—ফাইল চিত্র।
ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধী শিবিরকেই দেওয়ার প্রচলন রয়েছে বলে সংসদে দাঁড়িয়ে মন্তব্য করেছেন রাহুল গান্ধী। এনডিএ-র যুক্তি, কখনওই এমন কোনও নিয়ম প্রচলিত ছিল না। শাসক গোষ্ঠীর দাবি, তা যদি হয়, তবে বলতে হবে কংগ্রেসের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর সরকারই সেই নিয়ম মানেননি।
বিরোধীদের যুক্তি, নেহরু জমানায় ডেপুটি স্পিকার হয়েছিলেন এম অনন্তসায়নম আইয়াঙ্গার (১৯৫২-৫৬), হুকুম সিংহ (১৯৫৬-৬২) এবং এসভি কৃষ্ণমূর্তি রাও (১৯৬২-৬৭)। এঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন কংগ্রেসের নেতা।
আবার নেহরু কন্যা দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সরকারেও ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকার ছিলেন কংগ্রেস নেতা আরকে খাদিলকর।
শুধু তা-ই নয়, বর্তমানে দেশের অবিজেপি রাজ্যগুলি— পশ্চিমবঙ্গ, তেলঙ্গানা, তামিলনাড়ু, কেরল এবং ঝাড়খণ্ডে ডেপুটি স্পিকার শাসকদলেরই। তাহলে কোন প্রচলিত রীতির কথা বলতে চাইছে কংগ্রেস?
যদিও লোকসভার ইতিহাস বলছে, সংসদে স্বীকৃত বিরোধীরা সব সময়েই ডেপুটি স্পিকারের পদ পেয়েছেন। তবে অধিকাংশ সরকারেই স্বীকৃত বিরোধী ছিল না। যে যে সরকারে ছিল, তাঁরা ডেপুটি স্পিকারের পদ পেয়েছিলেন। যেমন অটল বিহারী বাজপেয়ী বা মনমোহন সিংহের সরকারে। ডেপুটি স্পিকার বেছে নেওয়া হয়েছিল বিরোধী শিবির থেকেই।
স্পিকার নির্বাচন নিয়ে রাজনাথ সিংহের বিরুদ্ধে কথা না রাখার অভিযেোগ এনেছিলেন রাহুল গান্ধী। রায়বরেলীর কংগ্রেস সাংসদ বলেছিলেন, সরকার মনোনীত স্পিকারকে সমর্থনের শর্ত হিসাবে মল্লিকার্জুন খড়্গে বিরোধী শিবির থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করতে বলেন। শুনে রাজনাথ বলেন, তিনি এ বিষয়ে পরে ফোন করে জানাবেন। কিন্তু তিনি আর ফোন করেনননি। রাহুলের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন রাজনাথ।
কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, সোমবার থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে তিন বার কথা হয়েছে খড়্গের। যদিও কী বিষয়ে কথা হয়েছে, সে ব্যাপারে সবিস্তার জানাননি কিছু।
রাহুল বলেছিলেন খড়্গেকে ‘ফোন করব’ বলেও না করে অপমান করেছেন রাজনাথ। পাল্টা এনডিএ-র তরফে মঙ্গলবার বলা হয়, রাজনাথ মঙ্গলবার, স্পিকারদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন সকালেই খড়্গেকে ফোন করেন। কিন্তু তিনি ব্যস্ত থাকায় কথা বলতে পারেননি। তাঁর বদলে কথা বলেন কেসি বেণুগোপাল। কিন্তু তারা তাঁদের শর্ত একটুও বদলাতে রাজি হননি।
স্পিকারকে সমর্থনের আগে ডেপুটি স্পিকারের নাম ঠিক করতে বলেছিল বিরোধী জোট ইন্ডিয়া। এনডিএ-র দাবি, রাজনাথ তাঁদের বলেন, নির্বাচনের পরে এ বিষয়ে বসে কথা বলবেন। কিন্তু কংগ্রেস এবং বিরোধীরা সেই শর্তে রাজি হননি।
ওম বিড়লাকেই প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করল এনডিএ। তবে লোকসভা স্পিকার পদে তার পাল্টা প্রার্থী দিল ‘ইন্ডিয়া’ও। কংগ্রেসের কে সুরেশ বিরোধী জোটের স্পিকার প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মঙ্গলবার। তিনি যদি মনোনয়ন প্রত্যাহার না করেন, তবে বুধবার লোকসভার স্পিকার নির্বাচনের জন্য ভোট হবে। আর তা যদি হয়, তবে সাম্প্রতিক অতীতে ভারতে এই প্রথম লোকসভায় ভোটের মাধ্যমে স্পিকার নির্বাচন করা হবে। কারণ, ইতিহাস বলছে এত দিন সাধারণত লোকসভা স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন বিরোধিতা ছাড়াই।
ওম বিড়লা (বাঁ দিকে) এবং কে সুরেশ (ডান দিকে) —ফাইল চিত্র
লোকসভার স্পিকার নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাজনাথ সিংহ, কিন্তু তিনি তাঁর কথা রাখেননি। মঙ্গলবার এমনটাই জানালেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
