তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে লতা মঙ্গেশকর। ছবি: সংগৃহীত।
তাঁর সুরের ধারায় বারবার আবেগে স্নান করেছেন সঙ্গীতপ্রেমীরা। দুঃখে হোক বা বিরহে তাঁর গাওয়া গানের স্মরণ নেননি, এমন ভারতীয় খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সেই লতা মঙ্গেশকরের গান শুনে একবার ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুও কেঁদে ফেলেছিলেন।
১৯৬৩ সালের ২৭ জানুয়ারি, প্রজাতন্ত্র দিবসের ঠিক পরের দিন দিল্লির রামলীলা ময়দানে মঞ্চে বসে লতার গান শুনেছিলেন নেহরু। হাজার হাজার জনতার সামনে লতা গাইছিলেন ‘‘অ্যায় মেরে ওয়তন কে লোগো...’’ লতার গান শুনে মঞ্চে বসে সেদিন প্রকাশ্যেই হাপুস নয়নে কেঁদেছিলেন নেহরু।
রামলীলা ময়দানের অনুষ্ঠানে লতার পাশে গান শুনছেন নেহরু। ছবি: সংগৃহীত
তার মাস কয়েক আগেই ১৯৬২ সালের নভেম্বরে শেষ হয়েছে কাশ্মীরের সীমান্তে ভারত-চিনের যুদ্ধ। তখনও ভারতীয়দের মনে দগদগে যুদ্ধের স্মৃতি। একমাস ধরে চলা সেই যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে ভারত। আকসাই চিন কব্জা করেছে চিন। যুদ্ধক্ষেত্রে শহিদ হয়েছেন হাজার হাজার ভারতীয় সেনা। চিনের হাতে বন্দিও হয়েছেন প্রায় হাজার চারেক। জখম বহু। নেহরু ঘনিষ্ঠরা বলেছেন, সেই সময় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন নেহরু। তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল তাঁর শরীরেও। লতার গান শুনে সম্ভবত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি সেদিন।
যুদ্ধে শহিদ ভারতীয় সৈনিকদের নিয়ে ওই গান লিখেছিলেন প্রদীপ জি নামে এক কবি। গানের কথা ছিল— ‘পর মত ভুলো সীমা পর বীরো নে হ্যায় জান গবায়ে, কুছ ইয়াদ উনে ভি করলো যো লওটকে ঘর না আয়ে...’। জানা যায়, গানটি প্রথমে গাইতে রাজি হননি লতা। পরে কবির ব্যক্তিগত অনুরোধে গানটি গাইবেন বলে স্থির করেন। রামলীলা ময়দানে অনুষ্ঠানের একদিন আগে গানটি তোলেন লতা। তারপরেই ওই গান। যা শুনে নিজের চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি জওহরলাল।
পরে অনুষ্ঠান শেষ হলে লতাকে ডেকে তাঁর আবেগের কথা জানাতেও ভোলেননি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। শোনা যায়, লতাকে সেদিন নেহরু বলেছিলেন, ‘আপনি তো আমাকে কাঁদিয়ে দিলেন।’