দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষা থেকে অর্থনীতি— প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বার বার কাঠগড়ায় তুলেছেন তাঁর পূর্বসূরি মনমোহন সিংহ। লোকসভা নির্বাচন চলকালীন এ বার কঠোর ভাষায় মোদীর সমালোচনা করলেন তিনি। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মনমোহন বললেন, ‘‘মোদী জমানার পাঁচ বছর ভয়াবহ এবং ধ্বংসাত্মক।’’ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মতে, মানুষ এ বার মোদী সরকারকে ‘দরজা দেখিয়ে’ দেবেন। নোট বাতিলকে স্বাধীন ভারতের ‘সবচেয়ে বড় দুর্নীতি’ আখ্যা দিয়েছেন মোদীর একদা কটাক্ষের ‘মৌনমোহন’।
কয়েক বছর ধরে মোদী দাবি করছেন, তাঁর আমলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত সসম্মানে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে। তাঁর সরকারের কাজের সুফল পাচ্ছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ। পাঁচ বছরে তিনি ‘নতুন ভারত’ গড়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই দাবিকে নসাৎ করে সাক্ষাৎকারে মনমোহন বলেছেন, ‘‘অচ্ছে দিনের স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন মোদী। যুব সমাজ, কৃষক, ব্যবসায়ী এবং প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের জন্য মোদী সরকারের পাঁচ বছর ভয়াবহ এবং ধ্বংসাত্মক।’’
প্রচারে সমস্ত বিষয়কে ছাপিয়ে জাতীয়তাবাদ এবং দেশপ্রেমকেই অস্ত্র করছেন মোদী। তাঁর দাবি, পাকিস্তান ও সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় মনমোহন সরকার নরম মনোভাব নিয়েছিল। তিনি সেই দিশা পাল্টে দিয়েছেন। এ নিয়ে মনমোহনের জবাব, ‘‘একটি মিথ্যে শত বার বললেও তা সত্যি হয় না। ২৬/১১ মুম্বই হামলার পর আমরা কূটনৈতিক ভাবে পাকিস্তানকে একঘরে করেছিলাম। আমাদের সময়েই আমেরিকার সঙ্গে অসামরিক পরমাণু চুক্তি হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত হয়েছিল।’’ তাঁর অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে উপত্যকায় জঙ্গি হামলা বেড়েছে এবং ভারত-পাক সীমান্তে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা হাজার শতাংশ বেড়েছে। মনমোহনের কথায়, ‘‘পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পরে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকে যোগদানের বদলে প্রধানমন্ত্রী জিম করবেট পার্কে শুটিংয়ে করছিলেন।’’ মনমোহন মনে করান, ওই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় (পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা) গোয়েন্দা ব্যর্থতার দায় কেন্দ্র এড়াতে পারে না। তাঁর মতে, মোদীর পাকিস্তান নীতি ‘অযত্নে সাজানো’ এবং ‘বিশৃঙ্খলায় ভরা’।
মোদী বার বার দাবি করেছেন, তাঁর সরকারের অন্যতম সাফল্য দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। বর্তমানের সেই দাবি উড়িয়ে প্রাক্তনের অভিযোগ, দেশের অর্থনীতিকে শোচনীয় অবস্থায় নিয়ে গিয়েছে মোদী সরকার। মনমোহনের দাবি, ‘‘নোট বাতিল সম্ভবত স্বাধীন ভারতে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি। জিএসটি এবং নোট বাতিলের জোড়া ধাক্কায় ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়েছেন।’’ সম্প্রতি এক সভায় মোদী দাবি করেন, এই প্রথম দেশে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে হাওয়া বইছে। ওই দাবি উড়িয়ে মনমোহন বলেন, ‘‘মানুষ ঠিক করে ফেলেছেন, এই সরকারকে সরাতে হবে। তাঁরা বুঝেছেন, এই সরকার দেশবাসীর সার্বিক উন্নয়নে বিশ্বাসী নয়। কী ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে, সে কথাই ভাবে। তাই বিভাজনের রাস্তা নিয়েছে।’’ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর তির্যক মন্তব্য, ‘‘এক জন মানুষ কখনওই ১৩০ কোটি মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন না। ভারত এমন একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এই সরকারকে দরজা দেখানো উচিত।’’
সম্প্রতি মনমোহন দাবি করেছেন, ইউপিএ আমলেও বহু বার সার্জিকাল স্ট্রাইক হয়েছে। একটি টিভি চ্যানেল দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদীর কটাক্ষ, ‘‘এখন কংগ্রেসের একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আছেন। আগে রিমোট কন্ট্রোলে সরকার চলত। এখন রিমোট কন্ট্রোলে বিবৃতি দেওয়ানো হয়।’’