প্রতীকী ছবি।
নতুন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনী নীতিতে লিঙ্গ সমতাকেই কেন্দ্রে আনতে চাইছে সরকার। শনিবার এই ঘোষণার কথা জানা গিয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, মহিলাদের পাশাপাশি এই ধরনের আলোচনায় যৌন সংখ্যালঘু তথা এলজিবিটি (সমকামী, উভকামী, রূপান্তরকামী প্রমুখ) গোষ্ঠীকেও অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। নতুন নীতির খসড়ায় বলা হয়েছে, অন্তত ৩০ শতাংশ মহিলা প্রতিনিধিত্ব থাকবে। মহিলাদের নিয়ে নানা ঘোষণা থাকলেও এই প্রথম এলজিবিটি গোষ্ঠীর কথাও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নীতিতে উঠে এল।
সরকারি নীতির খসড়া তৈরির সঙ্গে যুক্ত কর্তারা জানাচ্ছেন, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তিকরণ হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নতির ভিত। তাই নীতির মূলে এই বিষয়টিকেই রাখা হচ্ছে। বিজ্ঞানচর্চা এবং বিজ্ঞানী তৈরিতে মহিলাদের উপরে বেশি জোর দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, প্রতিভাবান মহিলা বিজ্ঞানীরা যাতে নেতৃত্ব দেওয়ার জায়গায় পৌঁছতে পারেন তাও নিশ্চিত করা হবে।
শুধু মহিলা নয়, সমাজের যৌন সংখ্যালঘু হিসেবে চিহ্নিত এলজিবিটি গোষ্ঠীর মানুষদেরও যাতে বিজ্ঞানচর্চায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিভিন্ন অধিকার রক্ষার কথা বলার পাশাপাশি অবসরকালীন সুবিধা এবং লিঙ্গ নির্বিশেষে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর জন্য নির্ধারিত সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করার কথাও খসড়ায় বলা হয়েছে।
গত কয়েক বছরে শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কারের দিকে তাকালে দেখা যাবে, পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে প্রতি বছরই এক বা একাধিক মহিলা রয়েছেন। গত বছর পুরস্কারপ্রাপকের তালিকায় ছিলেন কলকাতায় অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স-এর রসায়নবিজ্ঞানী জ্যোতির্ময়ী দাশ। তার আগের বছর গণিতে পুরস্কার পেয়েছিলেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের নীনা গুপ্ত। মঙ্গলযান বা চন্দ্রযান-২ অভিযানেরও বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে মহিলারা ছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দেশের শাসক দলের বিভিন্ন নেতারা যে ভাবে ক্রমাগত পুরুষতন্ত্রের প্রচার ও আধিপত্যবিস্তারের কথা বলেন, তাতে এই ধরনের নীতি কত দূর কার্যকরী হবে? বিজ্ঞানচর্চার এই স্তরে পৌঁছতে হলে তো সামাজিক ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে! একই কথা প্রযোজ্য এলজিবিটি নিয়ে আন্দোলনকারীদের অনেকের। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নীতিতে যৌন সংখ্যালঘুদের উল্লেখ রয়েছে, এই বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েও তাঁরা বলছেন, ‘‘সমাজে এখনও যৌন সংখ্যালঘুদের নানা বৈষম্য ও টিটকিরির মুখে পড়তে হয়। প্রশাসনের কাছে গিয়েও বহু সময় সুরাহা হয় না। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নীতির পাশাপাশি সেই অধিকারগুলি যাতে নিশ্চিত করা যায় তার জন্য সদর্থক পদক্ষেপ প্রয়োজন।’’
মহিলা ও এলজিবিটি গোষ্ঠীর পাশাপাশি নতুন নীতির খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রান্তিক অঞ্চলের বাসিন্দা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ ভাবে সক্ষম নাগরিকদেরও এই নীতিতে সমানাধিকারের আওতায় আনা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে তাঁদের উপযোগী পরিকাঠামো এবং সাংস্কৃতিক লেনদেনের বিষয়টিও রাখতে হবে।