ভোটের মুখে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগানের অভিমুখ ঘোরাতেই ব্যস্ত প্রধানমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।
পাঁচ বছর আগে স্বপ্ন ফিরি করতেন নরেন্দ্র মোদী। সেই স্বপ্ন দেখিয়েই এসেছিলেন ক্ষমতায়।
পাঁচ বছর পর আজ বললেন, যদি ফের ক্ষমতায় আসেন, তা হলে সেই স্বপ্নপূরণের কাজে এ বারে হাত দেবেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তা হলে গত পাঁচ বছরে তিনি করলেন কী? তার একটি জবাব অবশ্য প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। বলেছেন, গর্ত ভরতেই অনেকটা সময় চলে গিয়েছে। যেখানে যাঁর যা প্রয়োজন ছিল, সেগুলিই পূর্ণ করার চেষ্টা করেছেন। কোথাও শৌচালয় নেই, করেছেন। রাস্তা নেই, রেল লাইন নেই, জল নেই, বিদ্যুৎ নেই, বাস নেই, বিমানবন্দর নেই— সেগুলি পূরণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সে কাজেও যে ‘খামতি’ থেকে গিয়েছে, সেটিও কবুল করলেন। সঙ্গে জুড়লেন, ‘‘আগামী পাঁচ বছর সেই খামতি পূরণ করব। আর মানুষের স্বপ্নপূরণের কাজে হাত দেব।’’
উপলক্ষ ছিল ‘আমিও চৌকিদার’ অনুষ্ঠান। রাফালে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগানটি জনপ্রিয় করে তুলেছেন রাহুল গাঁধী। ভোটের মুখে সেই স্লোগানের অভিমুখ ঘোরাতেই ব্যস্ত প্রধানমন্ত্রী। নিজের ঘাড় থেকে দায় ঝেড়ে গোটাটাই ভাগ করে দিতে চেয়ে সকলকেই ‘চৌকিদার’ হতে বলছেন। রাহুলের গুঁতোতেই আজ অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ, সুষমা স্বরাজ, যোগী আদিত্যনাথদের দেশের নানা প্রান্তে বসিয়ে ভিডিয়ো মাধ্যমে নব্য ‘চৌকিদার’দের সঙ্গে আলাপচারিতা করলেন। আর নিজে থাকলেন দিল্লিতে, তালকাটোরা স্টেডিয়ামে। সেখানে পরতে পরতে নাম না করে বিঁধলেন রাহুল গাঁধীকেই। কংগ্রেসের সভাপতি যে বিস্তর চাপে রেখেছেন, মোদীর সব কথাতেই ফুটে উঠল সেটি।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
নাম না করে রাহুলকে বললেন, ‘‘কিছু লোকের বুদ্ধি বাড়ে না।’’ জনতা বলে উঠল, ‘‘পাপ্পু।’’ মোদী বললেন, ‘‘চৌকিদার বলতে কিছু লোক ভাবেন, হাতে লাঠি, মুখে হুইসেল, পরনে ইউনিফর্ম। কিন্তু চৌকিদার সকলে। গ্রাম, শহর, স্ত্রী, পুরুষ, শ্রমিক, চিকিৎসক- সকলে।’’ সংসদে রাহুলের আলিঙ্গন নিয়েও কটাক্ষ করলেন। বললেন, ‘‘কিছু লোক গলায় পড়ে যান।’’ পাকিস্তান নিয়ে বলতে গিয়ে বললেন, ‘‘বুদ্ধিমান লোকেরা মোদীকে গালি দিতে দিয়ে পাকিস্তানকে সাহায্য করছেন। মহাকাশে ক্ষেপণাস্ত্র বিষয়টি কী, সেই সামান্য বুদ্ধিও নেই।’’ রাফাল কেনার অঙ্ক নিয়ে রাহুলের আক্রমণের প্রসঙ্গ ঘুরপথে তুলে বললেন, ‘‘মিথ্যে বলতে হয় বলেই সঠিক অঙ্ক মনে থাকে না।’’ ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলার ইঙ্গিত দিয়ে রাহুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তুললেন। বিরোধীদের কটাক্ষ করে বললেন, ‘‘২০১৪তেও অনেকে প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিল। এ বারে লাইনটা বড় হয়েছে।’’
আসলে রাহুলের একের পর এক অভিযোগের ধাক্কায় এমনিতেই বেকায়দায় থাকা মোদীর সমস্যা বাড়িয়েছে রাহুলের ‘ন্যায়’ প্রকল্প। সে কারণে আজ এ নিয়ে অনেক কথা বলতে হল তাঁকে। ক্ষমতায় এলে প্রতি গরিব পরিবারকে মাসে ৬ হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাহুল। মোদী বললেন, ‘‘চার প্রজন্ম ধরে গরিবি-হঠাও স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। স্লোগান যত বেড়েছে, দারিদ্রও। ক্ষমতায় আসবে না জেনে ফের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।’’ রাহুল রোজ তাঁর জনসভায় বলছেন, ‘‘মোদী বছরে ২ কোটি রোজগার দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কালো টাকা ফেরত এনে প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক খাতে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। আমার সেই আইডিয়া ভাল লেগেছে। সে কারণে দলকে বলি, গরিবের ব্যাঙ্ক খাতে কত দেওয়া যায়? হিসেব কষে দেখা গিয়েছে, প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা দেওয়া যাবে। ফলে মোদীর মতো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি নয়। যেটি দেওয়া সম্ভব, সেটিই বলছি। আর আমি যা বলি, সেটিই করি।’’ সেই সঙ্গেই খেললেন সহানুভূতি-তাস। বললেন, ‘‘আমার আগেপিছে কেউ নেই, কোনও চিন্তা রাখিনি।’’
এক কংগ্রেসের নেতা আজ বলেন, ‘‘ভোটের মুখে নিজের ব্যর্থতা কবুল করলেন প্রধানমন্ত্রী। ন্যায় প্রকল্পের হিসেব আমাদের কষা আছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একটিও প্রতিশ্রুতি পালন করেননি। ২০২২-এ কৃষকদের আয় কী করে দ্বিগুণ করবেন, সে হিসেব দেননি। তাঁর বিদায় এ বার নিশ্চিত।’’