স্পিকার নির্বাচনে বিরোধীদের সমর্থন চেয়ে সোমবার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে কথা বলেন রাজনাথ। খড়্গে তাঁকে বলেছিলেন তিনি ‘ইন্ডিয়া’র বাকি শরিকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানাবেন। এর পরে মমতা, অখিলেশ, স্তালিন-সহ বিরোধীদের সমস্ত নেতার সঙ্গে আলোচনা করেন খড়্গে। রাজনাথকে জানান, ডেপুটি স্পিকারের পদটি যদি ইন্ডিয়ার কোনও প্রতিনিধিকে দেওয়া হয়। তবে তাঁরা স্পিকারকে সমর্থন করবেন।
রাজনাথ এই শর্ত শুনে খড়্গেকে জানিয়েছিলেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার মনোনয়ন পর্বের আগেই আবার কথা বলবেন। এবং জানাবেন, বিরোধীদের শর্ত মানা হচ্ছে কি না। কিন্তু রাহুলের বক্তব্য, রাজনাথ কথা রাখেননি। বিরোধীদের সঙ্গে আর কোনও রকম যোগাযোগ করেননি তিনি। সরকার বিরোধীদের শর্ত মেনে নিচ্ছে কি না, তা-ও জানায়নি। অগত্যা কংগ্রেস তাদের কথা থেকেও সরে আসতে বাধ্য হয়েছে। রাহুল জানান, স্পিকারকে সমর্থন করার সিদ্ধান্তই নিয়েছিল ‘ইন্ডিয়া’। তবে এখন তারা পাল্টা লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ঐতিহ্য অনুযায়ী ডেপুটি স্পিকারের পদটির দাবিদার বরাবরই ছিল বিরোধীরা। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে তা হয়নি। ২০১৪ সালে বিজেপির সরকার ডেপুটি স্পিকারের পদ দিয়েছিল, তাদের জোট সঙ্গী এআইএডিএমকের এম থাম্বি দুরাইকে। ২০১৯ সালে ফাঁকাই ছিল এই পদ। ওই দু’বছরই বিরোধীরা দুর্বল ছিল লোকসভায়। কোনও বিরোধী দলনেতাও ছিল না। নেতা ছিল না লোকসভায়। কিন্তু এ বার কংগ্রেস একা ৯৯টি আসন পেয়েছে। বিরোধীরাও ভাল ফল করেছে এ বারের লোকসভা ভোটে। তাই এই পদটির জন্য এ বার জোরালো দাবি জানায় ‘ইন্ডিয়া’।
লোকসভা স্পিকার কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনার মধ্যেই মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করলেন ১৭তম লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ওমকেই এ বারও লোকসভা স্পিকার মনোনীত করার কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার?
উল্লেখ্য, বিরোধী জোট ইন্ডিয়া সূত্রে খবর ছিল, স্পিকার নির্বাচনে তারা কোনও প্রার্থী দেবে না। ফলে কেন্দ্রের মোদী সরকার যাঁকেই প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করবে, তিনি বিনা প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন। পরে পরিস্থিতি বদলায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার যাঁকেই স্পিকার মনোনীত করুক, তাঁকে সমর্থন করবেন রাহুল গান্ধী। মঙ্গলবার প্রকাশ্যেই এই মন্তব্য করলেন কংগ্রেসের রায়বরেলীর সাংসদ। তবে এই সমর্থন নিঃশর্ত নয়। রাহুল জানিয়েছেন, লোকসভার ডেপুটি স্পিকারের পদটি যদি বিরোধী জোট ইন্ডিয়াকে দেওয়া হয়, তবেই তাঁরা সমর্থন করবেন, নচেৎ নয়।
ডেপুটি স্পিকারের পদটি তাঁদের দেওয়া হোক বলে শর্ত দিয়েছে বিরোধীরা। জানিয়েছে, এক মাত্র, তা হলেই তারা সরকার মনোনীত স্পিকারকে সমর্থন করবে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, ডেপুটি স্পিকারের পদ যদি সত্যিই বিরোধীরা মনোনীত করার সুযোগ পান, তবে কে হবেন লোকসভার উপাধ্যক্ষ?
লোকসভার স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের ‘এক মত এক পথ’-এ আনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং সংসদ বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুকে।
সেই মতো মঙ্গলবার স্পিকার নির্বাচন নিয়ে রাজনাথ দ্বারস্থ হন বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার। কথা বলেন, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এমনকি, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। কিন্তু বিরোধীরা পাল্টা শর্ত দেয় সরকারকে।
কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে রাজনাথকে মনে করিয়ে দেন ডেপুটি স্পিকার পদটি সাধারণত সংসদের বিরোধী শিবির থেকেই নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৪ বিজেপির সরকার উপাধ্যক্ষ বা ডেপুটি স্পিকারের পদ দিয়েছিল, তাদের জোট সঙ্গী এআইএডিএমকের এম থাম্বি দুরাইকে। ২০১৯ সালে ফাঁকাই ছিল এই পদ।
২০১৪ এবং ২০১৯— দু’বছরেই বিরোধীরা দুর্বল ছিল লোকসভায়। সংসদে কোনও বিরোধী দলনেতাও ছিল না। কিন্তু এ বার কংগ্রেস একা ৯৯টি আসন পেয়েছে। বিরোধীরাও ভাল ফল করেছে।