কৃষক স্বার্থেই জমি বিল, পাল্টা প্রচার চান প্রধানমন্ত্রী

এককাট্টা বিরোধেও জমি ছাড়ছেন না মোদী

পিছু হটছেন না তিনি। বরং জমি অধিগ্রহণ বিল নিয়ে পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার পথই নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোকসভায় আজ পেশ হয়েছে জমি অধিগ্রহণ বিল। কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি আগে থেকেই এই বিলের বিরুদ্ধে এককাট্টা। রাজ্যসভায় সরকারের দুর্বলতাকে পুরোদস্তুর কাজে লাগাতে তারা মরিয়া। জমি-প্রশ্নে এখন আবার অণ্ণা হজারে ও অরবিন্দ কেজরীবালের পুরনো জুটিও ময়দানে! এই অবস্থায় সরকার যদি কৃষকদের স্বার্থে জমি বিলে কিছু পরিবর্তন করেও, তাতে কোনও মতেই বিরোধীদের তুষ্ট করা যাবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৪
Share:

জমি অধিগ্রহণ বিলের বিরোধিতায় ফের জুটি বাঁধলেন অণ্ণা হজারে ও অরবিন্দ কেজরীবাল। যন্তর-মন্তরে মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।

পিছু হটছেন না তিনি। বরং জমি অধিগ্রহণ বিল নিয়ে পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার পথই নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

লোকসভায় আজ পেশ হয়েছে জমি অধিগ্রহণ বিল। কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি আগে থেকেই এই বিলের বিরুদ্ধে এককাট্টা। রাজ্যসভায় সরকারের দুর্বলতাকে পুরোদস্তুর কাজে লাগাতে তারা মরিয়া। জমি-প্রশ্নে এখন আবার অণ্ণা হজারে ও অরবিন্দ কেজরীবালের পুরনো জুটিও ময়দানে! এই অবস্থায় সরকার যদি কৃষকদের স্বার্থে জমি বিলে কিছু পরিবর্তন করেও, তাতে কোনও মতেই বিরোধীদের তুষ্ট করা যাবে না। এবং এটা বুঝেই মোদী আজ নমনীয়তা দেখানোর বদলে বর্তমান বিলের সমর্থনেই পাল্টা রাজনৈতিক প্রচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন এনডিএ সাংসদদের। এর পরেও বিরোধীরা রাজনৈতিক প্রচারে ইতি টেনে আলোচনায় বসতে চাইলে সরকার খোলা মনে সদর্থক পরামর্শ নিতে প্রস্তুত, এই বার্তাও দিয়ে রাখা হচ্ছে।

সংসদ বিশেষ করে রাজ্যসভা অচল করে রেখে জমি-সহ ৮টি অধ্যাদেশ তথা অর্ডিন্যান্সের বিল আটকে দিতে চাইছে বিরোধীরা। সরকার তাতে প্যাঁচে পড়বে। এর পাশাপাশি জমি অধ্যাদেশকে হাতিয়ার করে বিরোধীরা রাজনৈতিক ভাবে এই বার্তাও দিতে চাইছে যে মোদী-সরকার গরিব-বিরোধী। মোদীকে এখন লড়তে হচ্ছে বিরোধীদের এই রাজনৈতিক প্রচারের সঙ্গে। সে জন্যই আজ সকালে দলের সব সাংসদকে ডেকে তিনি বলেন, “দীনদয়াল উপাধ্যায়ের দল কৃষক-বিরোধী হতে পারে না। এই বিলে কী করে কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষিত করা হয়েছে, ঢালাও প্রচার করতে হবে তার।” রাতে এনডিএ সাংসদদের বোঝানো হয়, এই বিলে কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার ধারাগুলিও বোঝানো হয়। কিন্তু খোদ এনডিএ শরিকদেরই সন্তুষ্ট করা যায়নি তাতে। সংসদে আজ কিছু শরিক দলের নেতা প্রকাশ্যেই বিলটি ‘কৃষক-বিরোধী’ আখ্যা দিয়েছেন। সন্ধেয় এনডিএ-র বৈঠক ছিল। শিবসেনা যায়নি।

Advertisement

মোদী মন্ত্রিসভার এক শীর্ষ সদস্য জানান, লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সব বিল পাশ করানো হবে। রাজ্যসভায় ভোটাভুটিতে খারিজ হলে যৌথ অধিবেশন ডেকে সেগুলি পাশ করানো যেতে পারে। বিরোধীরা সেটা জানে। তারা শুধু চাইছে মোদী সরকারকে বিপাকে ফেলতে। সরকার আলোচনায় রাজি। প্রস্তুত সর্বদল বৈঠক ডাকতেও। কিন্তু আলোচনার টেবিলে আসার বদলে বিরোধীরা শুধু রাজনৈতিক হল্লা করছে। ফলে বিজেপিকেও এখন পাল্টা প্রচার করতে হবে।

