নীরব মোদী।
ভারতে ফিরবেন না, জানিয়েছেন আগেই। তখন বলেছিলেন ব্যস্ত। আর আজ না আসার নতুন কারণ সামনে রাখলেন নীরব মোদী। জানালেন, ভারত সরকার তাঁর পাসপোর্ট ‘সাসপেন্ড’ করার ফলেই গত কাল তিনি ইডি-র কাছে হাজির হতে পারেননি। এর পাশাপাশি নীরব জানিয়ে দিয়েছেন, টাকাও ফেরত দেবেন না। তাঁর ঋণের ব্যাপারে হইচই জুড়ে দেওয়ার পরে পিএনবি যেন টাকা ফেরত পাওয়ার আশা না করে। পিএনবি ইমেলে জানতে চেয়েছিল বিপুল ঋণ শোধের সুনির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা নীরবের আছে কি না। তারই এই জবাব দিয়েছেন তিনি। একই বক্তব্য মেহুল চোক্সীরও। এই পরিস্থিতিতে ইডি আজ ফের সমন জারি করেছে নীরব, তাঁর মার্কিন স্ত্রী অ্যামি ও মেহুল চোক্সীর বিরুদ্ধে। আগামী ২৬ তারিখ তাঁদের হাজির হতে বলা হয়েছে।
নীরব, তাঁর ভাই ও তাঁর মামা মেহুল বিদেশে গা ঢাকা দেওয়ার পরে ৩১ জানুয়ারি তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত ও তল্লাশি অভিযানে নেমেছে ইডি এবং সিবিআই। সেই অভিযানেই মহারাষ্ট্রের আলিবাগে তাঁর বিলাসবহুল বাংলো বাজেয়াপ্ত হয়েছে পরশু। কাল আটক করা হয় রোলস রয়েস গোস্ট, মার্সিডিজ বেঞ্জ, পোর্শে প্যানামেরার মতো ৯টি গাড়ি ও ৭.৮ কোটি টাকার মিউচুয়াল ফান্ড ও শেয়ার— টাকার অঙ্কে যার মোট মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এর পরে আজ আটক করা হয়েছে নীরব গোষ্ঠীর ৪৪ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ডিপোজিট ও শেয়ার। এ ছাড়াও, সপ্তাহভর তল্লাশিতে মিলেছে আমদানি করা ঘড়ির এক বিপুল খাজানা। ১৭৬টি আলমারি, ১৫৮টি বাক্স ও ৬০টি কন্টেনারে বোঝাই করা ছিল সেগুলি।
নীরবের কেলেঙ্কারির অঙ্ক মোট ১১ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। সরকারির সূত্রের খবর, তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি মিলেয়ে মোট ৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকার সম্পদ এ পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে। দেশে-বিদেশে নীরব-মেহুলদের ও তাদের ১১৪টি সংস্থার যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে কেন্দ্র আজ ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনাল (এনসিএলটি)-এর দ্বারস্থ হয়েছে। মোটা অঙ্কের নগদ দিয়ে যাঁরা তাঁদের কাছ থেকে হিরের গয়না কিনেছেন, ছাড় পাচ্ছেন না তাঁরাও। এমন ২৬ জনকে ইতিমধ্যেই নোটিস পাঠিয়েছে আয়কর দফতর। সিবিআই সূত্রের খবর, নীরবের সংস্থায় যোগ দেওয়ার পরে গত ৩-৪ বছরে ফুলে ফেঁপে উঠেছিলেন মুকেশ অম্বানীর খুড়তুতো ভাই বিপুল অম্বানী। তাঁর আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির জোরালো প্রমাণ পেয়েছে সিবিআই।
সুরাতের এসইজেড-এ নীরবের দু’টি সংস্থা রয়েছে। দু’টিতেই তালা ঝুলিয়ে মালিক পক্ষ কর্মীদের নতুন কাজ খুঁজে নিতে বলেছে। বকেয়া বেতন ও পাওনাগণ্ডা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন ৭০০ কর্মী ও তাঁদের পরিবার। গত কাল তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সুরাতে। বকেয়া বেতনের দাবিতে মেহুলের গীতাঞ্জলি জেমসের কর্মীরা আজ অন্ধেরীতে মহারাষ্ট্র শিল্পোন্নয়ন নিগমের সামনে বিক্ষোভ দেখান।