বরণ: সম্বলপুরের জনসভায় নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।
ভোটে ফায়দা তুলতে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা যাবে না, বলে রেখেছে নির্বাচন কমিশন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাতে টলছেন না। প্রথমে ওড়িশায় ও তার পরে ছত্তীসগঢ়ে গিয়ে তিনি আজ ফের সেনা-পরাক্রমে ভর করেই ভোটের প্রচারে জুড়ে নিলেন পাকিস্তানের বালাকোটে ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’-এর প্রসঙ্গ। সীমান্তপারের সন্ত্রাস মোকাবিলার সঙ্গে টানলেন এ-স্যাট ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে মহাকাশে চৌকিদারির প্রসঙ্গও। মোদীর মতে, এই দু’টিই সম্ভব হয়েছে মানুষের এক-একটি ভোটে। তাঁরা মোদীকে ক্ষমতায় এনেছেন বলেই রাষ্ট্র শক্তিশালী হয়েছে। কংগ্রেসের হাতে বা কোনও মহাভেজাল দুর্বল (মহামিলাওটি মজবুর) সরকারের হাতে গেলে যার উল্টোটাই হবে। এই সূত্রে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কংগ্রেসের হাত আদৌ উন্নয়নের পক্ষে, নাকি ধ্বংসের পক্ষে?’’
ভোটে সেনাকে ব্যবহার করা নিয়ে প্রথম আপত্তি উঠেছিল মোদী, অমিত শাহদের প্রচারের ফেস্টুন-ব্যানারে উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের ছবি ব্যবহার করায়। নির্বাচন কমিশন গত মাসে স্পষ্ট নির্দেশ দেয়, ভোট-প্রচারে দেশের সামরিক ব্যক্তিদের ও প্রতিরক্ষা বাহিনী সংক্রান্ত কোনও ছবি ব্যবহার করা যাবে না। এতে তখনকার মতো ফেস্টুন-ব্যানার থেকে বাদ গেলেও সেনা-পরাক্রমের প্রসঙ্গ বারবারই উঠে আসছে বিজেপির নেতা-মন্ত্রী, মায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তৃতা, মন্তব্য ও টিপ্পনিতে।
এখন তো প্রথম বারের ভোটারদের পুলওয়ামায় নিহত জওয়ানদের ও বালাকোটে ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’-এর প্রতি উৎসর্গ করারও ডাক দিচ্ছেন মোদী। নির্বাচন কমিশন গত সপ্তাহে মহারাষ্ট্রের নির্বাচনী আধিকারিকদের কাছ থেকে তাঁর ওই সংক্রান্ত ভাষণ নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছে। মোদী এটাকে তাঁর নীতিগত অবস্থান হিসেবেই তুলে ধরছেন। কংগ্রেসের ‘ন্যায়’ মোকাবিলায় রাষ্ট্রবাদই তাঁর হাতিয়ার। গত কালও দূরদর্শনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বোঝাতে চেয়েছেন, এমনটা না-করার কোনও যুক্তিই নেই। বলেছেন, ‘‘গত ৪০ বছর ধরে দেশ সন্ত্রাসের সমস্যায় ভুগছে। দেশবাসীকে সে বিষয়ে না-বলার কোনও কারণ নেই। আমরা যদি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির কথা না বলি— তবে তার যুক্তিটা কী?... রাষ্ট্রবাদের অনুভূতি ছাড়া কি কোনও দেশ এগোতে পারে?’’ মোদীর প্রশ্ন, ‘‘যে দেশে হাজার হাজার সৈনিক শহিদ হয়েছেন, সেটা কি নির্বাচনী প্রসঙ্গ হওয়া উচিত নয়? কৃষকের মৃত্যু হলে সেটা ভোটে চর্চার বিষয়। কিন্তু সৈনিক মারা গেলে সেটা ভোটের বিষয় নয়!’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সেনা-পরাক্রম নিয়ে বুক ঠোকা তাই ছাড়ছেন না মোদী। দ্বিতীয় দফার ভোটের মুখে বিজেপির পক্ষে হাওয়া তুলতে প্রতিটি সভায় নিয়ম করে বালাকোটে পৌছে যাচ্ছেন তিনি। আজ ছত্তীসগঢ় ও ওড়িশাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এর পাশাপাশি কংগ্রেস শাসিত ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী হানায় বিজেপি বিধায়ক ভীমা মণ্ডবী ও চার নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যুর জন্য রাহুল গাঁধীর দলকে আক্রমণ করেছেন।
কংগ্রেস রাষ্ট্রদ্রোহ আইন পর্যালোচনার কথা বলেছে ইস্তাহারে। মোদীর অভিযোগ, ‘‘কংগ্রেসের ইস্তাহারে আসলে শক্তিশালী হচ্ছে মাওবাদীরা। কংগ্রেসের রাজনীতির উদেশ্যটাই সৎ নয়। মানুষকে ঠকানোর উপরে পিএইচডি করেছে ওরা।’’ মোদীর মতে, কংগ্রেস তাদেরই সমর্থন করে দেশটাকে যারা টুকরো টুকরো করতে চায়। সামরিক বাহিনীর হাতে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ায় আফস্পা আইন নিয়েও পরিস্থিতি পর্যালোচনার আশ্বাস দিয়েছে কংগ্রেস। সেই প্রসঙ্গে ছত্তীসগঢ়ের কোরবার সভায় উপস্থিত জনতাকে মোদীর প্রশ্ন, ‘‘আপনারা কি কাউকে দেশের ও আপনার নিরাপত্তা নিয়ে খেলতে দেবেন?’’
এর আগে ভুবনেশ্বরের সভায় মোদী অভিযোগ করেন, জাত-ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনই কংগ্রেসের এবং ওড়িশার বিজু জনতা দলের একমাত্র সাফল্য। ফের সরকারে এসে ‘জল শক্তি’ নামে আলাদা একটি মন্ত্রক গড়বেন বলে এ দিন ঘোষণা করেছেন মোদী।