নীতীশ কুমার ও রোহিণী আচার্য। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, বিহারের রাজনীতিতে তত প্রকট হয়ে উঠছে আরজেডি-জেডিইউ দ্বন্দ্ব। সেই দ্বন্দ্বে এ বার ঢুকে পড়ল বিজেপিও। বৃহস্পতিবার আরজেডি সুপ্রিমো লালু প্রসাদের কন্যা রোহিণী আচার্য এক্স হ্যান্ডেলে একাধিক পোস্ট করেন। সেখানে কারও নাম না করেই জনৈক রাজনীতিকের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছিলেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, পোস্টগুলিতে রোহিণীর ‘লক্ষ্য’ ছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার। পরে লালু-কন্যা পোস্টগুলি মুছে দিলেও এ বার মুখ্যমন্ত্রীকে অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে প্রকাশ্যে রোহিণীর ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলল বিজেপি।
বিহারের বিজেপি নেতা নিখিল আনন্দের অভিযোগ, লালু প্রসাদের সিঙ্গাপুর-নিবাসী কন্যা রোহিণী এক্স হ্যান্ডেলে নীতীশ কুমারকে লক্ষ্য করে এমন কিছু শব্দ প্রয়োগ করেছেন, যেগুলি অত্যন্ত অপমানজনক। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে ‘বদতমিজ’-এর মতো শব্দ ব্যবহার করেছেন রোহিণী। পরে অবশ্য তিনি পোস্টগুলি ডিলিট করে দেন। নিখিলের দাবি, রোহিণীর যদি সত্যিই অনুশোচনা হয়ে থাকে, তাহলে তাঁর উচিত জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়া। তাঁর কথায়, ‘‘এগুলো আসলে ধনুক থেকে তির বেরিয়ে যাওয়ার মতো।’’
বুধবার রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কর্পূরী ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেডিইউ-এর একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। সেখানেই তিনি পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। দলীয় সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি কর্পূরী ঠাকুরের দেখানো পথ অনুসরণ করে চলেছেন। সেই কারণেই বাড়ির কাউকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাননি।
উল্লেখ্য, বিহারের জোট সরকারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী এখন আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদের কনিষ্ঠ পুত্র তেজস্বী যাদব। জ্যেষ্ঠ পুত্র তেজ প্রতাপ যাদব রাজ্য মন্ত্রিসভার মন্ত্রী। লালু প্রসাদের জ্যেষ্ঠ কন্যা মিসা ভারতী রাজ্যসভার সদস্য। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, সে দিনের ভাষণে আদতে জোটসঙ্গী আরজেডি-র প্রতি কটাক্ষ ছুড়ে দেন নীতীশ।
যদিও লালুকে কটাক্ষ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেডিইউ নেতা কে সি ত্যাগী। তাঁর দাবি, নীতীশ কুমার যাঁর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন, সেই কর্পূরী ঠাকুর যে কোনও রকম পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতিকে ঘৃণা করতেন। তাঁর সেই চিন্তাধারাই তুলে ধরতে চেয়েছিলেন নীতীশ কুমার। ত্যাগীর কথায়, ‘‘নীতীশ কোনও আঞ্চলিক দল কিংবা নেতার উদ্দেশে এই মন্তব্য করেননি। যাঁরা মনে করেন, দেশ গঠনের জন্য পরিবারতন্ত্র অপরিহার্য, তাঁদের ইচ্ছে মতো উপসংহার টানার স্বাধীনতা আছে।’’
তবে জেডিইউ সে কথা বললেও এই বিতর্কে এখনই যে ইতি পড়ছে না, তা এক প্রকার নিশ্চিত। বরং লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, বিহারের জোট সরকারের দুই শরিকের মধ্যে ফাটল তত স্পষ্ট হয়ে উঠছে।