‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ সত্ত্বেও সেনাদের রক্ত নিয়ে রাজনীতি করছেন মোদী’

সেনাবাহিনীর নাম করেই বিজেপির জন্য সরাসরি ভোট চাইলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তাতেই বাধল বিতর্ক। আঙুল তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

দেবাশিস চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৩৮
Share:

মোদীর এ দিনের বক্তৃতায় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মানা হয়নি বলে অভিযোগ মমতার। ছবি: পিটিআই এবং এএফপি।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারে দেশের সেনাবাহিনীর উল্লেখ করলে অত্যন্ত সতর্ক ভাবেই তা করতে হবে। কিন্তু সেই সেনাবাহিনীর নাম করেই বিজেপির জন্য সরাসরি ভোট চাইলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তাতেই বাধল বিতর্ক। আঙুল তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করার প্রস্তুতিও চালাচ্ছে তৃণমূল।

Advertisement

বুধবার এই রাজ্যে তাঁর প্রথম নির্বাচনী সভায় মোদী বলেন, ‘‘শুধু বিজেপি সাংসদদের জেতানোর জন্য নয়, শুধু নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য নয়, দেশের সেনা ও আধাসেনার সম্মান রক্ষায় বিজেপিকে ভোট দিন।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ বারের ভোটে দুই পক্ষ— এক দিকে ইমানদার চৌকিদার, অন্য দিকে দাগিদার (কলঙ্কিত)।’’

শিলিগুড়িতে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তৃতার পরেই মমতা কোচবিহারের দিনহাটায় তাঁর নির্বাচনী সভায় পাল্টা তোপ দাগেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ সত্ত্বেও সেনাদের রক্ত নিয়ে রাজনীতি করছেন মোদী।’’ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘গোয়েন্দা রিপোর্ট তো ছিল। তার পরেও আগাম কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি পুলওয়ামায়? তবে কি রাজনীতির জন্য এত জন জওয়ানকে ঠেলে দেওয়া হল মৃত্যুর মুখে?’’ সেনার উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, ‘‘আপনারা নিরপেক্ষ থাকুন।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ভোটের মুখে পুলওয়ামা-কাণ্ড থেকে বালাকোটে বায়ুসেনার অভিযান— এ-সবই রাজনৈতিক আবহ দ্রুত বদলে দেয়। এক দিকে বিজেপি দেশপ্রেমের প্রচার শুরু করে। অন্য দিকে বিরোধীরা অভিযোগ তোলে, বালাকোট অভিযানে পাকিস্তানে ক্ষয়ক্ষতির ‘প্রকৃত’ তথ্য প্রকাশ্যে না-এনে সরকার কিছু লুকোতে চাইছে। তা নিয়ে শুরু হয় রাজনীতি।

কিন্তু দেশের সুরক্ষা বাহিনীর দায়বদ্ধতা ও মর্যাদার কথা মাথায় রেখে নির্বাচন কমিশন ৯ মার্চ নির্দেশ জারি করে রাজনৈতিক দলগুলিকে বলে প্রচারের সময় সেনা ও সুরক্ষা বাহিনীর নাম জড়ানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। এমনকি, কোনও নির্বাচনী প্রচারে জওয়ানদের কোনও ছবিও ছাপা যাবে না। মোদীর এ দিনের বক্তৃতায় সেই নির্দেশ মানা হয়নি বলে অভিযোগ মমতার।

এই রাজ্যে মোদী ও মমতা দু’জনেরই নির্বাচনী প্রচার শুরু হয় এ দিন। মোদী দুপুরে সভা করেন শিলিগুড়ির কাওয়াখালিতে। বিকেলে ব্রিগেড ময়দানে। দুই সভাতেই পুলওয়ামা থেকে বালাকোট— সব প্রসঙ্গ তোলেন মোদী।

মমতার সভা ছিল দিনহাটায়। তিনি মোদীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগের পাশাপাশি ফের প্রশ্ন তোলেন, ‘‘দেশের সেনা বাহিনীকে মোদী সেনা বলা হচ্ছে কোন যুক্তিতে? সেনা মোদীর হয় কী ভাবে?’’ উল্লেখ্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সম্প্রতি দেশের সেনাকে ‘মোদী সেনা’ বলেছেন। মমতার বক্তব্য, ‘‘এক জন জওয়ানের সম্মান অনেক বেশি। মোদীর সেনা তো দাঙ্গা করে। তারা লুটেরা। আর দেশের সেনারা প্রাণ দেন।’’ শিলিগুড়ির সভায় সেনা প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের সুপুত্ররা বালাকোটে জঙ্গিদের ঘরে ঢুকে মেরেছে। তাতে কাঁদার কথা পাকিস্তানের, কিন্তু কেঁদেছেন দিদি। ওখানে চোট আর এখানে আপনাদের এত কষ্ট! ইসলামাবাদ, লাহৌর, রাওয়ালপিন্ডিতে যত কষ্ট, তার চেয়ে বেশি কষ্ট কলকাতায়।’’

কংগ্রেসের আফস্পা সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মোদীর বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে বাহিনীর মনোবল ভেঙে যাবে।’’ মোদী বলেছেন, ‘‘সেনাদের রক্ষাকবচ তুলে দেওয়ার কথা বলছে কংগ্রেস। ওরা সন্ত্রাসবাদকে মদত দিচ্ছে। সীমান্তের চৌকিদারদের উপরেও ওদের রাগ।’’

সেনা নিয়ে মোদীর কথার বিরোধিতা করেছে কংগ্রেস এবং সিপিএম-ও। কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রের বক্তব্য, ‘‘মোদীর শাসনে সব চাইতে বেশি নিহত হযেছেন সেনা। সেনার রক্ত নিয়ে আগে কোনও প্রধানমন্ত্রী এমন রাজনীতি করেননি। বিরোধীদের পাকিস্তানি সাজানোর চেষ্টা দেউলিয়া রাজনীতির প্রকাশ।’’

সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘দেশের সেনাবাহিনীকে নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন তোলেনি। উনিই (প্রধানমন্ত্রী) বরং সেনার কৃতিত্বকে নিজের বলে জাহির করেছেন। যা বলছেন আর যা করছেন, তার মধ্যে বিস্তর ফারাক। দিল্লিতে কোনও দেশদ্রোহী সরকার যদি থেকে থাকে, তা হলে সেটা ওঁর সরকারই! নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের বিচার এক দিন হবেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement