Lok Sabha Election 2019

’৯৬ ফর্মুলায় দক্ষিণী আবেগে ফের তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের চেষ্টা! সাড়া পাচ্ছেন না কেসিআর

ইতিমধ্যেই কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে এ নিয়ে এক দফা বৈঠকও করে এসেছেন কেসিআর।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৯ ১৭:২৬
Share:

বৈঠকের আগে কেসিআর-কে স্বাগত জানাচ্ছেন পিনারাই বিজয়ন। ছবি: টুইটার থেকে

লোকসভা ভোটের আগে অকংগ্রেস-অবিজেপি জোটের ডাক দিয়ে তেমন সাড়া পাননি। এ বার ফল ঘোষণার মুখে এসে দক্ষিণী ভাবাবেগ উস্কে নতুন করে তোড়জোড় শুরু করলেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর)। ১৯৯৬ ফর্মুলায় ছোট ছোট দলগুলিকে এক জোট করে কংগ্রেস এবং বিজেপিকে ছাড়াই সরকার গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন কেসিআর। যদিও এ বারও তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস) সুপ্রিমোর উদ্যোগকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধানরা। এমনকি, খোদ দক্ষিণের রাজ্যগুলিও কেসিআর-এর সূত্রকে বিবেচনায় রাখছে না বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। ডিএমকে সূত্রে খবর, ‘অন্য কাজে ব্যস্ত’ বলে কেসিআর-কে এড়িয়ে গিয়েছেন দলের সুপ্রিমো স্ট্যালিন।

Advertisement

টিআরএস সূত্রের খবর, নিজের ভোট বিশ্লেষণে কেসিআর মনে করছেন, এ বার কংগ্রেস বা বিজেপি কেউই একক ভাবে সরকার গঠন করার মতো আসন পাবে না। এমনকি, জোট শরিকদের নিয়েও সরকার গঠন করতে পারবে না। আর কেসিআর-এর কাছে এটাই মোক্ষম সুযোগ। সেই সুযোগ নিয়েই ১৯৯৬ ফরমুলা উস্কে দিয়েছেন কেসিআর। অর্থাৎকংগ্রেস ও বিজেপিকে বাইরে রেখে ছোট ছোট দল মিলে সরকার গঠন করা হবে। সেই সঙ্গেই তাঁর প্রস্তাব, প্রধানমন্ত্রী হবে দক্ষিণের কোনও রাজ্য থেকে।

ইতিমধ্যেই কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে এ নিয়ে এক দফা বৈঠকও করে এসেছেন কেসিআর। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে দক্ষিণী প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব দিয়ে এসেছেন কেসিআর। সুযোগ বুঝে রাহুল যে তাঁর রাজ্যেই ওয়েনাড কেন্দ্র থেকে লড়ছেন, সেই বিষয়টিও পিনারাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে এসেছেন তিনি। উল্টো দিকে কেরলের বাম নেতৃত্ব সূত্রে খবর, সরাসরি নিজে উড়িয়ে না দিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছেন পিনারাই। তিনি বলেছেন, ২৩ মে ফল ঘোষণার পর দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

Advertisement

তামিলনাড়ুর শাসক দল ডিএমকে প্রধান স্ট্যালিনের সঙ্গেও বৈঠক করতে চেষ্টার কসুর করেননি কেসিআর। এমনকি, ১৩ মে বৈঠকের দিনক্ষণ পর্যন্ত ঘোষণা করে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু স্ট্যালিন তাঁর প্রতিনিধির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন, ওই বৈঠক হচ্ছে না। অজুহাত হিসাবে দেখিয়েছেন, ভোট প্রচারের ব্যস্ততা। স্ট্যালিনের এই জবাব পাওয়ার পরই কেসিআর-এর মেয়ে সাংসদ কে কবিতাও জানিয়ে দিয়েছেন, বৈঠকের কোনও দিনক্ষণ স্থির হয়নি। তবে উদ্যমে ভাটা না দিয়ে এর পর উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ মায়াবতী, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ওড়িশায় নবীন পট্টনায়কদের সঙ্গে ফের এক দফা বৈঠকের চেষ্টাও করছেন বলে টিআরএস সূত্রে খবর।

আরও পডু়ন: গ্রামের পর গ্রাম যেন জাতপাত রসায়নের পরীক্ষাগার, উন্নয়নের রং ফিকে

আরও পড়ুন: বিরোধীদের দাবি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে, গোনা হবে দুই শতাংশ ভিভিপ্যাটই

ভোটের আগে পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, অন্ধ্রপ্রদেশে তেলুগু দেশম পার্টি, দিল্লিতে আম আদমি পার্টি, উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী-মুলায়ম, বিহারে রাষ্ট্রীয় লোক দল, জম্মু কাশ্মীরে এনসি থেকে শুরু করে অধিকাংশ বিরোধী দল ফেডারেল ফ্রন্টের ছাতার তলায়। কলকাতা, দিল্লি, বিশাখাপত্তনমে যৌথ সভা হয়েছে। এই জোটের হয়ে দৌত্য করছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু। কিন্তু তাঁরই প্রতিবেশী তথা এক সময় একসঙ্গে থাকা রাজ্য তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কেসিআর সেই শামিল হননি। তিনি বরং অকংগ্রেস-অবিজেপি জোট গঠনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

কলকাতায় এসে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেসিআর। কিন্তু তৃণমূল সূত্রে খবর, কেসিআরের সঙ্গে সৌজন্যের খাতিরে বৈঠক করলেও তাঁকে কোনও আশ্বাস দেননি মমতা। অন্যান্য রাজ্যের পরিস্থিতি ছিল কার্যত আরও খারাপ। কারণ, অধিকাংশ নেতা-নেত্রীই যে কোনও অজুহাত দেখিয়ে টিআরএস সুপ্রিমোকে এড়িয়ে গিয়েছেন। আবার দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন কেসিআর। ফলে তাঁর অবস্থান বা বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের।

এই পরিস্থিতিতেই শুরু হয়েছিল লোকসভা ভোট। পাঁচ দফা ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। আর দু’দফা বাকি। তার পর ২৩ মে ফল ঘোষণা। সেই রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ চড়তেই ফের ময়দানে কেসিআর। এ বার নয়া হাতিয়ার দক্ষিণী ভাবাবেগ— ‘১৯৯৬ ফর্মুলা’। এই সূত্রেই উস্কে দিয়েছেন ১১৯৬ সালে এইচ ডি দেবগৌড়ার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সেই সময়ের ইতিহাস।

কী হয়েছিল সেই সময়? ১৯৯৬ সালের লোকসভা ভোটই সম্ভবত এমন এক ফলাফল দিয়েছিল, যাতে এত নাটক, এত পট পরিবর্তন ভারতের ইতিহাসে আর কোনও ভোটে দেখা যায়নি। দু’বছরের কিছু বেশি সময়ের সরকারে ভারত পেয়েছিল তিন জন প্রধানমন্ত্রীকে— অটলবিহারী বাজপেয়ী, এইচ ডি দেবগৌড়া এবং ইন্দ্রকুমার গুজরাল। বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পেরে ইস্তফা দেন। কংগ্রেস সরকার গঠনের দাবি জানায়নি। সেই সময়ই প্রথম ইউনাইটেড ফ্রন্ট গঠন হয়েছিল ছোট ছোট আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী হন দক্ষিণের রাজ্য কর্নাটকের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement