মায়াবতী
উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে দু’দলেরই প্রধান শক্তি দলিত সমাজের সমর্থন। তা নিয়ে এ যাবত দুই শিবিরের সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায় থাকলেও, লোকসভার আগে মায়াবতীকে প্রধানমন্ত্রী করার পক্ষে সওয়াল করে ঐক্যের বার্তা দিলেন উত্তরপ্রদেশের ভীম সেনার প্রতিষ্ঠাতা তথা ওই দলিত সংগঠনের প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ। আসন্ন লোকসভায় মায়াবতীর দলের প্রার্থীকে জেতাতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপানোর পক্ষেও সওয়াল করেন তিনি।
সহারনপুরে তো বটেই, উত্তরপ্রদেশে গত কয়েক বছরে যেখানে দলিত-ঠাকুর সংঘর্ষ ঘটেছে সেখানেই দলিতদের পাশে এসে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে আজাদের ভীম সেনাকে। তার জন্য জেলেও যেতে হয়েছে আজাদকে। কিন্তু তাতে জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। উল্টে তাঁর নেতৃত্বের গুণে দলে দলে দলিত যুবক সদস্য হয়েছেন ভীম সেনার। স্বভাবতই দলিত সমাজের ওই বিভাজন ভাল ভাবে নেননি মায়াবতী। ভোটের বাক্সে থাবা বসানোর আশঙ্কা করে শুরু থেকেই ভীম সেনার বিরোধিতায় সরব ছিলেন দলিত নেত্রী। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে সেই মায়াবতীকে সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়ে নতুন অক্ষের সম্ভাবনা উস্কে দিলেন আজাদ।
কেন এই পদক্ষেপ, তার ব্যাখ্যায় সংবাদ মাধ্যমকে আজাদ জানিয়েছেন— তাঁর দল রাজনৈতিক সংগঠন নয়, সামাজিক সংগঠন। দলিত সমাজের সামগ্রিক উন্নতির লক্ষ্যেই কাজ করছেন তাঁরা। আজাদের কথায়, ‘‘বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে দলিত সমাজের উত্তরণ হবে না। তাই দেশের স্বার্থে, দলিত শ্রেণির স্বার্থে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করা প্রয়োজন। আমার হাতে ক্ষমতা থাকলে এখনই নরেন্দ্র মোদীকে সরিয়ে মায়াবতীকে প্রধানমন্ত্রী করতাম। কিন্তু বিজেপি শক্তিশালী দল। তাই শক্তিশালী জোট দরকার তার মোকাবিলায়। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত দুর্বল শক্তিগুলিকে একজোট হতে হবে।’’ আর তাই বিজেপিকে হারাতে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন করতেও যে তাঁর দ্বিধা নেই, তা স্পষ্ট জানিয়েছেন আজাদ। তিনি বলেন, ‘‘আমি একটি সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। যাদের লক্ষ্য বহুজন আন্দোলনকে গতি দেওয়া। তাই কোনও আসনে বিএসপি প্রার্থী দুর্বল হলে আমার দল সেই প্রার্থীকে সব রকম সাহায্য করবে। দলিত ক্ষমতায়নের লক্ষ্যেই ওই পদক্ষেপ।’’
উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে দলিত ভোট বরাবরই নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়ে থাকে। গত লোকসভা নির্বাচনে একটি আসন না-পেলেও বিজেপির সঙ্গে প্রায় পাল্লা দিয়ে ভোট কুড়িয়েছিল মায়াবতীর দল। এবারও তাই দলিত ভোটকে এক জোট করে বিজেপির শক্ত ঘাঁটিতে আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন মায়াবতী। অখিলেশ ও কংগ্রেসের পাশাপাশি আজাদের দল যদি দূরত্ব ঘুচিয়ে মায়াবতীর পাশে এসে দাঁড়ায়, তা হলে মোদী-অমিত শাহের লড়াই যে কঠিন হয়ে পড়বে— তা মেনে নিচ্ছেন বিজেপি নেতারাই।