ছবি: সংগৃহীত।
শ্রমিক ধর্মঘটে বাম ও কংগ্রেসের ‘গুন্ডামি’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, ১৩ তারিখ সিএএ নিয়ে বিরোধী-বৈঠকে তিনি যাবেন না। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিরূপ মন্তব্য না-করলেও সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এর ‘আসল কারণ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কংগ্রেস-সিপিএম, দু’দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই মনে করছেন, বন্ধের দিন তাঁদের রাজ্যের নেতারা ভুল করেননি। রাজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতেই পারে। কিন্তু তার ঊর্ধ্বে উঠে সব বিরোধী দলকে সিএএ-র বিরুদ্ধে জাতীয় স্তরে এককাট্টা হতে হবে। মমতা নিজেই এই প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন।
দিল্লিতে কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘আমরা এখনও আশাবাদী, মমতা এসে বিরোধীদের হাত আরও শক্ত করবেন। রাজ্য-রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে মমতাকে জাতীয় রাজনীতিতেও সদর্থক বার্তা দিতে হবে।’’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিরও যুক্তি, ‘‘কেরলে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু একসঙ্গে সিএএ-র বিরোধিতা করেছে। তিনি (মমতা) এক দিকে বলবেন, সকলকে একজোট হতে হবে। অথচ নিজেই অজুহাত খাড়া করবেন। আসল সত্য ধীরে প্রকাশ্যে আসবে।’’
জাতীয় রাজনীতিতে সনিয়া গাঁধী যখন মমতাকে পাশে চাইছেন, পশ্চিমবঙ্গে সোমেন মিত্রেরা কি মমতার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়ে ভুল করছেন? এআইসিসি-র এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতারা সম্প্রতি সনিয়া গাঁধীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, রাজ্যে মমতা-বিরোধী অবস্থান নিতে বাধা রয়েছে কি না। অতীতে রাহুল গাঁধীও রাজ্য-রাজনীতির স্বার্থে এমন অবস্থান নেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি করেননি। সনিয়াও বলেছেন, রাজ্য-রাজনীতির জন্য যে-কোনও অবস্থান তাঁরা নিতে পারেন। তবে জাতীয় স্তরে কংগ্রেস-তৃণমূল সম্পর্ক অন্য রকম হবে।’’
আরও পড়ুন: অর্থনীতির হাল নিয়ে নির্মলাকে ‘উদ্বেগ’ জানালেন কর্মীরা
ধর্মঘটে বাম-কংগ্রেসের ‘গুন্ডামি’ নিয়ে মমতার ক্ষোভ সম্পর্কে ইয়েচুরির প্রশ্ন, ‘‘ধর্মঘটের বিরোধিতার দরকার ছিল কি? তিনি অংশ না-ই বা নিলেন। যাঁরা ধর্মঘট করতে চান, তাঁদের কেন বাধা দিলেন? যেখানে তিনি নিজেই শ্রমিকদের দাবিকে সমর্থন করার কথা বলেছেন।’’ হিংসার অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য ‘‘হিংসা কে করিয়েছে? সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা ভিডিয়োয় তো মনে হচ্ছে, পুলিশ করিয়েছে। যোগী সরকারও এমন করছে।’’
সিপিএম-কংগ্রেসের রাজ্য নেতাদের মতে, নরেন্দ্র মোদীকে ‘সদর্থক বার্তা’ দিতেই সনিয়া গাঁধীর বৈঠকে আসছেন না মমতা। কিন্তু দিল্লিতে কংগ্রেসের নেতাদের বক্তব্য, রাজ্য নেতারা যে-অবস্থানই নিন, জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কে বেশি হেরফের ঘটবে না। সনিয়ার সঙ্গে মমতার সম্পর্ক মধুর। রাহুলও টুইটে মমতাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ফলে মমতাকেই স্থির করতে হবে, জাতীয় রাজনীতিতে মোদী-বিরোধী লড়াইয়ে শামিল হবেন, নাকি রাজ্য রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকবেন!