কংগ্রেস নয়, বিজেপিকে হারাতে বিএসপি-র জোটই যথেষ্ট, প্রিয়ঙ্কার প্রস্তাব উড়িয়ে ঘোষণা মায়ার

চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি, গর্জে উঠলেন বহেনজি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৯ ০৪:১৪
Share:

প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। —ফাইল চিত্র।

ভাই-বোনের প্রস্তাব ফেরালেন বুয়া-বাবুয়া।

Advertisement

রাহুল গাঁধীর সঙ্গে কথা বলে গত কাল লখনউয়ে গিয়েই প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা ঘোষণা করেন, মায়াবতী-অখিলেশদের জন্য ৭টি আসন ছেড়ে দেবে কংগ্রেস। চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি, গর্জে উঠলেন বহেনজি। সাফ বললেন, ‘‘দেশের কোথাও কংগ্রেসের সঙ্গে বিএসপি-র সমঝোতা নেই। কংগ্রেস যেন বিভ্রান্তি না ছড়ায়। বিজেপিকে হারাতে বিএসপি-র জোটই সক্ষম।’’

উত্তরপ্রদেশে প্রিয়ঙ্কাকে নামিয়ে রাহুল যে আচমকাই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবেন, আগে ভাবেননি মায়া-অখিলেশ। তাঁরা যাতে কংগ্রেসের সঙ্গে অন্তত ১৫টি আসনে সমঝোতা করেন, চাপ রেখে এমন আলোচনা শুরুও করেছিল কংগ্রেস। অখিলেশ আলোচনায় রাজিও ছিলেন। কিন্তু অনড় থাকেন মায়া। কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতায় ‘না’ করে দেন তিনি।

Advertisement

কাল কংগ্রেস যে ৭টি আসন ছেড়ে দেওয়ার কথা জানায়, তার মধ্যে সমাজবাদী পরিবারেরই সিংহভাগ আসন ছিল। মুলায়ম সিংহ, অখিলেশের স্ত্রী ডিম্পল, রামগোপাল যাদবের পুত্রের আসনও কংগ্রেস ছেড়ে দেওয়ার কথা জানায়। সঙ্গে অখিলেশ ও মায়াবতী কোনও আসনে লড়লে সেখানেও প্রার্থী না-দেওয়ার কথা জানিয়েছিল রাহুলের দল। সে দিক থেকে এ’টি অখিলেশের জন্য ‘সুখবর’ই ছিল। কিন্তু আজ সকালে মায়াবতী এমন একটি কড়া অবস্থান প্রকাশ্যে নিয়ে ফেলায় অস্বস্তিতে পড়েন অখিলেশ।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মায়াবতী টুইটে লেখেন, ‘‘বিএসপি আরও এক বার স্পষ্ট করে দিতে চায়, উত্তরপ্রদেশ-সহ গোটা দেশে কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের কোনও ধরনের সমঝোতা বা জোট নেই। কংগ্রেস যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, আমাদের লোকেরা যেন তার শিকার না হয়। উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস একেবারেই স্বতন্ত্র। ৮০টি আসনেই তারা প্রার্থী দিক। আমরা বিজেপিকে হারাতে সক্ষম। উত্তরপ্রদেশের ৭টি আসন ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে কংগ্রেস যেন ভ্রান্তি তৈরি না করে।’’

মায়াবতীর এই অবস্থানের পর অখিলেশও দলে আলোচনায় বসেন। এসপি সূত্রের মতে, বিএসপি নেত্রীর পক্ষ থেকেও তাঁকে বার্তা দেওয়া হয়, কংগ্রেসের বিভ্রান্তি নাকচ করার। অগত্যা মায়াবতীর টুইটের আড়াই ঘণ্টা পরে অখিলেশও টুইট করেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে এসপি-বিএসপি-আরএলডি-র জোট বিজেপি-কে হারাতে সক্ষম। কংগ্রেস যেন বিভ্রান্তি না ছড়ায়।’’

দিনের শেষে প্রিয়ঙ্কা তার জবাবে বলেন, ‘‘আমরা একাই নির্বাচনে লড়ছি। অন্য কারও সঙ্গে আমাদের কোনও লেনদেন নেই, কাউকে বিরক্ত করার ইচ্ছাও নেই। আমাদের লক্ষ্য বিজেপিকে পরাজিত করা, তাদেরও সেটাই লক্ষ্য।’’

উত্তরপ্রদেশে গত বিধানসভা ভোটেও রাহুল-অখিলেশ জুটি একসঙ্গে প্রচার করেছিলেন। ‘ইউপি কে দো লড়কা’ স্লোগানে ঘুরেছিলেন গোটা রাজ্য। অখিলেশের আজকের ঘোষণার পর এ বারে সেই সম্ভাবনাতেও আপাতত ইতি পড়ল। মায়া-অখিলেশের প্রত্যাখ্যানের পরে দিল্লিতে কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘‘ওঁরা যা খুশি করুন, আমাদের যা ইচ্ছা তাই করব।’’ কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, ‘‘এ বারে তো প্রমাণ হল, উত্তরপ্রদেশে জোট গড়ার বিরোধী কারা?’’
কিন্তু কেন এমন কঠোর মনোভাব মায়ার? সূত্রের মতে, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তি বিশেষ নেই। ১৫টির বেশি শক্তিশালী প্রার্থীও নেই। সব আসনে নিজেদের প্রার্থী নেই বলেই নানা বাহানায় কংগ্রেস নিজেদের আসন কমানোর চেষ্টা করছে। তার উপর রাহুল-প্রিয়ঙ্কা আক্রমণাত্মক হয়ে এখন বিএসপি-র ভোটে থাবা বসানোর চেষ্টা করছেন। প্রিয়ঙ্কা আজ ত্রিবেণী সঙ্গমে পুজো করে, বজরংবলীর আরতি করে নরম হিন্দুত্বের তাস খেলছেন। আর গঙ্গাবঙ্গে নৌকাবিহার করে সেই ভোটব্যাঙ্কই ফেরাতে চাইছে, যা অতীতে কংগ্রেসের থাকলেও এখন মায়ার দখলে। দলিত ভোটব্যাঙ্ক কাড়তে আজ নৌকায় বিজেপি থেকে আসা সাবিত্রী ফুলেকেও সঙ্গে নেন। কংগ্রেস বলছে, এক দিকে ভালই হল। অখিলেশের কথা ভেবেই এত দিন শিবপাল যাদবের সঙ্গে সমঝোতা করা হয়নি। এ বারে তার পথ প্রশস্ত হল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement