Mamata Banerjee

নিট,জেইই আটকাতে প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি, মুখ্যমন্ত্রীদের সভায় মমতা

করোনা আবহে যান চলাচল বন্ধ, পড়ুয়ারা পরীক্ষা দিতে যাবেন কী ভাবে, প্রশ্ন মমতার।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২০ ১৭:৩৬
Share:

সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বৈঠকে সাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।

নিট-জয়েন্ট নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন অবিজেপি রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, অতিমারি পরিস্থিতিতে পরীক্ষার আয়োজন করে পড়ুয়াদের বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। পড়ুয়ারা মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেছেন। তার জন্য প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টেও যাওয়া যেতে পারে।

দেশের সাতটি অবিজেপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বুধবার ভার্চুয়াল বৈঠক করেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। পৌরোহিত্য করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পড়ুয়াদের উপর জেইই এবং নিট চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে সেখানে কেন্দ্রকে একহাত নেন মমতা।

এ দিন মমতা বলেন, ‘‘অতিমারির আবহে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাতে মানসিক অবসাদে ভুগছেন অনেকেই। করোনার জেরে এখনও যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি দেশে। এমন পরিস্থিতিতে পড়ুয়ারা পরীক্ষা দিতে যাবেনই বা কী ভাবে? পরীক্ষা স্থগিত রাখার আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখনও কোনও উত্তর পাইনি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: কিডনির অবস্থার অবনতি, এখনও গভীর কোমায় প্রণব, জানাল হাসপাতাল​


কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে মমতা আরও বলেন, ‘‘আগেই ইউজিসির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে কেন্দ্র। সেপ্টেম্বরে পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে। এ ভাবে কেন পড়ুয়াদের বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে? পড়ুয়ারা মানসিক অবসাদে ভুগছেন, সে কথা জানিয়ে শীর্ষ আদালতে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে দেখার আর্জি জানানো উচিত কেন্দ্রের। তা না হলে আমাদেরই এ গিয়ে আসতে হবে। রাজ্যে আমাদেরও নির্বাচিত সরকার রয়েছে। এক সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারি আমরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত রাখার আবেদন জানাতে পারি। এ ব্যাপারে সব মুখ্যমন্ত্রীকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’

কেন্দ্রকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর হাতে বিকল্প ছিল। সুপ্রিম কোর্টকে রায় বিবেচনা করার আর্জি জানাতে পারতেন। গণতন্ত্রের উপর এমন আঘাত আগে কখনও দেখিনি। পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। আমাদের ঝুঁকি নিতে হবে। পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে। এক সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে যাই চলুন। সেই সঙ্গে গণ আন্দোলনও করা যেতে পারে। দিকে দিকে গাঁধীজির মূর্তি রয়েছে। তাঁকে অনুসরণ করে ধর্নায় বসতে পারি আমরা।’’

এ দিন মমতার দাবিকে সমর্থন করেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনও। তিনি বলেন, ‘‘পরীক্ষা অবশ্যই নেওয়া উচিত। কিন্তু আমার রাজ্যে হাতেগোনা কিছু পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এত সংখ্যক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে গেলে হোটেল খুলে দিতে হবে। চালু করতে হবে বাস। তাতে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেন্দ্রের উচিত আমাদের আরও সময় দেওয়া। নইলে পরিস্থিতির অবনতি হলে কেন্দ্র আমাদেরই দুষবে। একজোটে এ নিয়ে সরব হতে হবে আমাদের।’’ তবে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার আগে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী অথবা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে সমস্যাগুলি তুলে ধরা উচিত বলে মত তাঁর।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে এ দিনের বৈঠকে যোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে সকাল পর্যন্ত অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু শেষমেশ বৈঠকে যোগ দেন উদ্ধব। তিনি বলেন, ‘‘সরকারের ভয়ে সেঁধিয়ে থাকব নাকি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাব, আগে তা ঠিক করতে হবে আমাদের। কেন্দ্রে যাঁরা বিজেপিকে নির্বাচিত করেছেন, আমাদেরও তাঁরাই নির্বাচিত করেছেন। কিন্তু আমরা কিছু করলে সেটা পাপ, আর ওরা কিছু করলেই তা পুণ্য? এর বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে আমাদের।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘গালওয়ানের ঘটনা ইতিহাসের একটা মুহূর্ত মাত্র, সব মিটে যাবে’, আশাবাদী চিনা রাষ্ট্রদূত​

পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে পরীক্ষার আয়োজন করলে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেই পরিস্থিতির জন্য দায়ী থাকবে কেন্দ্র। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একজোটে লড়ব আমরা।’’ পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল এবং রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতও এ দিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরাও পরীক্ষা স্থগিত রাখার পক্ষে সওয়াল করেন।

নিট এবং জেইই ছাড়াও এ দিনের বৈঠকে জিএসটি বকেয়ার প্রসঙ্গ উঠে আসে। তা নিয়েও কেন্দ্রেক তীব্র আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘করের টাকা কেন্দ্রকে তুলে দিচ্ছি আমরা। অথচ কেন্দ্রের কাছ থেকে কিছুই পাইনি। মে-জুনে চার হাজার ১০০ কোটি টাকা পাওনা বাকি রয়েছে। এ ভাবে কী করে সরকার চালাব? কোভিড চিকিৎসার খরচ বিপুল। কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিতে অর্ধেক টাকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মানুষের হয়ে লড়তে গেলে আমাদের চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এমন অত্যাচার আগে কখনও দেখিনি। খোলাখুলি ভাবে কোনও মন্তব্য করার উপায় নেই। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কী বলা হবে, আর কী হবে না, তা ঠিক করে দিচ্ছে সরকার। আমাদের রুখতে টাকা ঢালা হচ্ছে। ভুয়ো খবর ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে চারিদিকে। এ সব বললে, আমাকে যদি গ্রেফতার করে, করুক। আমি ভয় পাই না।’’

সনিয়া গাঁধী বলেন, ‘‘জিএসটি বকেয়া নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে মোদি সরকার। গোটা প্রক্রিয়াটাই অগণতান্ত্রিক।’’ মহামারি পরিস্থিতিতে পরীক্ষার আয়োজন করে কেন্দ্র দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো আচরণ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনিও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement