ছবি সংগৃহীত
চলতি বছরে পঙ্গপালের হানায় জেরবার ভারতের পশ্চিমাংশ ও পাকিস্তান। ফসল নষ্টের জেরে নড়েচড়ে বসেছে উপমহাদেশের দুই দেশই। বিশ্ব জলবায়ু সংস্থা(ডব্লিউএমও)-এর আশঙ্কা, পঙ্গপাল হানার জেরে আগামী দিনে বিঘ্নিত হতে পারে ভারত, পাকিস্তান ও পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলির খাদ্য-সুরক্ষা। মূলত জলবায়ুর পরিবর্তনেই এই দেশগুলিতে বাড়ছে পঙ্গপাল-হানা।
রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীন ডব্লিউএমও জানিয়েছে, মরু অঞ্চলে উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের জেরে জোরালো হাওয়ার প্রভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে জলবায়ু। তার ফলে পঙ্গপালের প্রজনন, বৃদ্ধি এবং যাতায়াতের পথেও বদল আসছে। সম্প্রতি মরু অঞ্চল সংলগ্ন ভারতের রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাত সাক্ষী থেকেছে পঙ্গপালের হামলার। ফেব্রুয়ারিতে পঙ্গপাল হানার জেরে পাকিস্তানে জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করা হয়। গত দু’দশকে এমন ভয়ানক অবস্থার মুখোমুখি হয়নি ইমরান খানের দেশ।
ইন্টারগভর্নমেন্টাল অথরিটি অন ক্লাইমেট প্রেডিকশন অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার (আইসিপিএসি) জানিয়েছে, বিশ্ব উষ্ণায়ন ও তার জেরে জলবায়ুর বদল পঙ্গপালের বংশবিস্তারে অনুঘটকের কাজ করে। থর মরু অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে ভারত মহাসাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধি। সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি, বন্যার ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। শুধু গড় উষ্ণতা বৃদ্ধিই নয়, আবহাওয়া সংক্রান্ত চরম অপ্রত্যাশিত কোনও গোলযোগ ঘটলে তা-ও পঙ্গপালের বিস্তারের সহায়ক।
ডব্লিউএমও জানিয়েছে, ২০১৯ সালের শেষে পঙ্গপালের প্রাথমিক উপদ্রবের জেরে সোমালিয়া ও ইথিয়োপিয়ায় ৭০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি এবং কেনিয়ায় ২৪০০ কিমি চারণভূমি ধ্বংস হয়েছিল। আইসিপিএসি-র সাম্প্রতিক মূল্যায়ন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী মাসগুলিতে যথাক্রমে ১ লক্ষ ১৪ হাজার, ৪১ হাজার ও ৩৬ হাজার হেক্টর জমির জোয়ার, ভুট্টা ও গমের ক্ষতি হয়েছে পঙ্গপালের হামলায়।
গত ১৪ দিনে উত্তর কেনিয়া, পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ইথিয়োপিয়ায় পঙ্গপালের উপদ্রব দেখা গিয়েছে। সুদানের বিভিন্ন অঞ্চলেও পঙ্গপালের ঝাঁক দেখা গিয়েছে। উগান্ডা, সুদানের দক্ষিণ থেকে পূর্বাংশ, পূর্ব ইথিয়োপিয়া, উত্তর সোমালিয়া ও কেনিয়ার উত্তরাংশের জলবায়ু সাধারণ ভাবে পঙ্গপালের বংশবিস্তারের উপযোগী।
রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফআইও)-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, উত্তর সোমালিয়ার মরু-পঙ্গপালের ঝাঁক ভারত মহাসাগর ধরে গ্রীষ্মকালীন প্রজননের জন্য ভারত-পাক সীমান্ত অঞ্চলে মূলত রাজস্থান সংলগ্ন অঞ্চলে ঝাঁকে ঝাঁকে পাড়ি জমাচ্ছে। পথে কৃষিজমি পড়লেই অতি দ্রুত ফসলের বিপুল ক্ষতি করছে তারা। এরই প্রভাব পড়ছে খাদ্য-সুরক্ষায়।