Pranab Mukherjee

অকপট প্রণব: নোটবন্দি ব্যর্থ, দিশাহীন কংগ্রেস

গত কাল প্রকাশিত হয়েছে প্রণবের বই— ‘দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ার্স: ২০১২-২০১৭’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৫৫
Share:

—ফাইল চিত্র

রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই দেখা করতে আসতেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সে সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় এই প্রতিবেদককে এক বার প্রণব জানিয়েছিলেন, মূলত বিদেশনীতি ও সংসদ বিষয়ক পরামর্শ নিতেই আসেন মোদী। জীবদ্দশায় কখনও মোদী সরকার সম্পর্কে কড়া সমালোচনা তাঁর মুখে শোনা যায়নি। শুধু দিনের ডায়েরি লেখা শেষ করে কখনও-সখনও বলতেন, বেশ কিছু বিতর্কিত কথা তিনি সেখানে লিখে রাখছেন। যা তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হবে। মঙ্গলবার বই হিসেবে প্রকাশিত সেই ডায়েরির পাতা একই সঙ্গে অস্বস্তিতে ফেলল বিজেপি ও কংগ্রেসকে।

Advertisement

গত কাল প্রকাশিত হয়েছে প্রণবের বই— ‘দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ার্স: ২০১২-২০১৭’। সেখানে মোদী সরকার সম্পর্কে প্রয়াত প্রেসিডেন্টের পর্যবেক্ষণ, নোটবন্দি ব্যর্থ। অযথা চমক আমদানির চেষ্টা বিদেশনীতিতে। প্রয়োজন ছিল না ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ ঘিরে প্রচারের ঢক্কা-নিনাদও। সব মিলিয়ে, মোদীকে অস্বস্তিতে ফেলার পর্যাপ্ত মশলা মজুত। তবে একই সঙ্গে রয়েছে নাম-না করেও সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর সমালোচনা। যোগ্য নেতৃত্বের অভাব আর মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতাই ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের অমন ভরাডুবির কারণ বলে লিখে গিয়েছেন তিনি।

২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে প্রণব লিখেছেন, তাঁকে এ বিষয়ে আগে জানানো হয়নি। আগাম পরামর্শ করেননি মোদী। গোপনীয়তা রক্ষার জন্য তাতে খুব অস্বাভাবিকতা নেই মেনেও তাঁর স্মৃতিচারণ, ‘প্রধানমন্ত্রী (নোটবন্দি ঘোষণার) বক্তৃতা দেওয়ার পরে রাষ্ট্রপতি ভবনে এসে আমার সঙ্গে দেখা করেন। ব্যাখ্যা করেন তাঁর যুক্তি। জানান, কালো টাকা উদ্ধার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং সন্ত্রাসবাদীদের হাতে টাকা সরবরাহ বন্ধ করতেই এই পদক্ষেপ। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী হিসেবে এতে আমার সমর্থন চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।’ কিন্তু প্রণববাবুর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘বিরোধিতা হবে এমন ভয় না-রেখেই একটা কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তা হল, নোটবন্দির নানা উদ্দেশ্য একেবারেই সিদ্ধ হয়নি৷’ সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়ে মোদীর ‘অযথা বুক চাপড়ানি’ যে তিনি পছন্দ করেননি, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির লেখনীতে স্পষ্ট। সেখানে রয়েছে, ‘ওই বহু চর্চিত আচমকা আক্রমণ পাকিস্তানের ধারাবাহিক হিংসার বিরুদ্ধে স্বাভাবিক সামরিক অভিযান। তা নিয়ে অতিরিক্ত প্রচারের প্রয়োজন ছিল না। এতে আমাদের লাভও হয়নি।’

Advertisement

মোদীর বিদেশনীতি প্রসঙ্গে প্রণববাবু লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বড় বেশি প্রচার করেন। যাকে সত্য হিসেবে ভেবে নেওয়া অবাস্তব।’ তাঁর বক্তব্য, ‘মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই ভারত-জাপান ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে, এই ধারণা সত্যি নয়। ২০১৪ সালের আগেও (জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী) শিনজো আবে ভারত সফর করেছেন।’ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে মোদী যে ভাবে হঠাৎ লাহৌরে পৌঁছে গিয়েছিলেন, আত্মজীবনীর এই খণ্ডে তারও কড়া সমালোচনা করেছেন প্রণববাবু। তাঁর মতে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রেক্ষিতে ওই সিদ্ধান্ত ‘অপ্রয়োজনীয় ও অবাঞ্ছিত’। মসৃণ এবং সুষ্ঠু ভাবে সংসদ চালানোর ক্ষেত্রে প্রথম দফার মোদী সরকারের ব্যর্থতার কথাও উল্লেখ করেছেন প্রণববাবু। সেখানে প্রশাসনকে ‘একনায়কতন্ত্রী’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

তবে সমালোচনার নিশানা থেকে বাদ যায়নি ‘তাঁর নিজের পুরনো দল’ কংগ্রেসও। প্রণবের আক্ষেপ, ‘কংগ্রেসের কয়েক জন শীর্ষ নেতার রাজনৈতিক অপরিপক্কতা ও অহংকার দলের ভবিষ্যৎকে আঘাত করেছে৷ আমার বিশ্বাস, সঙ্কটের সময়ে দলীয় নেতৃত্বকে অন্য পথ খুঁজে বার করতেই হবে।’ ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি প্রসঙ্গে নেতৃত্বের সমালোচনার পাশাপাশি প্রণব মনে করেন, ইউপিএ জোটে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধরে রাখতে না-পারা বড় ব্যর্থতা। লিখেছেন, ‘আমি দ্বিতীয় দফার ইউপিএ সরকারে অর্থমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালিয়ে গেলে, মমতাকে জোট সরকারে ধরে রাখতাম।’

বইয়ে প্রণবের স্মৃতিচারণা, প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর কাজের নিজস্ব ধরন রয়েছে। এক দলেরই দু’জন প্রধানমন্ত্রী দু’রকম হতে পারেন। যেমন, জওহরলাল নেহরু এবং লালবাহাদুর শাস্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘নেপালকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ ছিল নেহরুর। তিনি তা করেননি। ইন্দিরা গাঁধী সেই সুযোগ পেলে, (হয়তো) সিকিমের মতো নেপালকেও ভারতের রাজ্যে পরিণত করতেন।’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement