ডিফুতে প্রাক্তন জঙ্গি নেতাই ভরসা বিজেপির

কার্বি আংলং ও ডিমা হাসাও—এই দুই পার্বত্য জেলা মিলিয়ে ডিফু আসনটি বেশিরভাগ সময়ই কংগ্রেসের হাতে ছিল।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

ডিফু শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:১১
Share:

ছবি: পিটিআই।

কার্বি ও হিন্দি ভাষায় গান চলছে। তার সঙ্গে খালি গায়ে নেচে চলেছেন একদল যুবক। রীতিমতো কোরিওগ্রাফার প্রণীত দলবদ্ধ পশ্চিমী নৃত্য! সকলেরই বুকে, পিঠে লাল রঙে লেখা বিজেপি, আঁকা পদ্মফুল। এ বারের লোকসভা ভোটের প্রচারে এটাই প্রাক্তন জঙ্গি নেতার চমক। স্বশাসিত রাজ্য গড়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। তার জন্য দীর্ঘ দিন রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চালিয়েছেন। বুলেট পেরিয়ে এখন ‘ব্যালট’-এ এসেও সেই দাবিটা আঁকড়ে রয়েছেন এক সময়ের দুঁদে জঙ্গি নেতা হরেন সিংহ বে।

Advertisement

অন্য দিকে, এই ডিফু আসনের সাত বারের কংগ্রেস সাংসদ বীরেন সিংহ ইংতি এলাকার জন্য তেমন বিশেষ কিছু করেছেন বলে কংগ্রেসও বুক ঠুকে দাবি করতে পারছে না। গত লোকসভায় একটিও প্রশ্ন করেননি তিনি। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ‘ঘুমন্ত সাংসদ’ বলে জনসভায় তাঁকে ব্যঙ্গ করছেন। কংগ্রেসের সবচেয়ে বর্ষীয়ান প্রার্থী বীরেনবাবু কম কথার মানুষ। অষ্টমবার সাংসদ হওয়ার নজির গড়তে এখন বাধ্য হয়েই তাঁকে ‘কথা’ বাড়াতে হয়েছে।

কার্বি আংলং ও ডিমা হাসাও—এই দুই পার্বত্য জেলা মিলিয়ে ডিফু আসনটি বেশিরভাগ সময়ই কংগ্রেসের হাতে ছিল। কিন্তু এই লোকসভা আসনের আওতাধীন দুই জেলার মোট পাঁচটি বিধানসভা আসনই এখন বিজেপির দখলে। দখলে ২টি স্বশাসিত পরিষদও। তাই কংগ্রেস এ বার চাপে। যে নাগরিত্ব আইন সংশোধনীকে হাতিয়ার করে রাজ্যে লড়ছে কংগ্রেস, সেই বিষয়টিও ষষ্ঠ তফশিলভুক্ত পার্বত্য জেলাগুলিতে তেমন প্রভাব ফেলছে না। অবশ্য সিপিআই (এমএল) ও ‘হিল স্টেট ডিমান্ড কমিটি’ কংগ্রেসকে সমর্থন জানিয়েছে।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

হরেনবাবু ও বিজেপির বিরুদ্ধে বীরেনের অভিযোগ, বিজেপি সাম্প্রদায়িক দল। ২০১৪ সালের ভোটের আগে কার্বি ও ডিমাসাদের স্বশাসিত রাজ্যের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে কাজ মোটেই এগোয়নি। উল্টে নাশকতা, হত্যায় অভিযুক্ত একজনকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। হরেনের জন্যই ২০০৫ সালে কার্বি আংলংয়ে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছিল বলে তাঁদের দাবি।

‘হেম্প্রেক কানথিম’ বা স্বশাসিত রাজ্যের দাবিতে অনড় হরেনের বক্তব্য, ‘‘স্বশাসন দুই পার্ব্যত জেলার মানুষেরই দীর্ঘকালের দাবি। স্বশাসিত স্বরাজ আদায়ের জন্য এখানকার মানুষ সশস্ত্র সংগ্রাম, রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ত্রিপাক্ষিক আলোচনা—বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন।’’ আর এই তিনটি ক্ষেত্রেই বড় ভূমিকা ছিল ও আছে হরেনবাবুর। ২০০৩ সালে তাঁর হাতে গড়া জঙ্গি দল, ইউপিডিএস সংঘর্ষবিরতিতে আসে। ২০১১ সালে ৫৬৮ জন সদস্য-সহ অস্ত্র জমা দেন তিনি।

১৯৮৬ সালে এই এলাকায় পৃথক স্বশাসিত রাজ্যের দাবিতে ‘স্বশাসিত রাজ্য দাবি কমিটি’ বা এএসডিসি তৈরি হয়েছিল। ‘স্বাধীন হোমল্যান্ড’-এর দাবি করা এএসডিসির নেতা জয়ন্ত রংপি ডিফু থেকে তিন বার সাংসদ হন। ২০১২ সালে হরেন রাজনীতিতে যোগ দেন। এএসডিসির হয়ে স্বশাসিত পরিষদে জেতেন। ২০১৭ সালে পরিষদের প্রধানও হন। পরে এএসডিসি দ্বিখণ্ডিত হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement