Kerala High Court

বিরোধের সুর আদালতে, বরবাদ অবাক সুরাপান

করোনা-ত্রাসের মাঝে হঠাৎ মদ নিয়ে এত কাণ্ড কেন? অতিমারির বাজারেও মদের জন্য প্রায় মারামারিই লেগেছিল কেরলে!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২০ ০৩:২০
Share:

প্রতীকী ছবি।

একটু জল না পেলে আর চলছে না! মশাই, একটু জল পাই কোথায় বলতে পারেন?

Advertisement

কাতর আর্জি জানাতে গিয়ে নানা লোকের নানা কথার বিভ্রান্তিতে মরিয়া হয়ে শেষমেশ ভিন্ গাঁয়ের ক্লান্ত পথিক বেপাড়ার এক ছাত্রের মামার হাত থেকে জলের গেলাস কেড়ে তৃষ্ণা নিবারণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন! সে ছিল সুকুমার রায়ের ‘অবাক জলপান’ । করোনার ভয়াবহ আতঙ্কের মধ্যে এবং লকডাউনের বাজারে অবাক মদ্যপান করতে গিয়ে বাস্তবে আদালতের কড়া ধমক জুটল মদ্যপায়ীদের! সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারেরও!

ঘটনা কেরলের। সকলের জন্য খাদ্যশস্যের প্যাকেট, কমিউনিটি কিচেন, স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী থেকে শুরু করে ‘অতিথি’ শ্রমিকদের জন্য শিবির খুলে দেওয়া— লকডাউন সামলাতে জনস্বার্থে গুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে দক্ষিণী ওই রাজ্যের বাম সরকার। কিন্তু সুর কেটেছে বাড়ির দোড়গোড়ায় সুরা পৌঁছতে গিয়ে! কেরল স্টেট বেভারেজেস কর্পোরেশনের উদ্যোগে বিলিতি মদের (আইএমএফএল) হোম ডেলিভারি বন্ধ করতে বলেছে হাইকোর্ট। মদ্যপায়ীদের আক্ষেপ এবং ক্ষোভ বাড়িয়ে রাজ্য সরকারও কেরল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের ওই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে!

Advertisement

করোনা-ত্রাসের মাঝে হঠাৎ মদ নিয়ে এত কাণ্ড কেন? অতিমারির বাজারেও মদের জন্য প্রায় মারামারিই লেগেছিল কেরলে! এমনিতেই দক্ষিণী রাজ্যগুলির প্রায় সবক’টিতেই মদ বিক্রির সরকারি বিপণি আছে, তার জন্য সরকারি সংস্থাও আছে। লকডাউনে সোজা পথে মদের জোগান বন্ধ থাকায় বলিউডের অভিনেতা ঋষি কপূর যেমন টুইট করে আবেদন জানিয়েছিলেন, অনেক বেশি টাকা দিয়ে ‘ব্ল্যাক’-এ সেই তো বোতল পাওয়াই যাচ্ছে! তার চেয়ে সময় বেঁধে সোজা পথেই একটু মদ বিক্রির ব্যবস্থা হোক না। কেরলের আম নাগরিকের সকলে ঋষি-তুল্য নন, তাঁদের অনেকেই থানায় থানায় ফোন করে ব্যতিবস্ত করেছেন। সরকারি বিপণির সামনে গিয়ে হল্লা বাধিয়েছেন। বহু জনেরই বক্তব্য, একটু মদ না পেলে ‘উইথড্রয়াল সিম্পটম’ দেখা দিচ্ছে। আত্মহত্যার চেষ্টা করা রোগীকে নিয়ে পুলিশকে দৌড়তে হয়েছে চিকিৎসা কেন্দ্রে!

মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন প্রথম দিকে ডেঁটে ছিলেন। বলেছিলেন, ‘উইথড্রয়াল সিম্পটম’ হলে রিহ্যাব সেন্টারে যান। কিন্তু পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা, হাসপাতাল সব শুদ্ধ গোলমালে পড়ছে দেখে স্টেট বেভারেজেস কর্পোরেশনের এম ডি স্পর্জন কুমার প্রস্তাব দেন, ‘উইথড্রয়াল সিম্পটম’-এর কথা চিকিৎসক কাগজে লিখে দিলে সেই ‘পাস’ দেখিয়ে সরকারি বিপণি থেকে এক এক জন সর্বোচ্চ তিন লিটার পর্যন্ত বিলিতি মদের হোম ডেলিভারি পাবেন। সার্ভিস চার্জ দিতে হবে ১০০ টাকা। সরকারও ভাবে, মদে থাক কিন্তু ঘরে থাক! সরকারি গেজেট বেরোয় হোম ডেলিভারি চালু করার।

চিকিৎসকদের কিছু সংগঠন এমন আজব কারবারের বিরোধী ছিল। ত্রিশূরের কংগ্রেস সাংসদ টি এন প্রতাপন আরও দুই আবেদনকারীকে নিয়ে মামলা ঠুকে দেন হাইকোর্টে। এর আগে মদের হোম ডেলিভারি চেয়ে আবেদন করায় হাইকোর্টই এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল। এ বার ডিভিশন বেঞ্চ হোম ডেলিভারির আয়োজনে জল ঢেলে দিয়েছে। প্রতাপন বলছেন, ‘‘মদ কোনও ভাবেই আবশ্যিক পণ্য নয়, ওষুধও নয়। লকডাউনের মধ্যে বাড়িতে মদ পৌঁছে দিতে হবে, এ আবার কেমন কথা!’’

প্রকাশ্যে না বললেও একান্তে প্রতাপন এবং আদালতকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রীও! সুরা নিয়ে তাঁদের অন্দরের সুর যে এক তারেই বাঁধা!

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement