—প্রতীকী ছবি।
সাত বছর আগে তৎকালীন সিবিআই অধিকর্তা অনিল সিংহ সংসদীয় কমিটির সামনে বলেছিলেন, কর্মীর অভাবে ও তদন্তের চাপে সিবিআইয়ের ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। সে সময় সিবিআইয়ের ৭২৭৪টি অনুমোদিত পদের মধ্যে শূন্যপদের সংখ্যা ছিল ১৫৩১টি। সদ্য ষাট বছরে পা দেওয়া সিবিআইয়ে এখন অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৭২৯৫টি। সংসদে জানানো শেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সিবিআইতে শূন্যপদের সংখ্যা ১৬৭৩টি।
রেল মন্ত্রকের নির্দেশে সিবিআই আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে ওড়িশার রেল দুর্ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব হাতে নিয়েছে। রেলে তিন লক্ষাধিক শূন্যপদের জেরে সুরক্ষা ব্যবস্থায় গাফিলতির কারণেই বাহানাগার দুর্ঘটনা ঘটেছে কি না, তা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন। ঘটনা হল, সেই দুর্ঘটনার তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিবিআইও শূন্যপদের সমস্যায় ভুগছে। কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা আগেই প্রশ্ন তুলেছেন, রেল দুর্ঘটনার তদন্ত সিবিআই কী ভাবে করবে? না কি সরকারের গাফিলতি থেকে নজর ঘোরাতে সিবিআইকে তদন্ত করতে ডাকা হয়েছে? সিবিআইয়ের অন্দরমহলেও প্রশ্ন, এত তদন্তের দায়িত্ব সামলানোর মতো অফিসার কোথায়? কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধুমাত্র দুর্নীতির অভিযোগের ক্ষেত্রেই মোট ৬৪৫টি মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। এর মধ্যে ৩৫টি তদন্তের মেয়াদ পাঁচ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। সিবিআইয়ের তদন্ত করা ৬৭০০টি মামলা বিভিন্ন আদালতে ঝুলে রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৩৯টি মামলা ১০ বছরের পুরনো। ২৭৫টি মামলা ২০ বছরের পুরনো। সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, শুধু পশ্চিমবঙ্গেই শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি, নির্বাচন পরবর্তী হিংসা, গরু পাচার, কয়লা পাচারের মতো মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে তৈরি বিশেষ দলে যথেষ্ট সংখ্যক অফিসার নেই বলে কলকাতা হাই কোর্টের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে সিবিআইকে। জাতীয় স্তরে ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা থেকে দিল্লির আবগারি দুর্নীতি, নীরব মোদীদের ব্যাঙ্ক প্রতারণা থেকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধেও বহু মামলা রয়েছে। তার সঙ্গে রাজ্যে রাজ্যে দুর্নীতির মামলা তো রয়েইছে।
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের অভিযোগ, রেলের নিরাপত্তা কমিশনারের রিপোর্ট জমা পড়ার আগেই ওড়িশার দুর্ঘটনায় সিবিআই-তদন্ত ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। এটা সংবাদমাধ্যমের নজর ঘোরানো ছাড়া আর কিছু নয়। তাঁর যুক্তি, ২০১৬-এর কানপুর রেল দুর্ঘটনার তদন্তে এনআইএ কোনও কিনারা করতে পারেনি। কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের প্রধান সুপ্রিয়া শ্রীনতে আজ সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ তুলেছেন, প্রায় ৩০০ মানুষের মৃত্যুর পরেও এর জন্য দায়ী কারা, তার উত্তর নেই। এখন সিবিআই কি খোঁজ করবে, কেন রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণে বরাদ্দ কমেছে? কেন ১০টির মধ্যে ৭টি রেল দুর্ঘটনা ট্রেন বেলাইন হওয়ার ফলে ঘটছে? কেন রেল মন্ত্রকের চিন্তন শিবিরে সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা হয়নি? কেন জাতীয় রেল সুরক্ষা তহবিলে অর্থ বরাদ্দ কমেছে? কেনই বা রেলে ৩ লক্ষের বেশি শূন্যপদ রয়েছে? আর কেনই বা ট্রেন চালকদের ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় কাজ করানো হচ্ছে?