছেলে বলে চলেন ফোনে। মাঝে মাঝে শুধু কেঁপে যায় গলাটা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement