লালকৃষ্ণ আডবাণী।
নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা যে ভাবে তাঁকে উপেক্ষা করে প্রার্থী না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে রুষ্ট বিজেপির প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী।
তিন দিন আগে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে বিজেপি জানায়, গুজরাতের গাঁধীনগর আসন থেকে আডবাণীর পরিবর্তে এ বারে প্রার্থী হবেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। তিন দিন পরেও এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি আডবাণী। কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, যে পদ্ধতিতে তাঁকে প্রার্থী না করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে রুষ্ট এই প্রবীণ নেতা। আডবাণীর ঘনিষ্ঠ শিবিরের মতে, মোদী কিংবা অমিত শাহের মতো কোনও নেতা নন, দলের সংগঠনের দায়িত্বে থাকা রামলালকে পাঠানো হয়েছিল আডবাণীর কাছে। আডবাণীকে অনুরোধ করা হয়, তিনিই যেন ভোটে না লড়ার কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু মোদী-শাহদের উপেক্ষায় রুষ্ট আডবাণী তাতে রাজি হননি।
আডবাণী-ঘনিষ্ঠ শিবিরের বক্তব্য, মোদী-শাহ জুটি এ বারে স্থির করেছেন ৭৫ বছরের উপরের কোনও নেতাকে ভোটে প্রার্থী করা হবে না। সেই মতো রামলালকে দায়িত্ব দেওয়া হয় আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশী, কলরাজ মিশ্র, শান্তা কুমার, কারিয়া মুণ্ডা, ভুবন চন্দ্র খাণ্ডুরির মতো প্রবীণ নেতাকে বোঝানোর। সকলকেই একই প্রস্তাব দেওয়া হয়, তাঁরা নিজেরাই ভোটে না লড়ার কথা ঘোষণা করুন। প্রস্তাব মেনে কলরাজ মিশ্র, শান্তা কুমারের মতো নেতারা ঘোষণা করেন যে তাঁরা ভোটে লড়বেন না। কিন্তু আডবাণী তা করেননি। মুরলী মনোহর জোশীও এখনও পর্যন্ত
প্রকাশ্যে কিছু বলেননি।
বিজেপির প্রার্থী তালিকায় আডবাণী, শান্তা কুমার, কারিয়া মুণ্ডার নাম ইতিমধ্যেই বাদ গিয়েছে। খাণ্ডুরির মেয়ে রাজনীতিতে এসেছেন। ছেলে অবশ্য রাহুল গাঁধীর হাত ধরেছেন। আর এক প্রবীণ নেতা হুকুম দেব নারায়ণের বদলে তাঁর ছেলেকে প্রার্থী করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশের ইন্দৌর কেন্দ্রের প্রার্থীও ঘোষণা হয়নি। সেখানকার সাংসদ লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন এই বছরেই পঁচাত্তরে পা দিচ্ছেন। বিজেপির এক নেতার মতে, ভোটে জয়কেই সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যাঁদের জেতা সম্ভব নয়, তাঁদের আগেভাগেই জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
দার্জিলিংয়ের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে যেমন বলা হয়েছে, তিনি পশ্চিমবঙ্গের ওই আসন থেকে যে লড়তে চান না, তা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিতে হবে। এ দিন তিনি তা জানিয়েও দেন। জয়ের অঙ্ক মাথায় রেখে প্রবীণদের পাশাপাশি নবীনদেরও অনেককে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। যেমন আজই প্রকাশিত সর্বশেষ তালিকায় ছত্তীসগঢ়ের সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের ছেলে অভিষেকের নাম বাদ পড়েছে।
পঁচাত্তর থেকে দূরে থাকলেও সুষমা স্বরাজ, উমা ভারতী আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা ভোটে লড়বেন না। উমা আজ বলেন, ‘‘বিজেপিকে আজকের জায়গায় নিয়ে আসার জন্য যাঁর কেন্দ্রীয় ভূমিকা আছে, তিনি লালকৃষ্ণ আডবাণী। দল আজ এই উচ্চতায় এসেছে বলেই নরেন্দ্র মোদী আজ প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন। কিন্তু আডবাণীজিকে নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, সেটি একমাত্র তিনিই দূর করতে পারেন।’’ আডবাণীকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ায় দলীয় মুখপত্রে বিজেপিকে কড়া আক্রমণ করেছে শিবসেনা।