ছবি সংগৃহীত।
রামন্দিরের পরে মথুরা নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে বছর দু’য়েক আগেই। সেই মামলা এখনও আদালতের বিচারাধীন। এ বারে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের করা মামলার ভিত্তিতে পরোক্ষে ‘বিতর্কিত’ তকমা লাগল আর এক উপাসনাস্থল কাশী বিশ্বনাথ মন্দির লাগোয়া জ্ঞানবাপী মসজিদে। বৃহস্পতিবার বারাণসীর স্থানীয় আদালত কাশী বিশ্বনাথ মন্দির এবং জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষা করার অনুমতি দিল ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া)-কে। আদালতের নির্দেশে দু’জন সংখ্যালঘুকে নিয়ে গড়তে হবে পাঁচ জনের একটি দল। তারা ওই মন্দির এবং মসজিদ চত্বরে প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষার কাজ করবেন। একই সঙ্গে আদালত জানিয়েছে, এই সমীক্ষার খরচ বহন করবে উত্তরপ্রদেশ সরকার।
রামমন্দির আন্দোলনের সময়েই সঙ্ঘ পরিবার এবং হিন্দুত্ববাদীরা হুমকি দিয়েছিল, ‘ইয়ে তো সির্ফ এক ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়’। সেই সুর মেনে রামমন্দির আন্দোলনের সাফল্যে উজ্জীবিত হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি প্রথমে মথুরার শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়। পাল্টা মামলা করে মুসলিমদের কয়েকটি সংগঠন। তার মধ্যেই কাশী বিশ্বনাথ মন্দির চত্বরের মধ্যেই জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে ‘স্বয়ম্ভু জ্যোতির্লিঙ্গ ভগবান বিশ্বেশ্বর’-এর তরফে আইনজীবী হিসেবে আদালতের দ্বারস্থ হন আইনজীবী বিজয়শঙ্কর রস্তোগী। তাঁর আবেদন, জ্ঞানবাপী মসজিদ যে জমিতে গড়ে উঠেছে, তা আদতে হিন্দুদের। সুতরাং সেই জমি হিন্দুদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক। ওই আইনজীবীর আর্জি, ১৬৬৪ সালে মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেব ২ হাজার বছরের পুরনো কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একাংশ ধ্বংস করে সেখানে গড়ে তোলেন মসজিদ। জ্ঞানবাপী
মসজিদ কমিটি এই আবেদনের পাল্টা আর্জি জানিয়েছে।
স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতির রং লেগেছে। এমআইএম নেতা তথা সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। মূলধারার অন্য কোনও রাজনৈতিক দল এ নিয়ে এখনও প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেনি। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় মন্দির-মসজিদগুলি যে যেখানে ছিল, তার অবস্থান বদল বা চরিত্র বদল করা যাবে না বলে ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থলে আইনে বলা হয়েছে। তবে সেই আইন খারিজ করার জন্য বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ও অশ্বিনী উপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে রেখেছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের উগ্র হিন্দুত্ববাদী চেহারা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। সে কারণেই একের পর এক উপাসনাস্থল নিয়ে আদালতে মামলা করে সামাজিক এবং ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি করে মেরুকরণ করার প্রক্রিয়া চলছে। গোটা বিষয়টিতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে একাধিক সংগঠন। একই সঙ্গে তাদের অভিযোগ, মোদী সরকারের আমলে প্রতিবাদ করলেই নানা মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে এমনকি জঙ্গি বা মাওবাদী তকমা দিয়ে জেলে পাঠানোর ঘটনাও প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। সে কারণে মথুরা বা কাশী মামলার ক্ষেত্রে কত জন সুর চড়াবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে সংখ্যালঘুদের বড় অংশের মধ্যেই।