পাহাড়ি গ্রামে স্বনির্ভর হোক শিশু-পুষ্টি, চান শশাঙ্কা

আলা জেলার সব স্কুলের লাগোয়া জমিতেই ফল-আনাজ ফলাতে উদ্যোগী হলেন। ফলও মিলল হাতে হাতে। আমদানি আনাজের উপরে আর নির্ভর করে থাকছে না পাহাড়ি এই সব স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৯ ০২:০১
Share:

মিজোরামের গ্রামে পড়ুয়াদের পুষ্টি-বাগান। নিজস্ব চিত্র

সরকারি ‘পোষণ অভিযান’, শিশুদের পুষ্টি নেহাতই কথার কথা হয়ে থেকে যায় উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামে। সমতলের ফল-আনাজ পাহাড়ে পৌঁছনোর আগেই অর্ধেক নষ্ট হয়ে যায়। বাকি ফল-আনাজের দাম চলে যায় গরিবদের সাধ্যের বাইরে। ব্যতিক্রম ছিল না মিজোরামের লাওগৎলাই জেলাও। কিন্তু আরও বড় ব্যতিক্রম হয়ে দেখা দিলেন জেলাশাসক শশাঙ্কা আলা।

Advertisement

আলা জেলার সব স্কুলের লাগোয়া জমিতেই ফল-আনাজ ফলাতে উদ্যোগী হলেন। ফলও মিলল হাতে হাতে। আমদানি আনাজের উপরে আর নির্ভর করে থাকছে না পাহাড়ি এই সব স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। হাতে ফলানো ফসলেই মিটছে খিদে। বাড়ছে পুষ্টিও। পোষণ অভিযানের এমন অভিনব ও সফল রূপায়ণের জন্য উপ-রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নায়ডু শশাঙ্কাকে অভিনন্দন জানিয়ে গোটা দেশে এই ‘মডেল’ অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

রাজধানী আইজল থেকে লাওগৎলাইয়ের দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটার। আনাজপাতি, ফল আনতে হয় ১৮০ কিলোমিটার দূরের অসমের শিলচর থেকে। ট্রাক আসতে লেগে যায় কয়েক দিন। তত দিনে পচে যায় অর্ধেক। বর্ষাকালে ধসে, বৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় জেলা। চাকমা ও লাই জনজাতির অধ্যুষিত লাওগৎলাই জেলায় ৩৫ শতাংশ শিশুই চরম অপুষ্টির শিকার। জেলার শিশুদের অবস্থা ফেরাতে উদ্যোগী হন বছর দেড়েক আগে মা হওয়া শশাঙ্কাদেবী।

Advertisement

হাতে নেন নতুন প্রকল্প ‘কান সিকুল, কান হুয়ান’। অর্থাৎ ‘আমার স্কুল, আমার খেত’। টাকার বা সরবরাহের অভাব থাকলেও পাহাড়ি স্কুলগুলিতে লাগোয় জমির অভাব নেই। ঠিক হয় সেই জমি সাফ করে তৈরি হবে ‘পুষ্টি উদ্যান’। প্রধান শিক্ষকরা এমন ভাবে রুটিন তৈরি করেন, যাতে সব ছাত্রছাত্রী সপ্তাহে এক ঘণ্টা সেই উদ্যানে আনাজ বা ফল ফলাতে হাত লাগায়। কৃষি দফতরের পাশাপাশি গাঁওবুড়া এবং অভিভাবকরাও উৎসাহ নিয়ে ছেলেমেয়েদের সাহায্য ও পরামর্শ দিতে থাকেন। খরচ বলতে বীজ। প্রথম পর্যায়ে জেলার ২১৩টি স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এই কাজ শুরু হয়েছে।
পরে গবাদি পশু প্রতিপালন ও পোল্ট্রি ফার্ম খোলার কথাও ভাবা হচ্ছে। সব মিলিয়ে জেলার ৭৭৬টি স্কুলের ১৫ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রীকে নিজেদের পুষ্টি ও আহারের ক্ষেত্রে স্বনির্ভর করে তোলাই শশাঙ্কার লক্ষ্য।

মাটি কোপানো, গাছ লাগানো, তার যত্ন করা, ফসল ফলানো—এই পুরো প্রক্রিয়ায় একই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের কায়িক শ্রম হচ্ছে, কৃষি ও উদ্ভিদ বিদ্যার জ্ঞান হাতেকলমে পাচ্ছে, পাচ্ছে নিজে ফসল ফলানোর আনন্দ এবং অবশ্যই খেতে পাচ্ছে পুষ্টিকর, টাটকা ও জৈব শাকসব্জি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement