Coromandel Express accident

চারদিক ধুলো, অন্ধকার! যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন যাত্রীরা, উদ্ধারকাজে স্থানীয়দের প্রশংসায় স্বয়ং মোদীও

অন্ধকারে চোখ কিছুটা থিতু হয়েই ফুটে ওঠে এক ভয়াবহ দৃশ্য। লাইনচ্যুত হয়ে রেলের কামরা ছড়িয়ে রয়েছে। তার তলায় রক্তাক্ত অবস্থায় চাপা পড়ে রয়েছেন ট্রেনের যাত্রীরা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

বালেশ্বর শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৩ ১০:৫৫
Share:

করমণ্ডল এক্সপ্রেসে ভয়াবহ দুর্ঘটনার দৃশ্য। যাত্রীদের উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন স্থানীয়েরাও। —ফাইল চিত্র।

শুক্রবার সন্ধ্যা। হঠাৎ জোর আওয়াজ শুনতে পান বাহানগা গ্রামের বাসিন্দারা। বাড়ির কাছেই রেল স্টেশন। সে দিক থেকে আওয়াজ আসতে স্টেশনের দিকেই দৌড়ে গিয়েছিলেন স্থানীয়েরা। জোর আওয়াজের সূত্রপাত আদতে কোথায়, তা প্রথমে বুঝতে পারছিলেন না তাঁরা। স্টেশনের কাছে পৌঁছতেই দেখেন, অন্ধকার জমাট বেঁধে রয়েছে। চারদিকে ধুলোয় ভর্তি। লাইনের দিক থেকে ভেসে আসছে আর্তনাদ। অন্ধকারে চোখ কিছুটা থিতু হয়েই ফুটে ওঠে এক ভয়াবহ দৃশ্য। লাইনচ্যুত হয়ে পড়েছে রেলের কামরা। তার তলায় রক্তাক্ত অবস্থায় চাপা পড়ে রয়েছেন ট্রেনের যাত্রীরা। তাঁদের আর্তনাদ চার দিকে।

Advertisement

পরিস্থিতি দেখে আর উদ্ধারকারী দল আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করেননি স্থানীয়েরা। নিজেরাই উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ওড়িশায় বালেশ্বরের কাছে বাহানগা বাজার স্টেশনে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস এবং বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। একই সঙ্গে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় একটি মালগাড়িও। মালগাড়ির কামরার উপরে উঠে যায় করমণ্ডলের ইঞ্জিন। এই দুর্ঘটনায় ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও রবিবার সকালে মৃতের সংখ্যা ২৭৫ বলে জানিয়েছে ওড়িশা সরকার। স্থানীয়দের মতে, দুর্ঘটনার প্রায় দু’ঘণ্টা পর সেখানে এসে পৌঁছয় উদ্ধারকারীর দল। তার আগেই কামরার তলা থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করতে শুরু করেন স্থানীয়েরা।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক স্থানীয়ের দাবি, শুক্রবার স্টেশনের দৃশ্য ভয় ধরানোর মতো। তিনি বলেন, ‘‘স্টেশনে পৌঁছে দেখলাম ট্রেনের কামরাগুলি লাইনচ্যুত হয়ে গিয়েছে। কামরার তলায় চাপা রয়েছেন যাত্রীরা। এমনকি, লাইনের এদিক ওদিকও ছড়িয়ে রয়েছে যাত্রীদের রক্তাক্ত দেহ। যাত্রীদের অবস্থা দেখে আর অপেক্ষা করতে পারিনি। অন্ধকারের মধ্যেই তাঁদের উদ্ধার করতে শুরু করি।’’দুর্ঘটনার পর যাত্রীদের উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছিলেন আরও এক স্থানীয়। তিনি বলেন, ‘‘চারদিকে তখন ধুলো এবং অন্ধকার। যাত্রীদের হাহাকার শোনা যাচ্ছে শুধু। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে আমরা সকলে হাত লাগিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার করতে শুরু করি। আহত যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই তৃষ্ণায় ফেটে পড়ছিলেন। তাঁদের জন্য জলের ব্যবস্থাও করা হয়।’’

Advertisement

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন অজয়কুমার মল্লিক নামে এক তরুণ। সংবাদ সংস্থা সূত্রের দাবি, রেলস্টেশনের কাছে একটি প্যান্ট্রি কারে কাজ করেন তিনি। আওয়াজ শুনে তিনিও ঘটনাস্থলে ছুটে যান বলে জানান অজয়কুমার। তিনি বলেন, ‘‘সেখানে ছুটে গিয়ে যাত্রীদের কোনও মতে উদ্ধার করেছি। কিন্তু আমার দুই সহকর্মীকে বাঁচাতে পারলাম না। আমার আরও এক সহকর্মী এই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন।’’বিপদের সময় স্থানীয়েরা এ ভাবে এগিয়ে এসেছেন শুনে তাঁদের প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেরি না করে তাঁরা উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বলে বহু যাত্রীর প্রাণরক্ষা পেয়েছে বলে জানান মোদী। স্থানীয়দের প্রশংসা করেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement