—ফাইল চিত্র।
৫৫ মিনিটের বক্তৃতা। তা-ও আগে থেকে লেখা। টেলিপ্রম্পটারে ভেসে উঠছে নরেন্দ্র মোদীর সামনে। তার মধ্যেই সুকৌশলে মেরুকরণ উস্কে দেওয়া চারটি প্রশ্ন গুঁজে রাখা।
মহাভেজালের জোট সরকার জঙ্গিদের আশ্রয় দিত কি দিত না? জঙ্গিদের জাত-বিচার করে বাঁচাবেন না সাজা দেবেন, ঠিক হত কি হত না?
এসপি-র আমলে দাঙ্গায় ঘর ছেড়ে পালাতে হয়েছে কি হয়নি? দেশে ভারতের হিরো চাই না পাকিস্তানের?
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মেরঠে নরেন্দ্র মোদীর শেষ লগ্নের প্রথম ভোট সভা। মাঠ ভরেনি। কিন্তু এই এলাকায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যোগী আদিত্যনাথ গত ক’দিন ধরে যা করে আসছিলেন, আজ করলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। মায়াবতী-অখিলেশ-রাহুল গাঁধীদের কাঠগড়ায় তুলে সুকৌশলে খেললেন মেরুকরণের তাস! সেই সঙ্গে এসপি-আরএলডি-বিএসপি জোটকে ‘শরাব’ অ্যাখ্যা দিয়ে বিতর্ক বাধালেন।
মোদীর ‘সাফল্যের’ ভাঁড়ারে এখন শুধুই সার্জিকাল স্ট্রাইক। সে কথা টেনে প্রথমেই বললেন, ‘‘এই মহাভেজালের জোট পাকিস্তানের ‘হিরো’ হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। স্ট্রাইকের প্রমাণ চাইছে। কিন্তু ‘সবুত’ (প্রমাণ) চাই, না ‘সপুত’ (যোগ্য সন্তান, এক্ষেত্রে সেনা) চাই?’’ সেই সঙ্গেই প্রশ্ন, ‘‘সার্জিকাল স্ট্রাইকে কোনও গরমিল হলে দায় কার হত?’’ জনতা বলল, ‘‘মোদী’’। হেসে চুপ থেকে মোদী বোঝালেন, কৃতিত্বটা তাঁরই। এর পরেই টেনে আনলেন দাঙ্গা, তিন তালাক, জঙ্গিদের জাত-বিচারের কথা। উত্তরপ্রদেশে যে জোট মোদীকে চাপে রেখেছে, তাকে নিশানা করাই ছিল এ দিন প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য ছিল।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
প্রয়াত কৃষক নেতা চৌধরি চরণ সিংহের গুণ গেয়ে বারবার বিঁধলেন মায়াকে। ‘বহেনজি’র নাম নিয়ে বললেন, ‘‘যে দলের নেতাকে জেলে পাঠানোর জন্য বহেনজি জীবনের দুই দশক সময় কাটালেন, তাঁদের সঙ্গেই হাত মেলালেন! যে দলের নেতা বহেনজিকে গেস্ট হাউসে খতম করতে চেয়েছিলেন, আজ তাঁরাও সঙ্গী! গত ভোটে দুই ‘লড়কা’ (রাহুল গাঁধী-অখিলেশ) থেকে বুয়া-বাবুয়া হল দ্রুততার সঙ্গে। কিন্তু বোর্ড বদলালেও দোকান বদলায় না।… এসপি-আরএলডি-বিএসপি আসলে ‘শরাব’ (মদ)। ভাল স্বাস্থ্যের জন্য ‘শরাব’ থেকে দূরে থাকা উচিত কি না?’’
অখিলেশের পাল্টা , ‘‘এসপি-আরএলডি-বিএসপি নিয়ে ‘শরাব’ নয়, ‘সরাব’ হয়।’’ টুইটে লিখলেন, ‘‘আজ টেলিপ্রম্পটার মুখোশ খুলেছে। ঘৃণার নেশায় মত্তরা ‘শরাব’ আর ‘সরাব’-এর ফারাক জানেন না। ‘সরাব’কে মৃগতৃষ্ণাও বলে। এ এমন মরীচিকা, যেটি পাঁচ বছরে বিজেপি দেখিয়েছে, কিন্তু কাজ করেনি। ফের দেখাচ্ছে!’’ আর মায়াবতী বললেন, ‘‘পদের মর্যাদা খুইয়ে প্রধানমন্ত্রী আজ যে কথা বললেন, সেটি তাঁর ভয় ও জাতিবাদী বিকৃত মানসিকতারই পরিচয়। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি থেকে মুক্তির জন্যই আমাদের জোট হয়েছে। ১৫ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক খাতে কিংবা কৃষকের আয় দ্বিগুণের হিসেব না দিয়েই চৌকিদার পালালেন!’’
দিল্লিতে কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বললেন, ‘‘মায়াবতীজিদের সঙ্গে আমাদের বিচারধারার বিরোধিতা থাকতে পারে, কিন্তু তাঁদের জোটকে মদের সঙ্গে তুলনা করা আসলে প্রধানমন্ত্রীর ঔদ্ধত্যের নেশা। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী এই মেরঠে গিয়েই আখ চাষিদের বকেয়া মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দু’বছরেও তা পূর্ণ করেননি। আজও গিয়ে ফের প্রতিশ্রুতি দিলেন। বিদায়ের দেওয়াল লিখন তিনি পড়তে পারছেন।’’