এরই পাশাপাশি কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যা বোঝা ও পরামর্শ নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। দলের সভাপতি অমিত শাহ ৮ সদস্যের একটি কমিটি গড়েছেন এ ব্যাপারে। এতেই স্পষ্ট, কৃষক-স্বার্থে বিলে ছোটখাটো বদল করতে সরকার রাজি। কিন্তু মোদীকে কৃষক-বিরোধী তকমা দেওয়াটাই এখন বিরোধীদের আক্রমণের মূল সুর। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা আজ বলেন, গুটিকয়েক শিল্পপতিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে সরকার কৃষক-স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে। কেন্দ্র জমি আইনে সংশোধন করে যে নিয়ম প্রণয়ন করতে চাইছে তার অর্থ হল, বেসরকারি শিল্প স্থাপনের জন্য সরকারই উদ্যোগী হয়ে জমি অধিগ্রহণ করে দেবে। সে ক্ষেত্রে কৃষক তথা জমির মালিকের মত নেওয়া হবে না। হবে না সামাজিক নিরীক্ষাও। অর্থাৎ জমি-মালিক ছাড়া জমির উপরে যাদের জীবিকা নির্ভরশীল সেই পরিবারগুলি কোনও ক্ষতিপূরণ পাবে না। কোনও ক্ষতিপূরণ পাবেন না প্রান্তিক চাষিরাও! মোদীর জমি নীতির বিরুদ্ধে কাল যন্তর-মন্তরে ধর্না দেবে কংগ্রেস।

আজ যন্তর-মন্তরে অণ্ণা হজারের মঞ্চ থেকেও এই একই সুরে আক্রমণ শানানো হয়েছে মোদীকে। দলের ৬৬ জন বিধায়ককে নিয়ে সেই মঞ্চে উপস্থিত হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল আজ বলেন, “মোদী সরকার শিল্পপতিদের হয়ে ‘প্রপার্টি ডিলার’-এর মতো কাজ করছে।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আজ বলেছেন, “জমি অধ্যাদেশ এখনই প্রত্যাহার করা উচিত। এটি একটি দানবীয় আইন। ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা বলছেন, অম্বানী-আদানিদের সঙ্গে মোদীর দহরম-মহরম দুনিয়া জানে। শিল্পমহলের ‘ডার্লিং’ তিনি। এই অবস্থায় জমি অধ্যাদেশকে অস্ত্র করে তাঁকে কৃষক-বিরোধী হিসেবে প্রতিপন্ন করা রাজনৈতিক ভাবে কঠিন কাজ নয়। প্রয়োজন শুধু গ্রামাঞ্চলে ধারাবাহিক প্রচার।

তবে জমি অধ্যাদেশ যে কৃষক বা গরিব বিরোধী নয় সে কথা তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি বলেন, “গ্রামীণ সড়ক, শিল্প করিডর গড়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া বা গরিবদের জন্য আবাসন নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ করাকেও যদি জন-বিরোধী বলে তকমা দেওয়া হয়, সেটা দুর্ভাগ্যজনক।” সরকারের আশঙ্কা, জমি আইনে ফের বদল ঘটালে যাবতীয় উন্নয়নের কাজ স্তব্ধ হয়ে যাবে। সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী যেমন জেটলিকে বলেছেন, “এই বিলে বদল করলে বাজেটে কোনও বরাদ্দ না দিলেও চলবে। কারণ, জমি না পেলে কোনও রাস্তাই বানানো যাবে না।”

জমি অধ্যাদেশের শর্ত কিছুটা লঘু করলে কি কংগ্রেস আলোচনায় বসতে রাজি হবে? এর জবাবে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, “সরকার সর্বদল বৈঠক ডাকলে কংগ্রেস অবশ্যই যাবে। কিন্তু কৃষকের স্বার্থ লঙ্ঘন হয় এমন কোনও প্রস্তাব মানবে না।

বিরোধীরা অবশ্য শুধু জমি প্রশ্নে নয়, সংসদে সব রকম ভাবেই সরকারকে চেপে ধরার কৌশল নিচ্ছেন। রাজ্যসভায় সরকার আজ বিমা-সহ তিনটি বিল প্রত্যাহার করতে চেয়েছিল। কিন্তু বিরোধীরা তা নিয়েও আলোচনা ও ভোটাভুটি চেয়ে বসায় সরকার বাধ্য হয়ে পিছিয়ে আসে।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় আজ কেন্দ্রের জমি বিলের প্রতিবাদে প্রস্তাব আনার দাবি তোলেন কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। জিরো আওয়ারে ওই দাবি তুলে মানসবাবু বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে গরিব মানুষ বিপন্ন হবেন। ওই জমি অর্ডিন্যান্স কৃষক স্বার্থ-বিরোধী। আমরা সবাই মিলে এর প্রতিবাদ করে এই সভার মনোভাব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারি।” শাসক শিবিরের বিধায়করাও তাঁকে টেবিল চাপড়ে সমর্থন জানান। শেষ পর্যন্ত এই নিয়ে কোনও প্রস্তাব সত্যিই এলে সেখানে বিজেপির একমাত্র বিধায়ক শুধু ভিন্নমত হবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement