কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলার কৌশলই বজায় রাখছে সিপিএম। প্রতীকী ছবি।
আসন সমঝোতা করেও প্রত্যাশিত ফল হয়নি। কার ভোট কতটা একে অপরের দিকে গিয়েছে বা যায়নি, সেই প্রশ্নে দুই শিবিরের অন্দরে কিছু সংশয় এবং ক্ষোভও রয়েছে। তবে ত্রিপুরায় প্রথম পরীক্ষায় কাঙ্খিত ফল না পেলেও আপাতত কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলার কৌশলই বজায় রাখছে সিপিএম। তাতে আপত্তি নেই কংগ্রেসেরও।
বিরোধীরা তাদের কৌশল অপরিবর্তিত রাখতে চাইলেও শাসক বিজেপি শিবিরের সব ছবি অবশ্য এখনও পরিষ্কার নয়। দ্বিতীয় বার রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হতে চলেছে আগামী ৮ মার্চ আগরতলার বিবেকানন্দ ময়দানে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডার সে দিন উপস্থিত থাকার কথা। তবে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কে শপথ নেবেন, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা শনিবার আগরতলায় এসেছেন। কিন্তু বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে পরিষদীয় দলের বৈঠক কবে হবে, রাত পর্যন্ত তা-ও স্পষ্ট হয়নি।
ত্রিপুরায় এ বার ৪৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বামফ্রন্ট, কংগ্রেস লড়েছিল ১৩টিতে। একটি আসনে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করেছিল দু’পক্ষ। সিপিএম জিতেছে ১১টি আসন, কংগ্রেস জয় পেয়েছে তিনটিতে। অল্প ব্যবধানে সিপিএম যেমন কম-বেশি ১৫টা আসন হেরেছে, তেমনই কংগ্রেসের প্রার্থীরাও গোটাপাঁচেক আসনে সামান্য ভোটে পরাজিত হয়েছেন। বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে মসৃণ ভাবে ভোট আদান-প্রদান হয়েছে কি না, ফল বেরোনোর পরেই তা নিয়ে প্রাথমিক ভাবে প্রশ্ন উঠেছিল জোট শিবিরে। সূত্রের খবর, ফল ঘোষণার পরে এ দিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর প্রথম বৈঠকে এই কাটাছেঁড়াকে এখনই খুব গুরুত্ব না দেওয়ার কথা হয়েছে। বরং, ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ জানাতে রাজ্যপালের কাছে একসঙ্গে দেখা করতে চাইছেন দু’পক্ষের নেতৃত্ব।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একসঙ্গে নিয়ে লড়াই করার যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এই নির্বাচনেই তা শেষ হয়নি। গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াই একসঙ্গেই চলবে।’’ কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে একপ্রস্ত কথাও হয়েছে সিপিএমের। ত্রিপুরার ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক অজয় কুমারের মতে, ‘‘বাম এবং কংগ্রেস প্রার্থীরা প্রতিকূলতার মধ্যেও যথাসাধ্য লড়াই করেছেন। বিজেপি সামান্য ব্যবধানে অনেক আসন জিতেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠতাও সহজে পায়নি। আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল, সেগুলোর দিকে নজর দিতে হবে।’’ বাংলায় সাগরদিঘি উপনির্বাচনে সাফল্যের পরে ত্রিপুরায় সমঝোতা ভাঙতে চাইছেন না দু’দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও।
আনুষ্ঠানিক ভাবে ভোটের ফল পর্যালোচনার আগে সিপিএমের প্রাথমিক মত, বিরোধী ভোট বিভাজন এবং জনজাতি এলাকার বাইরেও তিপ্রা মথার উত্থান বিজেপির পক্ষে সহায়ক হয়েছে। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘মথা ভাল ভোট পাবে, বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু বেশির ভাগ জায়গায় তারা এতটা ভোট পেতে পারে, সেটা ধারণায় ছিল না!’’
সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এবং বিদায়ী বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারেরও মতে, তাঁদের কাছে এই ফল কিছুটা ‘অপ্রত্যাশিত’। তাঁর যুক্তি, বিজেপি শাসনে যে ভাবে গণতন্ত্র এবং সংবিধানকে ধ্বংস করা হয়েছে, বিরোধী-সহ নাগরিকদের উপরে আক্রমণ হয়েছে, তার পরেও এই ফলাফল প্রত্যাশিত ছিল না। বিরোধী ভোটের ভাগাভাগি এ ক্ষেত্রে অন্যতম বড় কারণ। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত অবশ্য আগরতলায় এসে কটাক্ষ করেছেন, ‘‘বাম ও কংগ্রেসের কোনও সম্ভাবনা ছিল না। তাদের নিয়ে বেশি প্রচার হয়েছিল, ভোট হতেই সেটা ফুটো হয়ে গিয়েছে!’’
খোয়াই ও সিপাহিজলা জেলায় হিংসার অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা ফের বলেছেন, অশান্তি যে দলের যারাই করুক, তাদের শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে বলা হচ্ছে পুলিশ-প্রশাসনকে। সঙ্গে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যও। তাঁর আবেদন, ‘‘আমাদের নেতা-কর্মীরা যেন সংযত থাকেন এবং কোনও প্ররোচনায় পা না দেন।’’